অবৈধভাবে নদী দখল,সুরমা-কুশিয়ারাসহ সিলেট বিভাগের ৩১ নদী সংকটাপন্ন

- আপডেট সময় : ০৭:০৪:৩৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৩ ৬৬ বার পড়া হয়েছে
ভিউ নিউজ ৭১ ডেস্ক:
অবৈধভাবে নদী দখল করে স্থাপনা নির্মাণ,শিল্পকারখানার দূষণ,পলি ভরাটসহ বিভিন্ন কারণে সিলেট বিভাগের ৩১টি নদী সংকটাপন্ন অবস্থায় রয়েছে।এরমধ্যে সিলেটের প্রধানতম দুই নদী সুরমা,কুশিয়ারাও রয়েছে।গতকাল মঙ্গলবার সিলেট বিভাগীয় নদী বিষয়ক কর্মশালায় এসব তথ্য উঠে আসে।শহরতলীর খাদিমস্থ একটি রিসোর্টে এ কর্মশালার আয়োজন করে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)।কর্মশালায় জানানো হয়, নদীরক্ষা কমিশন এর সর্বশেষ ২০২৩ সালের হিসেব মতে দেশে ১ হাজার ৮টি নদ-নদী রয়েছে।সিলেট বিভাগে রয়েছে ১শ’৬৮টি। এরমধ্যে সিলেটে ৩৫,সুনামগঞ্জে ৯৭,মৌলভীবাজারে ৮ ও হবিগঞ্জে ২৮টি।যদিও আলোচকদের দাবি সরকারি এই তথ্যে গরমিল রয়েছে।কারণ,বাংলাদেশের অনেক নদ-নদী ইতোমধ্যে হারিয়ে গেছে।সিলেটেও এমন বেশ কয়েকটি নদী রয়েছে।এছাড়া বেশকিছু নদীর তীর ১ হাজার ১শ’ ৯৪ জন দখলদার দখল করে রেখেছেন।
নদীর তীর দখলে রেখেছেন ১ হাজার ১শ’ ৯৪ জন
অন্যদিকে সিলেট বিভাগের চার জেলার মধ্যে সিলেটের সুরমা,কুশিয়ারা,ডাউকি,পিয়াইন,ধলাই,লোভা,সারি,বাসিয়া ও চেঙ্গেরখাল নদী বেশি সংকটাপন্ন অবস্থায় রয়েছে।সুনমাগঞ্জের ধোপজান,যাদুকাটা, নলজুর, বৌলাই, রক্তি, চেলা, খাশিয়ামারা,কুশিউড়া,মাহরাম,মহাসিং ও বোকানদী,মৌলভীবাজারের ধলাই,মনু,জুড়ী, কন্ঠীনালা ও গোপলা নদী এবং হবিগঞ্জ জেলার খোয়াই,সুতাং,সোনাই,বরাক,কাষ্টি ওকরাঙ্গী নদীর অস্তিত্ব বিপন্ন অবস্থায় রয়েছে।মূলত নদী দখল করে স্থাপনা,অপরিকল্পিত বালু পাথর উত্তোলন,দূষণ,নদীতে অপরিকল্পিতভাবে বাঁধ,সেতু ও স্ল্ইুচগেট নির্মাণ, খালের সঙ্গে নদীর সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা, নদীগর্ভে পলির অবক্ষেপন ও পলির অব্যবস্থাপনার কারণে নদীর অবস্থা এমন সংকটাপন্ন হয়ে উঠছে।
কর্মশালার সঞ্চালক বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান বলেন,নদী কেবল জীবন্ত সত্তা নয়,নদীর সঙ্গে মানুষের আত্মার সম্পর্ক রয়েছে।নদীর পানির স্রোত আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছে।নদীকে আমরা মেরে ফেলতে পারি কিন্তু সৃষ্টি করতে পারি না।নদীকে বাঁচাতে না পারলে নিজেরাও বাঁচতে পারবো না।আমাদের আগামী প্রজন্মকে সুন্দরভাবে বাঁচানোর জন্য নদীকে রক্ষা করা আমাদের সকলের দায়িত্ব।’
কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান, কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তর সিলেটের উপপরিচালক মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান,পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো:মোহাইমিনুল হক, বন বিভাগ সিলেটের সহকারী বন সংরক্ষক মো:নাজমুল আলম, মৎস্য অধিদপ্তর সিলেটের উপপরিচালক মো: আনোয়ার হোসেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো: শফিকুল ইসলাম।কর্মশালার শুরুতে ‘সিলেট বিভাগের নদ-নদী পরিস্থিতি: সংকট ও করণীয়’ বিষয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বেলার বিভাগীয় সমন্বয়কারী এডভোকেট শাহ সাহেদা আখতার ও সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সেচ ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ড. পিযুষ কান্তি সরকার।
কর্মশালায় নদী বাঁচাতে বেশকিছু সুপারিশ করা হয়।এর মধ্যে রয়েছে-পানি প্রবাহে বাধা সৃষ্টিকারী সকল অবৈধ বাঁধ অপসারণ,অবৈধ বালু পাথর উত্তোলন বন্ধ,পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ এবং পরিবেশ বিধিমালা ১৯৯৭ কে বিবেচনায় নিয়ে নদীর দূষণ ও দখলমুক্ত করা,১৯৯৫ সালের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী নদী-খাল ইজারা বন্ধ করা, পর্যায়ক্রমে নদীর সকল ধরনের বাধা অপসারণ,হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী নদের সঠিক সীমানা নির্ধারণ করা এবং নদীর সঠিক সীমানা নির্ধারণ করে সীমানা সুরক্ষা ইত্যাদি।অন্যদিকে কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীদের নিয়ে বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান সংকটাপন্ন সারি নদী পরিদর্শন করেন।