আগামী বাজেট হবে সংকোচনমুখী

- আপডেট সময় : ১২:৪৩:৫৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৮ ডিসেম্বর ২০২৩ ২১৫ বার পড়া হয়েছে
ভিউ নিউজ ৭১ : প্রিন্ট সংস্করণ
অর্থনৈতিক সংকট ও কৃচ্ছ সাধন কর্মসূচির মধ্যে আগামী অর্থবছরের (২০২৪-২৫) জন্য সম্প্রসারণমূলক বাজেট দেওয়ার পথ থেকে সরে আসছে অর্থ বিভাগ। নতুন বাজেটটি হবে অনেকটা সংকোচনমূলক।মূলত রাজস্ব আহরণ কম, আমদানি ও রপ্তানি পরিস্থিতি ভালো নয়। আগামী বছরও এ অবস্থা অব্যাহত থাকতে পারে। এমন পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।একই সঙ্গে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রাও কমিয়ে আনা হচ্ছে।এ মুহূর্তে প্রবৃদ্ধি অর্জনে গুরুত্ব কমিয়ে বেশি নজর দেওয়া হচ্ছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে।মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে ৭ দশমিক ৫ শতাংশে নেওয়া হবে।পাশাপাশি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিদ্যমান পরিস্থিতির কারণে চলতি অর্থবছরের (২০২৩-২৪) বাজেট পুরোপুরি বাস্তবায়নযোগ্য হবে না। ফলে কমপক্ষে প্রায় ৫২ হাজার কোটি টাকা কাটছাঁটের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বৃহস্পতিবার ‘আর্থিক মুদ্রা ও মুদ্রা বিনিময় হার সংক্রান্ত কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল এবং বাজেট ব্যবস্থাপনা ও সম্পদ কমিটির বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।ওই দুটি বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল। ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত বৈঠকে কঠোর গোপনীয়তা অবলম্বন করা হয়।দুপুর আড়াইটায় জুমে বৈঠক শুরু হয়ে চলে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। অর্থনীতি খাতের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের বৈঠকে আমদানি,রপ্তানি পরিস্থিতি, এডিপিসহ চলতি বাজেট বাস্তবায়ন হার নিয়ে আলোচনা হয়।এছাড়া ভর্তুকি পরিস্থিতি,সুদহার,ব্যাংক ঋণ পরিস্থিতি, পুঁজিবাজার,রাজস্ব খাত,সঞ্চয়পত্র,মূল্যস্ফীতি,প্রবৃদ্ধির বিষয়ও আলোচনায় উঠে আসে।
সূত্র জানায়, বৈঠকে আগামী অর্থবছরের সম্ভাব্য বাজেটের আকার এবং চলতি সংশোধিত বাজেটের তথ্য তুলে ধরা হয়। এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত অর্থ বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান,প্রতিবছর বাজেটের প্রবৃদ্ধি ১০ থেকে ১২ শতাংশ ধরেই প্রাক্কলন করা হয়।অর্থাৎ চলতি বছরের বাজেটের চেয়ে আগামী বাজেটের আকার ১০ থেকে ১২ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। এবার সেটি ৮ শতাংশের নিচে বাড়বে। এর কারণ হচ্ছে বড় বাজেট দিতে হলে রাজস্ব আদায় সেরকম থাকতে হবে। রাজস্ব আদায় কম, আমদানি ও রপ্তানি কমছে।এসব বিষয় বিবেচনায় বড় বাজেট দেওয়া সম্ভব নয়।আগামী বাজেটের সম্ভাব্য আকার :মোট ব্যয় ৮ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকা,আয় ৫ লাখ ৫৫ হাজার কোটি টাকা এবং ঘাটতি ২ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা।এক্ষেত্রে চলতি বাজেটের চেয়ে আকার বাড়ছে ৪৩ হাজার কোটি টাকা।রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়বে ৫১ হাজার ১০০ কোটি টাকা।
চলতি বছরের সংশোধিত বাজেট : মোট ব্যয় ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি থেকে কমিয়ে ৭ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়। মোট রাজস্ব আয় ৫ লাখ ৩ হাজার কোটি থেকে কমিয়ে ৪ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়।রাজস্ব আয় কমানো হয়েছে ৩৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা।এক্ষেত্রে বাজেটে নতুন ঘাটতি দাঁড়াবে ২ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা।এডিপির আকার ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি থেকে কমে ২ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।এডিপি কাটছাঁট করা হয়েছে ১৮ হাজার কোটি টাকা।
জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড.এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান,বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সম্প্রসারণমূলক বাজেট না দেওয়ার সিদ্ধান্ত ঠিক আছে।এরপরও যে প্রাক্কলন করা হয়েছে,সেটি কতটুকু বাস্তবায়ন হয়,সেটি দেখার বিষয়।বর্তমানে বিনিয়োগ হচ্ছে না।রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা রয়েছে।নির্বাচনের পর কী দাঁড়ায়, সেটি বলা যাচ্ছে না।এক্ষেত্রে ৭ শতাংশ জিডিপির প্রবৃদ্ধি অর্জন কঠিন হবে। মূল্যস্ফীতি এখন ১০ শতাংশ বিরাজ করছে।এটি কমে আসার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর যুগান্তরকে জানান,সময়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই বাজেট সম্প্রসারণমূলক না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।রাজস্ব আয় বাড়াতে না পারলে বাজেটের আকার বাড়িয়ে লাভ নেই।ডলার ও রাজস্ব চ্যালেঞ্জ আছে।সেটি মনে রেখেই বাজেটের আকার ঠিক করতে হবে।ফলে কম প্রবৃদ্ধির বাজেটই সঠিক হবে।প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ নামিয়ে আনা হয়েছে,সেটিও উচ্চ মানের প্রবৃদ্ধি।তবে সন্দেহ আছে সেটি অর্জন নিয়ে।কোথা থেকে প্রবৃদ্ধি আসবে জানি না।ভালো খবর কোথাও নেই। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হলে সংশ্লিষ্ট নীতিগুলো ঠিক করতে হবে।
আর্থিক মুদ্রা ও মুদ্রা বিনিময় হার সংক্রান্ত কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল বৈঠকে এ মুহূর্তে অর্থনীতির প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকেই ধরে নেওয়া হয়েছে।সেখানে বলা হয়,মূল্যস্ফীতি না কমাতে পারলে প্রবৃদ্ধি অর্জনে কোনো ধরনের লাভ হবে না।ফলে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বেশি নজর দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। মূল্যস্ফীতি চলতি বছরের ডিসেম্বরে ৮ শতাংশে নেমে আসবে-এমন ধারণা করা হয়েছে।আর বছর শেষে এটি সাড়ে সাত শতাংশ হবে।অর্থ বিভাগ মনে করছে,মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যাংক ঋণের সুদের হার বাড়ছে,আমদানি কমানো হচ্ছে,অযৌক্তিক ব্যয় হ্রাস করা হচ্ছে। এছাড়া অর্থ সরবরাহ কমিয়ে আনা হচ্ছে।
এছাড়া গাড়ি কেনা, ভূমি অধিগ্রহণ,ভবন নির্মাণসহ অন্যান্য কার্যক্রম বন্ধ রাখা হচ্ছে।এটি অব্যাহত থাকবে। চাহিদার দিক থেকে অনেক কিছু হ্রাস করা হচ্ছে। অপরদিকে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরবরাহ ঠিক রাখতে গিয়ে টিসিবি ও ওএমএস কর্মসূচির মাধ্যমে পণ্য সরবরাহ বৃদ্ধি, বাজার মনিটরিং জোরদার করার সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়া বিলাসী পণ্য আমদানি কমানো হয়েছে।সূত্র আরও জানায়, চলতি অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধির দিকে নজর কম থাকবে।চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। নানা প্রেক্ষাপটে এটি অর্জন সম্ভব হয়। ফলে প্রবৃদ্ধি কমিয়ে ৬ দশমিক ৯ শতাংশ নির্ধারণের সিদ্ধান্ত হয়। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে সমন্বয় রেখেই প্রবৃদ্ধি কমিয়ে আনা হচ্ছে।বৈঠকে রেমিট্যান্স কমে যাওয়াকে অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব হিসাবে দেখা হয়েছে।এছাড়া সরকারের ঋণের সুদহার নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কারণ,সুদ পরিশোধে সরকারের অনেক ব্যয় হচ্ছে।