বঙ্গবন্ধুর পলাতক পাঁচ খুনিকে ফেরানো অনিশ্চিত

- আপডেট সময় : ০৬:১৩:০০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ অগাস্ট ২০২৩ ৭১ বার পড়া হয়েছে
কূটনৈতিক প্রতিবেদক-ঢাকা,
ভিউ নিউজ ৭১ ডেস্ক:
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের আত্মস্বীকৃত পাঁচ খুনিকে এখনো ফিরিয়ে আনা যায়নি। এঁদের মধ্যে এম বি নূর চৌধুরী কানাডায় এবং রাশেদ চৌধুরীর যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানের বিষয়টি নিশ্চিত। বাকি তিনজনের অবস্থান অজানা।এমন পরিস্থিতিতে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পাঁচ খুনিকে দেশে ফেরানো ও সাজার মুখোমুখি করা নিয়ে সংশয় কাটছে না।আইনি জটিলতায় কানাডা থেকে নূর চৌধুরী এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে রাশেদ চৌধুরীকে বাংলাদেশে ফেরানো ঝুলে আছে। অন্যদিকে পালিয়ে থাকা মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অন্য তিন খুনি খন্দকার আবদুর রশিদ, শরিফুল হক ডালিম ও রিসালদার মোসলেহউদ্দিনের অবস্থান সম্পর্কে সরকারের কাছে এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই।যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতার পালাবদলের পর সে প্রক্রিয়াও ঝুলে গেছে। সব মিলিয়ে পালিয়ে থাকা বঙ্গবন্ধুর খুনিদের শেষ পর্যন্ত ফেরানো যাবে কি না, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
এদিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন গতকাল সোমবার পলাতক খুনিদের অবস্থান সম্পর্কে সঠিক তথ্য দিলে পুরস্কার দেওয়ার কথা বলেছেন। তিনি জাতীয় প্রেসক্লাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাংবাদিক ফোরাম আয়োজিত আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন।বাংলাদেশের সাবেক ও বর্তমান কয়েকজন কূটনীতিক এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, কানাডা মৃত্যুদণ্ড বিলোপ করায় দেশটি থেকে নূর চৌধুরীকে ফেরানোর ক্ষেত্রে আইনি জটিলতা রয়েছে। আর ২০২০ সালের জুনে মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় রাশেদ চৌধুরীর রাজনৈতিক আশ্রয়সংক্রান্ত মামলার নথি তলব করেছিল। মামলাটি পুনরায় সচল হলে রাশেদ চৌধুরীর রাজনৈতিক আশ্রয় বাতিল হওয়ার সুযোগ তৈরি হতো। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতার পালাবদলের পর সে প্রক্রিয়াও ঝুলে গেছে। সব মিলিয়ে পালিয়ে থাকা বঙ্গবন্ধুর খুনিদের শেষ পর্যন্ত ফেরানো যাবে কি না, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।কূটনৈতিক সূত্রে গতকাল জানা গেছে, সাম্প্রতিক কালে বেশ কয়েকবার সরকারের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার কাছে যথাক্রমে রাশেদ চৌধুরী ও নূর চৌধুরীকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর অনুরোধ জানানো হয়। তবে দুই দেশই বরাবরের মতো বিষয়টি আইনি প্রক্রিয়ার আওতাধীন বলে উল্লেখ করেছে।
অন্য তিন খুনির বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, খন্দকার আবদুর রশিদ, শরিফুল হক ডালিম ও রিসালদার মোসলেম উদ্দিন বিভিন্ন সময় বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করেছেন বলে কথা শোনা গেছে। তবে শেষ পর্যন্ত তা নিশ্চিত করা যায়নি।অবশ্য বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফিরিয়ে আনাসংক্রান্ত কাজে যুক্ত ছিলেন, সরকারের এমন সাবেক একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এই প্রতিবেদককে বলেন, বঙ্গবন্ধুর পলাতক তিন খুনি খন্দকার আবদুর রশিদ, শরিফুল হক ডালিম ও রিসালদার মোসলেম উদ্দিন মূলত পাকিস্তানে অবস্থান করেন। সেখান থেকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দেশে আসা–যাওয়া করে থাকেন।ওদিকে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের বাংলাদেশ শাখা ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরোর (এনসিবি) তথ্য অনুযায়ী, খন্দকার আবদুর রশিদের সম্ভাব্য অবস্থা লিবিয়া বা জিম্বাবুয়ে, শরিফুল হক ডালিমের অবস্থান পাকিস্তান বা লিবিয়া এবং রিসালদার মোসলেম উদ্দিনের সম্ভাব্য অবস্থান পাকিস্তানে। পলাতক ওই পাঁচ খুনির বিষয়ে ইন্টারপোল থেকে ২০০৯ সালে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নৃশংসভাবে হত্যা করেন সেনাবাহিনীর বিপথগামী কিছু সদস্য। বিদেশে থাকায় শুধু বেঁচে যান তাঁর দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। খুনিদের দায়মুক্তি দিতে আইনও করা হয়েছিল। তবে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচার শুরু করে।১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর তৎকালীন ঢাকার দায়রা জজ কাজী গোলাম রসুল এই মামলায় ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশের রায় দেন। পরে উচ্চ আদালত ১২ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন।২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি রাতে খুনি সৈয়দ ফারুক রহমান, বজলুল হুদা, এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান ও মুহিউদ্দিন আহমেদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। আরেক খুনি আজিজ পাশা ২০০১ সালের জুনে জিম্বাবুয়েতে মারা যান।পলাতক খুনিদের মধ্যে আবদুল মাজেদকে ২০২০ সালের ৬ এপ্রিল রাজধানীর গাবতলী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করার কথা জানায় পুলিশ। কয়েক দিন পরেই (১১ এপ্রিল রাতে) তাঁর ফাঁসি কার্যকর করা হয়। তখন ভারতীয় গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয় যে দীর্ঘদিন ধরে নাম ও পরিচয় গোপন করে খুনি মাজেদ কলকাতায় বসবাস করছিলেন।