আপন ঠিকানায় চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন মাওলানা মুহিব্বুল হক গাছবাড়ি।

- আপডেট সময় : ০২:০৬:০১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ মে ২০২৩ ৮০ বার পড়া হয়েছে
ভিউ নিউজ ৭১ ডেস্ক,
আপন ঠিকানায় চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন মাওলানা মুহিব্বুল হক গাছবাড়ি।
জামেয়া দরগার মুহতামিম ও শায়খুল হাদিস প্রবীণ আলেম মুহতারাম আল্লামা মুহিব্বুল হক (গাছবাড়ী) রাহি: এর জানাজার নামাজে লাখো জনতার ঢল …..
বিদায় নিলেন সিলেটের অভিভাবক শায়খুল হাদিস আল্লামা মুহিব্বুল হক গাছবাড়ী!
জানাযায় শরীক হোন শায়খুল হাদীস আল্লামা আহমদ আলী চিল্লার হুজুর
সিলেটের অভিভাবকের দায়িত্ব থেকে চিরবিদায় নিয়ে ধুসর পৃথিবী ছেড়ে আল্লাহর ডাকে আকাশের পথে চলে গেছেন আজ আমাদের উস্তাদ, সিলেটের মুসলমানদের অভিভাবক শায়খুল হাদিস আল্লামা মুহিব্বুল হক গাছবাড়ী রাহ.।
অর্ধশতাব্দীরও বেশীকাল একটানা কেটে যায় তার শাহজালালের প্রাঙ্গনে ইলম বিতরনের ঘোরে। মেধায় ভরা ছাত্রজীবনে নানান জায়গা ঘুরে যে আলোর ভান্ডার অর্জন করেছিলেন, অকাতরে তা দীর্ঘকাল বিলাতে থাকেন শাগরিদদের হৃদয়-অন্তরে।
তাঁর ছাত্রদের টোটাল যোগফল সংখ্যা হয়তো জানা ছিলনা তাঁর। কিন্তু দেশের সমস্ত জনপদে ছড়িয়ে গেছে তার নিকট থেকে আলো নিয়ে যাওয়া ছাত্ররা। আর বিদেশ? গাছবাড়ির শাগরিদ নেই, পৃথিবীর এমন কোন দেশ খুঁজে পাওয়া সুকঠিন হবে নিঃসন্দেহে।
১৯৪৭ সালের ০৮ জানুয়ারি সিলেটের কানাইঘাট থানার গাছবাড়ীতে জন্মগ্রহণ করেন ইলমের এই বটবৃক্ষ। তাঁর সম্মানিত পিতার নাম মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাক রহ.।
গ্রামের বিদ্যালয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অর্জনের পর মাযাহিরুল উলূম আকুনি মাদরাসায় পড়াশুনা করেন তিনি। অতঃপর আল্লামা মুশাহিদ বাইয়মপুরীর তত্ত্বাবধানে দারুল উলূম কানাইঘাটে জালালাইন ও মিশকাত জামাত অধ্যয়ন করেন। এরপর ঐতিহ্যবাহী জামেয়া হুসাইনিয়া আরাবিয়া রানাপিং মাদরাসায় মাওলানা রিয়াসত আলী চৌঘরী রহ. ও মাওলানা তাহির আলী তৈপুরী রহ. –এর কাছে দাওরায়ে হাদিস পড়েন। ১৯৬২ ঈসায়িতে তিনি দারুল উলূম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারি মাদরাসায় ভর্তি হয়ে পুনরায় তাকমীল ফিল হাদিস সম্পন্ন করেন। তিনি হাটহাজারিতে ফেক্বাহ, তাফসীর, আদব ও মানতিক বিষয়েও পড়াশুনা করেন।
দারুল উলূম হুসাইনিয়া দরগাহপুর পাথারিয়া মাদরাসায় অধ্যাপনার মাধ্যমে তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক খিদমাতের সূচনা। এর পর ১৯৯৩ হিজরিতে জামেয়া ক্বাসিমুল উলূম দরগাহ হযরত শাহজালাল রহ. সিলেটে তিনি যোগদান করেন। এখানে সাধারণ শিক্ষকতা দিয়ে দায়িত্ব শুরু করে পর্যায়ক্রমে সদর মুদাররিস, শিক্ষাসচিব, শায়খুল হাদিস ও সর্বোচ্চ মুহতামিমের পদ অলংকৃত করেন। এবং আজ ইন্তেকাল মুহুর্ত পর্যন্ত সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি ছিলেন জাতীয় মানের আলেম।
ছিলেন আজাদ দ্বীনি এদারার পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক। ওলামা পরিষদের আমীর। হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় দায়িত্বশীল ও সিলেটের প্রধান। ছিলেন হযরত আহমদ শফী রহ. এর একান্ত স্নেহভাজন। আর ছিলেন জানা অজানা অসংখ্য প্রতিষ্ঠানের নিয়ামক।
তাঁর সবচেয়ে বড় আকর্ষণের বিষয় ছিল, দেশের শহর-বন্দরে, গ্রাম-পল্লীতে, বিদেশ-বিভুইঁয়ে ছড়িয়ে থাকা তাঁর অজস্র শাগরিদের অভিভাকত্ব। সন্তান যেভাবে যতদূরই যাক, শেষ রিপোর্ট ও কারগুজারী পেশ করে পিতার কাছে। দুঃখ-আনন্দ সবই জানায় বাবাকে। গাছবাড়ি হুজুর ও তাঁর শিষ্যদের মাঝে সম্পর্কটাও ছিলো ঠিক অবিকলই। ছাত্রদের গড়া প্রতিষ্ঠানসমুহের ছোট বড় সমস্যা, কমিটির সাথে গ্যাপ, অভাব-অনটন এমনকি ৩২ বছর আগের শাগরিদদের মধ্যকার কোন দ্বন্ধ সব কেইসই আসতো তার দরবার। আশ্চর্যজনক হলেও সত্য, এর সবগুলোই তিনি শুনতেন, বসতেন। এবং বিরক্ত না হয়ে শান্তভাবে সমাধান দিতেন। ইতিহাসের বিখ্যাত বিচারক ক্বাজী শুরায়হের মত যে যেখানে দ্বন্দ্ব-ঝগড়ায় জড়িয়ে যেত, নির্ভয়ে একদম সোজা চলে আসতো সবাই তাদের প্রিয় উস্তাদ ও রুহানী পিতার দরবারে।
তাঁর জীবনের অন্যতম সৌন্দর্য ও সৌভাগ্য ছিল আরেকটি। সেটা হল শাহজালালের কোলে, যুগসেরা বুযুর্গ ও যাহিদ, দরগা মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা আরিফ বিল্লাহ হযরত শায়খ আকবর আলীর সরাসরি তত্বাবধানে তার জীবনের সবচেয়ে বড় অংশ দীর্ঘ ৩টি যুগ কাটানো।
এই মহিরুহ দরগাহ মাদরাসার দায়িত্ব পালন কালীন অবস্থায় আজ ১৭ মে ২০২৩ সালাতুল মাগরিবের পুর্ব মুহুর্তে পাড়ি জমান তাঁর মহান রবের কাছে, পূর্বসুরীদের পথ ধরে।