ঢাকা ০৬:৫৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা এখনো আক্রমণের মুখে: সম্পাদক পরিষদ হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ট্রাষ্টের মাসবপ্যাপী সেহরি বিতরণ চলমান তেলাপোকার উপদ্রব কমাতে যা করবেন এক ঘণ্টায় ৩০ বার বিমান হামলা গাজায় রিউমার স্ক্যানার ‘হাসিনা এখনো প্রধানমন্ত্রী’, এমন কথা বলেননি ট্রাম্প অতিরিক্ত আইজিপি হলেন এসএমপি কমিশনার সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে গণধর্ষণ মামলায় ২’জনের সাক্ষী অযত্নে ধুঁকছে পল্লী-কবি জসীমউদ্দীন জাদুঘর সিলেটে যেভাবে ইসলাম প্রচার করেছেন হজরত শাহজালাল ইয়েমেনী (রহ.) সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির মানববন্ধন সিলেটে থেকে প্রত্যাহার হলেন ২ থানার ওসি হবিগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে সেনা-পুলিশের টহলে পালিয়েছে দালাল চক্র

পুতিনের বিশ্বস্ত ‘বাবুর্চি’ থেকে বিশ্বাসঘাতক বিদ্রোহী

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৩:৪০:৪২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ অগাস্ট ২০২৩ ৯৬ বার পড়া হয়েছে

 ভিউ নিউজ ৭১ডেস্ক: অনলাইন সংস্করণ

রুশ সেনাদের সঙ্গে তালমিলিয়ে চলা ওয়াগনার গোষ্ঠী ছিল ইউক্রেনে হামলার বড় হাতিয়ার। পরম বন্ধু হয়ে ঘাড়ে ঝুলে থাকা সেই অস্ত্রেই এখন রক্ত ঝরছে পিঠে।বিশ্বাসঘাতক বন্ধুর মতো পেছন থেকে হামলা করেছে। তার পর থেকেই পুতিনের চরম শত্রু হয়ে ওঠেন। অথচ রাশিয়ার ভাড়াটে সেনা ওয়াগনার বাহিনীর প্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোজিনই (৬২) ছিলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিশ্বস্ত লেফটেন্যান্টদের একজন। যাকে পুতিনের বিশ্বস্ত বাবুর্চিও বলা হতো। কিন্তু হঠাৎ করেই ফাটল ধরল! 

গত ২৩ জুন গভীর রাতে বিদ্রোহের ঘোষণা দেন পুতিনের বিরুদ্ধে। পরের দিন ২৪ জুন ঘোষণা দেন, তার বাহিনী ইউক্রেন থেকে রাশিয়ার অভিমুখে যাত্রা শুরু করেছে। সীমান্ত পেরিয়ে রোস্তভ-অন-ডন শহরটির দখলও নিয়েছে।পরে অবশ্য দিনভর দীর্ঘ আলোচনা শেষে বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কোর মধ্যস্থতায় অস্ত্র সংবরণ করতে সম্মত হয় ওয়াগনার। সেদিনই পুতিন বলেছিলেন চরম পরিণতি ভোগ করবে প্রিগোজিন।  খবর বিবিসি, আলজাজিরা, নিউইয়র্ক টাইমসের।

মাস কয়েক আগেই রাশিয়ার স্বার্থে ইউক্রেনের বাখমুত শহর দখলে মরিয়া হয়ে ওঠে ওয়াগনার গোষ্ঠী। রুশ সেনাবাহিনীর সঙ্গে মন কষাকষির শুরুটাও সেখান থেকেই। যেখানে পর্যাপ্ত পরিমাণ অস্ত্র দরকার। কিন্তু মস্কো থেকে চাহিদার সিকি আনা গোলাবারুদও সরবরাহ করছে না বলে অভিযোগ করেন প্রিগোজিন। সেই থেকেই মূলত পুতিন-প্রিগোজিন গৃহদাহের শুরু।সাম্প্রতিক মাসগুলোতে প্রিগোজিনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত উগ্র-ডন ব্লগারদের ওপর কয়েকটি সন্ত্রাসী হামলা হয়। তার মালিকাধীন একটি ক্যাফেতেও হামলা হয়। রুশ সরকার ইউক্রেনকে দায়ী করলেও, প্রিগোজিন এটিকে আন্তঃরাশিয়ান যুদ্ধ বলে দাবি করেন। 

‘দ্য শ্যামড’ নামক একটি সম্প্রদায়ের সদস্য ছিলেন প্রিগোজিন। চুরি ও ডাকাতির দায়ে অনেকবার কারাভোগ করেন। মাত্র ১৮ বছর বয়সেই (১৯৭৯) প্রথমবারের মতো আড়াই বছরের কারাদণ্ড ভোগ করেন। সর্বশেষ ১৯৮১ সালে ডাকাতির অভিযোগে ১২ বছরের সাজায় ৯ বছর জেল খাটেন।কারাভোগ শেষে ১৯৯০ সালে শুরু করেন হটডগের ব্যবসা। সেন্ট পিটার্সবার্গে হটডগ বেচতে দোকান খুলে ফেলেন। পরে কৌশলে একটি বিলাসবহুল রেস্তোরাঁ খুলে ফেলেন। ইউক্রেনীয় তথ্যনীতির সাবেক উপমন্ত্রী দিমিত্র জোলোতুখিন জানান, রেস্তোরাঁগুলোতে মাফিয়া বৈঠকের আয়োজন হতো। 

পুতিন বন্ধুমহল নিয়ে প্রায়ই আসতেন প্রিগোজিনের রেস্তোরাঁয়। যা তার ক্যাটারিং ব্যবসাকে আরও প্রসারিত করে তোলে।এরপর আর পিছে ফিরে তাকাতে হয়নি প্রিগোজিনকে। পুতিনের সঙ্গে মাখামাখির সূত্র ধরে রুশ সামরিক বাহিনীতে খাদ্য সরবরাহ চুক্তিও দেওয়া হয় তাকে। মস্কোর স্কুলগুলোতে খাবার সরবরাহের চুক্তিও পান তিনি। তবে খাবারে স্বাস্থ্যমান বজায় না রাখার অভিযোগও আছে তার ওপর। একটি ভাসমান রেস্তোরাঁরও মালিক প্রিগোজিন। যেখানে পুতিনসহ ফ্রান্সের সাবেক রাষ্ট্রপতি জ্যাক শিরাক ও রাষ্ট্রপ্রধানদের আসা যাওয়া ছিল। ২০০২ সালে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশকেও আপ্যায়ন করা হয় এখানে। 

দিন দিন প্রভাবশালীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকে তার। প্রিগোজিন জীবনে আরও একধাপ এগিয়ে যান যখন পুতিন তাকে ক্রেমলিনের শেফ হতে বলেন। ২০১৪ সালে ইউক্রেনে রুশদের আগ্রাসন শুরু হয়। ইউক্রেনে রুশদের সর্বাত্মক আগ্রাসন ঘটে ২৪ ফেব্রুয়ারি। যা প্রিগোজিনের জীবনে বৈচিত্র্য নিয়ে আসে। যুদ্ধ যত খারাপের দিকে গেছে প্রিগোজিনের ভবিষ্যৎ ততই সামনে এগিয়েছে। ভাড়াটে ব্যবসায় নাম ওঠে তার। হয়ে ওঠেন রুশদের পররাষ্ট্রনীতির কেন্দ্রের একটি গ্রুপের নেতা। ইউক্রেনীয়রা যত বেশি রুশ সেনাদের হত্যা করেছিল, মস্কোর তত বেশি ওয়াগনারের ভাড়াটেদের প্রয়োজন ছিল। 

সম্পদ ও চাকচিক্যের স্বাদ পেয়ে ক্ষমতার করিডোরে নিজের স্থান তৈরি করে ফেলেন প্রিগোজিন। বর্তমানে তার সম্পদ এক বিলিয়ন ডলারেরও বেশি বলে ধারণা করা হয়। তার স্ত্রী ল্যুবভ প্রিগোজিনা একজন ফার্মাসিস্ট। ১০৫ মিলিয়ন ডলারের সেন্ট পিটার্সবার্গ এস্টেটে বাস করেন।অনেক হোটেলের মালিক ছিলেন যেগুলো এখন একটি বুটিক হোটেলে বিস্তৃত হয়েছে। তার মেয়ে পলিনার জন্যও একটি বিলাসবহুল বাড়ি অন্তর্ভুক্ত ছিল। হটডগ বিক্রি করা প্রিগোজিনের জীবন ছিল অগাধ সম্পদে ভরপুর।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

পুতিনের বিশ্বস্ত ‘বাবুর্চি’ থেকে বিশ্বাসঘাতক বিদ্রোহী

আপডেট সময় : ০৩:৪০:৪২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ অগাস্ট ২০২৩

 ভিউ নিউজ ৭১ডেস্ক: অনলাইন সংস্করণ

রুশ সেনাদের সঙ্গে তালমিলিয়ে চলা ওয়াগনার গোষ্ঠী ছিল ইউক্রেনে হামলার বড় হাতিয়ার। পরম বন্ধু হয়ে ঘাড়ে ঝুলে থাকা সেই অস্ত্রেই এখন রক্ত ঝরছে পিঠে।বিশ্বাসঘাতক বন্ধুর মতো পেছন থেকে হামলা করেছে। তার পর থেকেই পুতিনের চরম শত্রু হয়ে ওঠেন। অথচ রাশিয়ার ভাড়াটে সেনা ওয়াগনার বাহিনীর প্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোজিনই (৬২) ছিলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিশ্বস্ত লেফটেন্যান্টদের একজন। যাকে পুতিনের বিশ্বস্ত বাবুর্চিও বলা হতো। কিন্তু হঠাৎ করেই ফাটল ধরল! 

গত ২৩ জুন গভীর রাতে বিদ্রোহের ঘোষণা দেন পুতিনের বিরুদ্ধে। পরের দিন ২৪ জুন ঘোষণা দেন, তার বাহিনী ইউক্রেন থেকে রাশিয়ার অভিমুখে যাত্রা শুরু করেছে। সীমান্ত পেরিয়ে রোস্তভ-অন-ডন শহরটির দখলও নিয়েছে।পরে অবশ্য দিনভর দীর্ঘ আলোচনা শেষে বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কোর মধ্যস্থতায় অস্ত্র সংবরণ করতে সম্মত হয় ওয়াগনার। সেদিনই পুতিন বলেছিলেন চরম পরিণতি ভোগ করবে প্রিগোজিন।  খবর বিবিসি, আলজাজিরা, নিউইয়র্ক টাইমসের।

মাস কয়েক আগেই রাশিয়ার স্বার্থে ইউক্রেনের বাখমুত শহর দখলে মরিয়া হয়ে ওঠে ওয়াগনার গোষ্ঠী। রুশ সেনাবাহিনীর সঙ্গে মন কষাকষির শুরুটাও সেখান থেকেই। যেখানে পর্যাপ্ত পরিমাণ অস্ত্র দরকার। কিন্তু মস্কো থেকে চাহিদার সিকি আনা গোলাবারুদও সরবরাহ করছে না বলে অভিযোগ করেন প্রিগোজিন। সেই থেকেই মূলত পুতিন-প্রিগোজিন গৃহদাহের শুরু।সাম্প্রতিক মাসগুলোতে প্রিগোজিনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত উগ্র-ডন ব্লগারদের ওপর কয়েকটি সন্ত্রাসী হামলা হয়। তার মালিকাধীন একটি ক্যাফেতেও হামলা হয়। রুশ সরকার ইউক্রেনকে দায়ী করলেও, প্রিগোজিন এটিকে আন্তঃরাশিয়ান যুদ্ধ বলে দাবি করেন। 

‘দ্য শ্যামড’ নামক একটি সম্প্রদায়ের সদস্য ছিলেন প্রিগোজিন। চুরি ও ডাকাতির দায়ে অনেকবার কারাভোগ করেন। মাত্র ১৮ বছর বয়সেই (১৯৭৯) প্রথমবারের মতো আড়াই বছরের কারাদণ্ড ভোগ করেন। সর্বশেষ ১৯৮১ সালে ডাকাতির অভিযোগে ১২ বছরের সাজায় ৯ বছর জেল খাটেন।কারাভোগ শেষে ১৯৯০ সালে শুরু করেন হটডগের ব্যবসা। সেন্ট পিটার্সবার্গে হটডগ বেচতে দোকান খুলে ফেলেন। পরে কৌশলে একটি বিলাসবহুল রেস্তোরাঁ খুলে ফেলেন। ইউক্রেনীয় তথ্যনীতির সাবেক উপমন্ত্রী দিমিত্র জোলোতুখিন জানান, রেস্তোরাঁগুলোতে মাফিয়া বৈঠকের আয়োজন হতো। 

পুতিন বন্ধুমহল নিয়ে প্রায়ই আসতেন প্রিগোজিনের রেস্তোরাঁয়। যা তার ক্যাটারিং ব্যবসাকে আরও প্রসারিত করে তোলে।এরপর আর পিছে ফিরে তাকাতে হয়নি প্রিগোজিনকে। পুতিনের সঙ্গে মাখামাখির সূত্র ধরে রুশ সামরিক বাহিনীতে খাদ্য সরবরাহ চুক্তিও দেওয়া হয় তাকে। মস্কোর স্কুলগুলোতে খাবার সরবরাহের চুক্তিও পান তিনি। তবে খাবারে স্বাস্থ্যমান বজায় না রাখার অভিযোগও আছে তার ওপর। একটি ভাসমান রেস্তোরাঁরও মালিক প্রিগোজিন। যেখানে পুতিনসহ ফ্রান্সের সাবেক রাষ্ট্রপতি জ্যাক শিরাক ও রাষ্ট্রপ্রধানদের আসা যাওয়া ছিল। ২০০২ সালে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশকেও আপ্যায়ন করা হয় এখানে। 

দিন দিন প্রভাবশালীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকে তার। প্রিগোজিন জীবনে আরও একধাপ এগিয়ে যান যখন পুতিন তাকে ক্রেমলিনের শেফ হতে বলেন। ২০১৪ সালে ইউক্রেনে রুশদের আগ্রাসন শুরু হয়। ইউক্রেনে রুশদের সর্বাত্মক আগ্রাসন ঘটে ২৪ ফেব্রুয়ারি। যা প্রিগোজিনের জীবনে বৈচিত্র্য নিয়ে আসে। যুদ্ধ যত খারাপের দিকে গেছে প্রিগোজিনের ভবিষ্যৎ ততই সামনে এগিয়েছে। ভাড়াটে ব্যবসায় নাম ওঠে তার। হয়ে ওঠেন রুশদের পররাষ্ট্রনীতির কেন্দ্রের একটি গ্রুপের নেতা। ইউক্রেনীয়রা যত বেশি রুশ সেনাদের হত্যা করেছিল, মস্কোর তত বেশি ওয়াগনারের ভাড়াটেদের প্রয়োজন ছিল। 

সম্পদ ও চাকচিক্যের স্বাদ পেয়ে ক্ষমতার করিডোরে নিজের স্থান তৈরি করে ফেলেন প্রিগোজিন। বর্তমানে তার সম্পদ এক বিলিয়ন ডলারেরও বেশি বলে ধারণা করা হয়। তার স্ত্রী ল্যুবভ প্রিগোজিনা একজন ফার্মাসিস্ট। ১০৫ মিলিয়ন ডলারের সেন্ট পিটার্সবার্গ এস্টেটে বাস করেন।অনেক হোটেলের মালিক ছিলেন যেগুলো এখন একটি বুটিক হোটেলে বিস্তৃত হয়েছে। তার মেয়ে পলিনার জন্যও একটি বিলাসবহুল বাড়ি অন্তর্ভুক্ত ছিল। হটডগ বিক্রি করা প্রিগোজিনের জীবন ছিল অগাধ সম্পদে ভরপুর।