ঢাকা ১১:৫১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ১২ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা এখনো আক্রমণের মুখে: সম্পাদক পরিষদ হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ট্রাষ্টের মাসবপ্যাপী সেহরি বিতরণ চলমান বিএনপি ক্ষমতায় গেলে শিক্ষিত বেকার ভাতা চালু করবে: তারেক রহমান সংস্কার ও নির্বাচনকে মুখোমুখি করবেন না: এনসিপি বিশেষজ্ঞদের দাবি, হাসি বাড়াবে আয়ু কল্পনাশক্তি মানুষকে লক্ষ্যে পৌঁছাতে সাহায্য করে: প্রধান উপদেষ্টা বাবার ঠিকাদারি ইস্যুতে ক্ষমা চাইলেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ হবিগঞ্জে বিজিবি’র অভিযান দেড় কোটি মূল্যের পণ্য ও ১টি ট্রাক আটক জৈন্তাপুরে আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত ইলিয়াস কাঞ্চনের নেতৃত্বে আসছে ‘জনতার পার্টি বাংলাদেশ’ দীর্ঘদিন থেকে ভোলাগঞ্জ রোপওয়ে (বাংকার) থেকে পাথর লুটপাট হচ্ছে সরকারি চাল আত্মসাতে বিএনপি নেতার কারাদণ্ড

সব হারিয়ে বুক ফাটা কান্না

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৮:১৯:৫১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৫ এপ্রিল ২০২৩ ৮৩ বার পড়া হয়েছে

‘শ্বশুরবাড়ি আর বন্ধুদের কাছ থেকে আনা পুঁজি শেষ’

ভিউ নিউজ ৭১ প্রতিবেদন,

‘রোজার ঈদকে সামনে রেখে শ্বশুরবাড়ি আর বন্ধুদের কাছ থেকে প্রায় ১০ লাখ টাকা পুঁজি জোগাড় করেছিলাম। ঈদের পর ধারের টাকা শোধ করার কথা ছিল। আগুনে আমি নিঃস্ব হয়ে গেলাম।এখন আমি কী করব?’ বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডে সব হারিয়ে নিঃস্ব মাহিন এভাবেই রাস্তায় বসে আহাজারি করছিলেন।মাহিনের মতো স্বল্প পুঁজি নিয়ে এখানে ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করতেন শত শত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। এরকম অসংখ্য ছোট ব্যবসায়ীর বেঁচে থাকার অবলম্বন নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল আগুনে। অসংখ্য দোকান ও কাপড়ের গুদাম পুড়ে ছাই হয়েছে।তার মতো বঙ্গবাজারের আরও পাঁচ হাজারের মতো দোকানি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে জানান মাহিন। ঈদ সামনে রেখে বঙ্গবাজার ও আশপাশের মার্কেটের সব দোকানেই প্রচুর নতুন কাপড়-চোপড় ও ফ্যাশন পণ্য তোলা হয়েছিল। সকালে আগুন লাগার পর ব্যবসায়ী ও দোকানকর্মীদের অনেকে মরিয়া হয়ে মালামাল সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। অসহায়ভাবে কাঁদছিলেন অনেকে।

একটি বস্তা দেখিয়ে মাহিন বলেন,এই বস্তায় এক লাখ টাকার কাপড় উদ্ধার করতে পেরেছি। পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন ইমরান হোসেন নামের আরেক কাপড় ব্যবসায়ী।তিনি বলেন,আমি এক টাকার মালও বের করতে পারিনি ভাই। আমার সব শেষ।ইমরান বলেন, ‘আমার বাসা বঙ্গবাজারের পেছনেই। বাসা থেকে মার্কেট দেখা যায়। সকালে এক বন্ধুর ফোন পেয়ে উঠে দেখি আমার মার্কেটে আগুন জ্বলতেছে। দৌড়ে এসে আমার দোকানের মালামাল বের করতে গিয়ে দেখি, চাবি বাসায় ফেলে এসেছি। মাহিনের পাশেই কয়েকটি বস্তার ওপর বসে ছিলেন জাভেদ ওমর নামের আরেক কাপড় ব্যবসায়ী। মহানগর মার্কেটে ‘রহমানিয়া ফ্যাশন’ নামে শিশুদের কাপড়ের দোকান ছিল তার।তিনি বলেন, ‘আমার দোকানে ৭৫ লাখ টাকার মাল ছিল।তার মধ্যে মাত্র এই চার বস্তা বাঁচাতে পেরেছি।বাদবাকি সব আগুনে গেছে। মঙ্গলবার আমি আমার মোটরসাইকেল বিক্রি করে ক্যাশ টাকাও দোকানে রেখেছিলাম। তাও পুড়ে গেছে। আমার সব শেষ। আমি এখন পথের ফকির। আমার আরও ১০ লাখ টাকা ঋণ আছে। এখন কীভাবে শোধ করব, সেটা মাথায় আসছে না।’

বঙ্গবাজারের উলটো দিকে বঙ্গ হোমিও কমপ্লেক্স মার্কেটের ফ্যাশন ওয়্যার হাউজের মালিক মোহাম্মদ শুক্কুর আলী বলেন, মূল বঙ্গবাজারে ছয়টা দোকান ছিল। এখন আর নেই,পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।তিনি বলেন,আমাদের মার্কেটের ছয় তলায় শার্টের কাপড়ের গোডাউন পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। পাশের মার্কেটের নিচ তলায় আমাদের শোরুম। যা ছিল তাও শেষ। এখানে ১২-১৩ লাখ টাকার মালামাল ছিল। মহানগর মার্কেটে ‘ইমরান এন্টারপ্রাইজ’ নামে আমার একটা বাচ্চাদের কাপড়ের দোকান ছিল আর অ্যানেক্স মার্কেটের ৭ তলায় একটা গোডাউন ছিল। সব শেষ। আমার ৩০ লাখ টাকার মাল শেষ। গ্রামে চলে যাওয়া ছাড়া আর কোনো পথ খোলা নেই।

বঙ্গবাজারের মাঝামাঝি জায়গার নিচ তলায় ভূঁইয়া ফ্যাশনের মালিক মোশাররফ কামাল ভূঁইয়ার দোকানে ঈদের আগে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকার পোশাক তোলা হয়েছিল।আগুন লাগার পর ধোঁয়ার কারণে দোকানে ঢুকতে না পারায় একটি পণ্যও বের করা যায়নি। আগুন কেড়ে নিল কামাল ভূঁইয়ার জীবিকার সম্বল।কামালের বাড়ি চাঁদপুরের কচুয়ার ঘাগরা গ্রামে। শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকায় ম্যানেজার জাহাঙ্গীর ও কয়েকজন স্টাফকে নিয়ে দোকান চালাতেন।শাওন আহমেদ নামের একজন বলেন,মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় ‘প্রিয়া শাড়ি’ নামে আমার একটি শাড়ির দোকান ছিল। আমি মুন্সীগঞ্জে থাকি। সেখান থেকে এসে দোকান করি।৯টার সময় খবর পাই মার্কেটে আগুন লেগেছে। প্রথমে ভেবেছিলাম ছোটখাটো কোনো আগুন। এসে দেখি সব শেষ। আমার ৭০-৮০ লাখ টাকার শাড়ি সব শেষ।তিনি বলেন,বঙ্গ মার্কেটের দুই তলায় ২৫০-৩০০টি শাড়ির দোকান ছিল। আর নিচ তলায় প্রায় ৫০০টির মতো দোকান ছিল। সব পুড়ে শেষ হয়ে গেছে। কেউ কিছু বাঁচাতে পারেননি। এদিকে বঙ্গবাজারের আর কে টপস দোকানের মালিক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমার নতুন দোকানে কিছুদিন আগেই ১০ লাখ টাকার মাল উঠিয়ে ছিলাম। সকালে আগুনের খবর পেয়ে আমি ও আমার বড় ভাই চলে আসি।কিছু মালামাল বের করে বাইরে রেখেছিলাম।অধিকাংশই পুড়ে যায়।রাজ্জাক বলেন, ক্যাশে তিন লাখ টাকা ছিল।এক লাখ টাকা বের করতে পেরেছি।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

সব হারিয়ে বুক ফাটা কান্না

আপডেট সময় : ০৮:১৯:৫১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৫ এপ্রিল ২০২৩

‘শ্বশুরবাড়ি আর বন্ধুদের কাছ থেকে আনা পুঁজি শেষ’

ভিউ নিউজ ৭১ প্রতিবেদন,

‘রোজার ঈদকে সামনে রেখে শ্বশুরবাড়ি আর বন্ধুদের কাছ থেকে প্রায় ১০ লাখ টাকা পুঁজি জোগাড় করেছিলাম। ঈদের পর ধারের টাকা শোধ করার কথা ছিল। আগুনে আমি নিঃস্ব হয়ে গেলাম।এখন আমি কী করব?’ বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডে সব হারিয়ে নিঃস্ব মাহিন এভাবেই রাস্তায় বসে আহাজারি করছিলেন।মাহিনের মতো স্বল্প পুঁজি নিয়ে এখানে ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করতেন শত শত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। এরকম অসংখ্য ছোট ব্যবসায়ীর বেঁচে থাকার অবলম্বন নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল আগুনে। অসংখ্য দোকান ও কাপড়ের গুদাম পুড়ে ছাই হয়েছে।তার মতো বঙ্গবাজারের আরও পাঁচ হাজারের মতো দোকানি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে জানান মাহিন। ঈদ সামনে রেখে বঙ্গবাজার ও আশপাশের মার্কেটের সব দোকানেই প্রচুর নতুন কাপড়-চোপড় ও ফ্যাশন পণ্য তোলা হয়েছিল। সকালে আগুন লাগার পর ব্যবসায়ী ও দোকানকর্মীদের অনেকে মরিয়া হয়ে মালামাল সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। অসহায়ভাবে কাঁদছিলেন অনেকে।

একটি বস্তা দেখিয়ে মাহিন বলেন,এই বস্তায় এক লাখ টাকার কাপড় উদ্ধার করতে পেরেছি। পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন ইমরান হোসেন নামের আরেক কাপড় ব্যবসায়ী।তিনি বলেন,আমি এক টাকার মালও বের করতে পারিনি ভাই। আমার সব শেষ।ইমরান বলেন, ‘আমার বাসা বঙ্গবাজারের পেছনেই। বাসা থেকে মার্কেট দেখা যায়। সকালে এক বন্ধুর ফোন পেয়ে উঠে দেখি আমার মার্কেটে আগুন জ্বলতেছে। দৌড়ে এসে আমার দোকানের মালামাল বের করতে গিয়ে দেখি, চাবি বাসায় ফেলে এসেছি। মাহিনের পাশেই কয়েকটি বস্তার ওপর বসে ছিলেন জাভেদ ওমর নামের আরেক কাপড় ব্যবসায়ী। মহানগর মার্কেটে ‘রহমানিয়া ফ্যাশন’ নামে শিশুদের কাপড়ের দোকান ছিল তার।তিনি বলেন, ‘আমার দোকানে ৭৫ লাখ টাকার মাল ছিল।তার মধ্যে মাত্র এই চার বস্তা বাঁচাতে পেরেছি।বাদবাকি সব আগুনে গেছে। মঙ্গলবার আমি আমার মোটরসাইকেল বিক্রি করে ক্যাশ টাকাও দোকানে রেখেছিলাম। তাও পুড়ে গেছে। আমার সব শেষ। আমি এখন পথের ফকির। আমার আরও ১০ লাখ টাকা ঋণ আছে। এখন কীভাবে শোধ করব, সেটা মাথায় আসছে না।’

বঙ্গবাজারের উলটো দিকে বঙ্গ হোমিও কমপ্লেক্স মার্কেটের ফ্যাশন ওয়্যার হাউজের মালিক মোহাম্মদ শুক্কুর আলী বলেন, মূল বঙ্গবাজারে ছয়টা দোকান ছিল। এখন আর নেই,পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।তিনি বলেন,আমাদের মার্কেটের ছয় তলায় শার্টের কাপড়ের গোডাউন পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। পাশের মার্কেটের নিচ তলায় আমাদের শোরুম। যা ছিল তাও শেষ। এখানে ১২-১৩ লাখ টাকার মালামাল ছিল। মহানগর মার্কেটে ‘ইমরান এন্টারপ্রাইজ’ নামে আমার একটা বাচ্চাদের কাপড়ের দোকান ছিল আর অ্যানেক্স মার্কেটের ৭ তলায় একটা গোডাউন ছিল। সব শেষ। আমার ৩০ লাখ টাকার মাল শেষ। গ্রামে চলে যাওয়া ছাড়া আর কোনো পথ খোলা নেই।

বঙ্গবাজারের মাঝামাঝি জায়গার নিচ তলায় ভূঁইয়া ফ্যাশনের মালিক মোশাররফ কামাল ভূঁইয়ার দোকানে ঈদের আগে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকার পোশাক তোলা হয়েছিল।আগুন লাগার পর ধোঁয়ার কারণে দোকানে ঢুকতে না পারায় একটি পণ্যও বের করা যায়নি। আগুন কেড়ে নিল কামাল ভূঁইয়ার জীবিকার সম্বল।কামালের বাড়ি চাঁদপুরের কচুয়ার ঘাগরা গ্রামে। শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকায় ম্যানেজার জাহাঙ্গীর ও কয়েকজন স্টাফকে নিয়ে দোকান চালাতেন।শাওন আহমেদ নামের একজন বলেন,মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় ‘প্রিয়া শাড়ি’ নামে আমার একটি শাড়ির দোকান ছিল। আমি মুন্সীগঞ্জে থাকি। সেখান থেকে এসে দোকান করি।৯টার সময় খবর পাই মার্কেটে আগুন লেগেছে। প্রথমে ভেবেছিলাম ছোটখাটো কোনো আগুন। এসে দেখি সব শেষ। আমার ৭০-৮০ লাখ টাকার শাড়ি সব শেষ।তিনি বলেন,বঙ্গ মার্কেটের দুই তলায় ২৫০-৩০০টি শাড়ির দোকান ছিল। আর নিচ তলায় প্রায় ৫০০টির মতো দোকান ছিল। সব পুড়ে শেষ হয়ে গেছে। কেউ কিছু বাঁচাতে পারেননি। এদিকে বঙ্গবাজারের আর কে টপস দোকানের মালিক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমার নতুন দোকানে কিছুদিন আগেই ১০ লাখ টাকার মাল উঠিয়ে ছিলাম। সকালে আগুনের খবর পেয়ে আমি ও আমার বড় ভাই চলে আসি।কিছু মালামাল বের করে বাইরে রেখেছিলাম।অধিকাংশই পুড়ে যায়।রাজ্জাক বলেন, ক্যাশে তিন লাখ টাকা ছিল।এক লাখ টাকা বের করতে পেরেছি।