ঢাকা ০২:০৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫, ৫ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা এখনো আক্রমণের মুখে: সম্পাদক পরিষদ হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ট্রাষ্টের মাসবপ্যাপী সেহরি বিতরণ চলমান নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধন হচ্ছে- অস্ত্রসহ আটক বিএনপি নেতার ছেলে এডভোকেট গাফফার ও বাবলুর সুস্থতা কামনায় সিলেট জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের দোয়া ভোর রাতে সিলেটে গোয়াইনঘাটে যুবক খু ন বিশ্বনাথে শিশু নির্যাতন, ইউপি চেয়ারম্যান’সহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মা ম লা ৫০কোটি টাকার ভারতীয় চিনির চালান আটক বিশ্বনাথে ঘুষ নেওয়ার অভিযােগে এস আই আলীম উদ্দিন ক্লো জ নারকেল তেলের সঙ্গে যা মেশালে কমবে চু ল পড়া প্রখ্যাত ফিলিস্তিনি সাংবাদিক লতিফেহকে গ্রেফতার করল ইসরাইল অনলাইন এডিটরস অ্যালায়েন্স ও জেসিআই ঢাকা ইউনাইটেডের সমঝোতা চুক্তি

ইসরায়েলের হামলায় গাজার অন্তত ২০ পরিবারের সবাই নিহত, নিশ্চিহ্ন অনেক এলাকা

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০১:২১:৪৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৩ ৯৮ বার পড়া হয়েছে

আল জাজিরা

ইসরায়েলের লাগাতার বিমান হামলায় ফিলিস্তিনিদের ক্রমবর্ধমান হতাহতের সংখ্যার মধ্যে ২০ খুবই ছোট।গাজার ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবন্ধ সমাজ থেকে ২০টি পরিবারকে মুছে ফেলা হয়েছে,যেখানে সবাই সবাইকে চিনতেন প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে।ফিলিস্তিন বলছে,২০টি পরিবারের সব জীবিত সদস্যের নাম সরকারি নিবন্ধন খাতা থেকে কেটে ফেলা হয়েছে। ইসরায়েলের হামলায় তাঁদের প্রাণ গেছে।

সাত দিন ধরে ইসরায়েলের লাগাতার বিমান হামলায় কেঁপে উঠছে গাজা উপত্যকা।গত বৃহস্পতিবার ইসরায়েল বলেছে,তারা গাজায় ছয় হাজার বোমা ফেলেছে।অর্থাৎ,প্রতিদিন এক হাজার বোমা ফেলা হয়েছে।ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, ইসরায়েলি হামলায় গাজার অন্তত ১ হাজার ৭৯৯ জনের প্রাণ গেছে, যাঁদের মধ্যে ৬০ শতাংশই নারী ও শিশু। আহত হয়েছেন ৬ হাজার ৩৮৮ জন।গাজার কিছু পাড়া–মহল্লার পুরোটাই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলেছে, ৭ অক্টোবর হামাসের সশস্ত্র শাখা ইসরায়েলে যে নজিরবিহীন হামলা হামলা চালিয়েছে, তার জবাবে তারা বোমা হামলা করছে।

হামাসের হামলায় ইসরায়েলের মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩০০–তে, আহত হয়েছেন ৩ হাজারের বেশি মানুষ।ইসরায়েলের ঘোষিত লক্ষ্য হামাসকে নির্মূল করা এবং এর অবকাঠামো গুঁড়িয়ে দেওয়া।কিন্তু ঘনবসতিপূর্ণ গাজা উপত্যকায় আটকে থাকা বেসামরিক নাগরিকেরাই মূলত ইসরায়েলের বোমা হামলার শিকার হচ্ছেন।

জাবালিয়া আশ্রয়শিবিরে চালানো হামলায় শিহাব পরিবারের ৩১ সদস্যের সবাই নিহত হয়েছেন।এই পরিবার যে বাসভবনে ছিল, সেখানে লুকিয়েছিলেন অন্য পরিবারের সদস্যরাও। তাঁরা ভেবেছিলেন,এটি নিরাপদ জায়গা জাবালিয়ায় ইসরায়েলের হামলায় মোট ৪৫ জন নিহত হয়েছেন। এই ব্যক্তিদের মধ্যে সবচেয়ে ছোটটির বয়স দুই মাস, একটি দুধের শিশু।দেইর আল-বালাহতে আজাইজ পরিবারের অন্তত ১৫ সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে কয়েকজনের মরদেহ পাওয়া গেছে একাধিক খণ্ডে।

গাজা শহরের হাসান আল-বাতনিজি তাঁর পুরো পরিবারকে হারিয়েছেন। এক হামলায় সবার প্রাণ গেছে।আসমাহান আল-বারবারি নিরাপদ ভেবে তাঁর গাজা শহরের বাড়িতে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ফিরে এসেছিলেন।পরে সেখানে বোমা হামলা চালানো হয়।বাড়িতে বোমাবর্ষণ করা হবে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর কাছ থেকে এমন খুদে বার্তা পাওয়ার পর তাঁরা সবাই বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েন বলে জানান আসমাহান আল-বারবারি।তিনি বলেন, ‘জরুরিভাবে ঘর ছাড়ার জন্য আমাদের সবার ব্যাগ সব সময় দরজার কাছেই থাকে, সেগুলো হাতে নিলাম এবং দৌড় দিলাম।

আসমাহান আল–বারবারি বলেন,(সতর্কবার্তা পাওয়ার পর) বাড়ি ছেড়ে সাধারণত যত সময় দূরে থাকার কথা, সেই সময় দূরে ছিলাম। পরে বিপদ শেষ হয়ে গেছে ভেবে আমরা বাড়িতে ফিরে যাই।গভীর রাতে যখন পরিবারের সবাই ঘুমিয়ে ছিলেন,তখন আসমাহান আল-বারবারির বাড়িতে বোমা হামলা হয়। তিনি বলেন, ‘আমরা অন্ধকারে ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েছিলাম। পরিবারের অন্য সদস্যরা বেঁচে আছে কি না, তা জানতে আমি তাদের নাম ধরে চিৎকার করছিলাম।

আসমাহান আল-বারবারি বলেন,আজ আমি মৃত্যু দেখলাম। এটা আমার জীবন নেয়নি,নিয়েছে আমার পরিবারের সদস্যদের। যদি আমিও মারা যেতাম…বাকি জীবন আমি তাদের জন্য শোক করে যাব।আসমাহান আল-বারবারির প্রতিবেশী মাহমুদ আল-শান্তি আল–জাজিরাকে বলেন,বয়স্ক নারী, শিশুসহ আমাদের বাড়িতে প্রায় ৩০ জন ছিলাম। অনেক পরিবারই ভয়াবহ হামলা থেকে বাঁচতে তাদের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা থেকে পালিয়ে গিয়েছিল।

মাহমুদ আল-শান্তি, হাসান আল-বাতনাজি ও আসমাহান আল-বারবারি সবাই আল-শিফা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁরা আশা করছেন,তাঁরা নিরাপদ জায়গা খুঁজে পাবেন।আল-শিফা গাজা শহরের অনেক বাসিন্দার জন্য স্বস্তিদায়ক জায়গা হয়ে উঠেছে। কেননা সেখানে কিছু না কিছু খবরাখবর পাওয়া যাচ্ছে, ইন্টারনেট সংযোগ আছে, বিদ্যুৎও আছে।তবে চিকিত্সার জন্য প্রত্যেককেই সংগ্রাম করতে হচ্ছে। গাজার ওপর ১৬ বছর ধরে চলা অবরোধের মাত্রা আরও বাড়িয়েছে ইসরায়েল। খাদ্য, পানীয় জল,বিদ্যুৎ,ওষুধসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গাজায় ঢুকতে দিচ্ছে না।সম্পূর্ণ অবরোধ’ মানে সবচেয়ে মৌলিক ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহের তীব্র সংকট।

পদ্ধতিগতভাবে আবাসিক এলাকাকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে

গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজার ওপর লিফলেট ফেলেছে। তাতে ছিল উত্তর গাজা ও গাজা শহর ছাড়ার নির্দেশ।লিফলেটে গাজাবাসীকে দক্ষিণের দিকে সরে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে।ইসরায়েল যে অঞ্চলটিকে ফাঁকা করতে বলেছে, সেখানে ১০ লাখের বেশি মানুষের বসবাস। ইসরায়েলের লিফলেট ফেলার পর হাজার হাজার মানুষ দক্ষিণের দিকে ছোটেন, তবে অন্য অনেকেই তাঁদের বাড়িঘর ছাড়তে পারেননি,কেননা তাঁদের অনেকেই পরিবহনের ব্যবস্থা করতে পারেননি। অনেকেই বাড়িতে থাকাই বেছে নিয়েছেন অথবা অনেকেই ইসরায়েলের দাবি উপেক্ষা করার জন্য হামাসের আহ্বানে সাড়া দিয়ে এলাকা ছাড়েননি।

আবাসিক এলাকায় ইসরায়েলের হামলার জেরে হাসপাতালের করিডরগুলো ভরে গেছে। আহত ব্যক্তিদের অনেকে শয্যা না পেয়ে মেঝেতে পড়ে আছেন। অস্ত্রোপচারকক্ষ ও নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) সংকট প্রবল।উদ্ভূত পরিস্থিতি সমাধানের জন্য যে আলোচনা হচ্ছে, তার বেশির ভাগটাই জুড়ে রয়েছে ফিলিস্তিনিদের গাজা ছেড়ে যাওয়ার জন্য মানবিক করিডরের ধারণাকে ঘিরে। তবে মিসরের সঙ্গে স্থলপথে সীমান্ত ক্রসিং খোলার পরামর্শ কায়রো প্রত্যাখ্যান করেছে। যদিও সেটি মানবিক সহায়তার জন্য খুলতে সম্মত হয়েছে দেশটি।

তবে গাজার ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা বলছেন,এখন সবচেয়ে জরুরি হলো বোমাবর্ষণ বন্ধ করা এবং আরও মৃত্যু ও মানুষের দুর্ভোগ ঠেকাতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া।স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিচালক মুনির আল-বারশ বলেন, ইসরায়েলি বিমান হামলায় ‘পদ্ধতিগতভাবে আবাসিক এলাকাগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে, যা অপরাধ’। এসব হামলায় হতাহত ব্যক্তিদের বেশির ভাগই বেসামরিক নাগরিক।

বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে আল–বারশ বলেন, বাসাবাড়ি, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, অ্যাম্বুলেন্সসহ সবকিছু লক্ষ্য করে বোমা হামলা চালানো হচ্ছে।ইসরায়েল বলছে, তারা গাজায় হামাস ও অন্য প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করে হামলা অব্যাহত রাখবে।গাজার ফিলিস্তিনিদের বোমার নিচে, ধ্বংসের মধ্যে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।খাবারের টান পড়েছে, বিশুদ্ধ পানীয় জলের অভাব প্রকট হচ্ছে। সংক্রামক রোগ বিস্তারের আশঙ্কাও রয়েছে।ইসরায়েলের হামলায় এভাবে মৃতের সংখ্যা যত বাড়বে, ততই গাজার সমৃদ্ধ ইতিহাস ও সংস্কৃতির ধারক পরিবারগুলোর হারিয়ে যাওয়ার সংখ্যাও বাড়বে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

ইসরায়েলের হামলায় গাজার অন্তত ২০ পরিবারের সবাই নিহত, নিশ্চিহ্ন অনেক এলাকা

আপডেট সময় : ০১:২১:৪৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৩

আল জাজিরা

ইসরায়েলের লাগাতার বিমান হামলায় ফিলিস্তিনিদের ক্রমবর্ধমান হতাহতের সংখ্যার মধ্যে ২০ খুবই ছোট।গাজার ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবন্ধ সমাজ থেকে ২০টি পরিবারকে মুছে ফেলা হয়েছে,যেখানে সবাই সবাইকে চিনতেন প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে।ফিলিস্তিন বলছে,২০টি পরিবারের সব জীবিত সদস্যের নাম সরকারি নিবন্ধন খাতা থেকে কেটে ফেলা হয়েছে। ইসরায়েলের হামলায় তাঁদের প্রাণ গেছে।

সাত দিন ধরে ইসরায়েলের লাগাতার বিমান হামলায় কেঁপে উঠছে গাজা উপত্যকা।গত বৃহস্পতিবার ইসরায়েল বলেছে,তারা গাজায় ছয় হাজার বোমা ফেলেছে।অর্থাৎ,প্রতিদিন এক হাজার বোমা ফেলা হয়েছে।ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, ইসরায়েলি হামলায় গাজার অন্তত ১ হাজার ৭৯৯ জনের প্রাণ গেছে, যাঁদের মধ্যে ৬০ শতাংশই নারী ও শিশু। আহত হয়েছেন ৬ হাজার ৩৮৮ জন।গাজার কিছু পাড়া–মহল্লার পুরোটাই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলেছে, ৭ অক্টোবর হামাসের সশস্ত্র শাখা ইসরায়েলে যে নজিরবিহীন হামলা হামলা চালিয়েছে, তার জবাবে তারা বোমা হামলা করছে।

হামাসের হামলায় ইসরায়েলের মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩০০–তে, আহত হয়েছেন ৩ হাজারের বেশি মানুষ।ইসরায়েলের ঘোষিত লক্ষ্য হামাসকে নির্মূল করা এবং এর অবকাঠামো গুঁড়িয়ে দেওয়া।কিন্তু ঘনবসতিপূর্ণ গাজা উপত্যকায় আটকে থাকা বেসামরিক নাগরিকেরাই মূলত ইসরায়েলের বোমা হামলার শিকার হচ্ছেন।

জাবালিয়া আশ্রয়শিবিরে চালানো হামলায় শিহাব পরিবারের ৩১ সদস্যের সবাই নিহত হয়েছেন।এই পরিবার যে বাসভবনে ছিল, সেখানে লুকিয়েছিলেন অন্য পরিবারের সদস্যরাও। তাঁরা ভেবেছিলেন,এটি নিরাপদ জায়গা জাবালিয়ায় ইসরায়েলের হামলায় মোট ৪৫ জন নিহত হয়েছেন। এই ব্যক্তিদের মধ্যে সবচেয়ে ছোটটির বয়স দুই মাস, একটি দুধের শিশু।দেইর আল-বালাহতে আজাইজ পরিবারের অন্তত ১৫ সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে কয়েকজনের মরদেহ পাওয়া গেছে একাধিক খণ্ডে।

গাজা শহরের হাসান আল-বাতনিজি তাঁর পুরো পরিবারকে হারিয়েছেন। এক হামলায় সবার প্রাণ গেছে।আসমাহান আল-বারবারি নিরাপদ ভেবে তাঁর গাজা শহরের বাড়িতে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ফিরে এসেছিলেন।পরে সেখানে বোমা হামলা চালানো হয়।বাড়িতে বোমাবর্ষণ করা হবে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর কাছ থেকে এমন খুদে বার্তা পাওয়ার পর তাঁরা সবাই বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েন বলে জানান আসমাহান আল-বারবারি।তিনি বলেন, ‘জরুরিভাবে ঘর ছাড়ার জন্য আমাদের সবার ব্যাগ সব সময় দরজার কাছেই থাকে, সেগুলো হাতে নিলাম এবং দৌড় দিলাম।

আসমাহান আল–বারবারি বলেন,(সতর্কবার্তা পাওয়ার পর) বাড়ি ছেড়ে সাধারণত যত সময় দূরে থাকার কথা, সেই সময় দূরে ছিলাম। পরে বিপদ শেষ হয়ে গেছে ভেবে আমরা বাড়িতে ফিরে যাই।গভীর রাতে যখন পরিবারের সবাই ঘুমিয়ে ছিলেন,তখন আসমাহান আল-বারবারির বাড়িতে বোমা হামলা হয়। তিনি বলেন, ‘আমরা অন্ধকারে ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েছিলাম। পরিবারের অন্য সদস্যরা বেঁচে আছে কি না, তা জানতে আমি তাদের নাম ধরে চিৎকার করছিলাম।

আসমাহান আল-বারবারি বলেন,আজ আমি মৃত্যু দেখলাম। এটা আমার জীবন নেয়নি,নিয়েছে আমার পরিবারের সদস্যদের। যদি আমিও মারা যেতাম…বাকি জীবন আমি তাদের জন্য শোক করে যাব।আসমাহান আল-বারবারির প্রতিবেশী মাহমুদ আল-শান্তি আল–জাজিরাকে বলেন,বয়স্ক নারী, শিশুসহ আমাদের বাড়িতে প্রায় ৩০ জন ছিলাম। অনেক পরিবারই ভয়াবহ হামলা থেকে বাঁচতে তাদের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা থেকে পালিয়ে গিয়েছিল।

মাহমুদ আল-শান্তি, হাসান আল-বাতনাজি ও আসমাহান আল-বারবারি সবাই আল-শিফা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁরা আশা করছেন,তাঁরা নিরাপদ জায়গা খুঁজে পাবেন।আল-শিফা গাজা শহরের অনেক বাসিন্দার জন্য স্বস্তিদায়ক জায়গা হয়ে উঠেছে। কেননা সেখানে কিছু না কিছু খবরাখবর পাওয়া যাচ্ছে, ইন্টারনেট সংযোগ আছে, বিদ্যুৎও আছে।তবে চিকিত্সার জন্য প্রত্যেককেই সংগ্রাম করতে হচ্ছে। গাজার ওপর ১৬ বছর ধরে চলা অবরোধের মাত্রা আরও বাড়িয়েছে ইসরায়েল। খাদ্য, পানীয় জল,বিদ্যুৎ,ওষুধসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গাজায় ঢুকতে দিচ্ছে না।সম্পূর্ণ অবরোধ’ মানে সবচেয়ে মৌলিক ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহের তীব্র সংকট।

পদ্ধতিগতভাবে আবাসিক এলাকাকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে

গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজার ওপর লিফলেট ফেলেছে। তাতে ছিল উত্তর গাজা ও গাজা শহর ছাড়ার নির্দেশ।লিফলেটে গাজাবাসীকে দক্ষিণের দিকে সরে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে।ইসরায়েল যে অঞ্চলটিকে ফাঁকা করতে বলেছে, সেখানে ১০ লাখের বেশি মানুষের বসবাস। ইসরায়েলের লিফলেট ফেলার পর হাজার হাজার মানুষ দক্ষিণের দিকে ছোটেন, তবে অন্য অনেকেই তাঁদের বাড়িঘর ছাড়তে পারেননি,কেননা তাঁদের অনেকেই পরিবহনের ব্যবস্থা করতে পারেননি। অনেকেই বাড়িতে থাকাই বেছে নিয়েছেন অথবা অনেকেই ইসরায়েলের দাবি উপেক্ষা করার জন্য হামাসের আহ্বানে সাড়া দিয়ে এলাকা ছাড়েননি।

আবাসিক এলাকায় ইসরায়েলের হামলার জেরে হাসপাতালের করিডরগুলো ভরে গেছে। আহত ব্যক্তিদের অনেকে শয্যা না পেয়ে মেঝেতে পড়ে আছেন। অস্ত্রোপচারকক্ষ ও নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) সংকট প্রবল।উদ্ভূত পরিস্থিতি সমাধানের জন্য যে আলোচনা হচ্ছে, তার বেশির ভাগটাই জুড়ে রয়েছে ফিলিস্তিনিদের গাজা ছেড়ে যাওয়ার জন্য মানবিক করিডরের ধারণাকে ঘিরে। তবে মিসরের সঙ্গে স্থলপথে সীমান্ত ক্রসিং খোলার পরামর্শ কায়রো প্রত্যাখ্যান করেছে। যদিও সেটি মানবিক সহায়তার জন্য খুলতে সম্মত হয়েছে দেশটি।

তবে গাজার ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা বলছেন,এখন সবচেয়ে জরুরি হলো বোমাবর্ষণ বন্ধ করা এবং আরও মৃত্যু ও মানুষের দুর্ভোগ ঠেকাতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া।স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিচালক মুনির আল-বারশ বলেন, ইসরায়েলি বিমান হামলায় ‘পদ্ধতিগতভাবে আবাসিক এলাকাগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে, যা অপরাধ’। এসব হামলায় হতাহত ব্যক্তিদের বেশির ভাগই বেসামরিক নাগরিক।

বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে আল–বারশ বলেন, বাসাবাড়ি, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, অ্যাম্বুলেন্সসহ সবকিছু লক্ষ্য করে বোমা হামলা চালানো হচ্ছে।ইসরায়েল বলছে, তারা গাজায় হামাস ও অন্য প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করে হামলা অব্যাহত রাখবে।গাজার ফিলিস্তিনিদের বোমার নিচে, ধ্বংসের মধ্যে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।খাবারের টান পড়েছে, বিশুদ্ধ পানীয় জলের অভাব প্রকট হচ্ছে। সংক্রামক রোগ বিস্তারের আশঙ্কাও রয়েছে।ইসরায়েলের হামলায় এভাবে মৃতের সংখ্যা যত বাড়বে, ততই গাজার সমৃদ্ধ ইতিহাস ও সংস্কৃতির ধারক পরিবারগুলোর হারিয়ে যাওয়ার সংখ্যাও বাড়বে।