দেশের সমৃদ্ধি যাদের পছন্দ হয় না, তারাই বিভ্রান্তি ও অপপ্রচার চালায়:তথ্যমন্ত্রী

- আপডেট সময় : ০৫:৫২:১৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩১ মার্চ ২০২৩ ৮২ বার পড়া হয়েছে
নিজস্ব প্রতিবেদক ঢাকা,

তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন,অব্যাহতভাবে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে,দারিদ্র্যতা কমছে।দেশের সমৃদ্ধির সঙ্গে প্রতিটি মানুষের সমৃদ্ধি এবং সচ্ছলতা এসেছে।বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে বাংলাদেশের এই অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অনেকের পছন্দ হয় না।আজ শুক্রবার দুপুরে চট্টগ্রাম নগরীর দেওয়ানজী পুকুরপাড়ের বাসায় সমসাময়িক বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে হাছান মাহমুদ এসব কথা বলেন। তথ্য মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।তথ্যমন্ত্রী বলেন,সে জন্য দেখা যায়,কিছু কিছু পত্রিকায় উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে নেগেটিভ রিপোর্ট করা হয়।বিদেশ থেকে চিহ্নিত ব্যক্তিবিশেষ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে।কিন্তু এতে বাংলাদেশকে দমিয়ে রাখা যায়নি।
মার্কিন গণমাধ্যম ব্লুমবার্গের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আজকে করোনা মহামারি এবং বিশ্বমন্দা পরিস্থিতির মধ্যেও দেশ যেভাবে এগিয়ে চলেছে,অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি যেভাবে অব্যাহত আছে,পৃথিবীর বিভিন্ন পত্রপত্রিকা এটির প্রশংসা করছে। সম্প্রতি ব্লুমবার্গ একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে,সেখানে তারা বলেছে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অর্জিত অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এবং করোনার মধ্যেও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সক্ষমতার কারণে আগামী নির্বাচনেও জননেত্রী শেখ হাসিনার জয়লাভের সম্ভাবনা এবং তিনি চতুর্থ মেয়াদের মতো নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন,গত পরশু দিন আমাদের পরিকল্পনামন্ত্রী সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছেন,২০০৯ সালে আমরা যখন সরকার গঠন করি, তখন আমাদের দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করা মানুষের সংখ্যা ছিল ৪১ শতাংশ, কিছুদিন আগে সেটা কমে ২০ শতাংশে নেমেছিল।এই করোনা মহামারি এবং বিশ্বমন্দা পরিস্থিতির মধ্যেও এখন সেটি কমে ১৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।যুক্তরাষ্ট্রে দারিদ্র্যতা ১৭ শতাংশ।আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) রিপোর্ট উদ্ধৃত করে হাছান মাহমুদ বলেন,এই করোনা মহামারির মধ্যে আমাদের মাথাপিছু আয় ভারতকে ছাড়িয়েছে। ২০০৯ সালে যখন আমরা সরকার গঠন করি, তখন আমাদের অর্থনীতির আকার ছিল পৃথিবীর ৬০তম,এখন আমরা জিডিপিতে পৃথিবীর ৩৫তম অর্থনীতির দেশ।গত ১৪ বছরে আমরা ২৫টি দেশকে অতিক্রম করেছি। সেই ২৫টি দেশের মধ্যে মালয়েশিয়াও আছে।আর পিপিপিতে আমরা পৃথিবীর ৩১তম অর্থনীতি।
তথ্যমন্ত্রী উদাহরণ দিয়ে বলেন,আজকে বিশ্বমন্দা পরিস্থিতির মধ্যে যেখানে যুক্তরাজ্য এবং কন্টিনেন্টাল ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পণ্যের সংকট হয়েছে।আমাদের দেশে কোনো পণ্যে সংকট হয়নি।ইউরোপের সুপারমার্কেটে একসঙ্গে এক লিটারের বেশি ভোজ্যতেল,৬টার বেশি ডিম কিনতে দেওয়া হয় না,কারণ সেখানে পণ্যের সংকট দেখা দিয়েছে।রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বিশ্বমন্দা পরিস্থিতির মধ্যে আমাদের দেশে পণ্যের মূল্য বেড়েছে, কিন্তু পণ্যের সংকট তৈরি হয়নি।এখানেই তাদের সঙ্গে আমাদের পার্থক্য।
প্রথম আলোর সাংবাদিক শামসুজ্জামানের গ্রেপ্তার বিষয়ে আমেরিকাসহ ১২টি দেশ বিবৃতি দিয়েছে,এটি আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ কি না,সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে হাছান মাহমুদ বলেন,১২টি দেশের দূতাবাসের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি তাদের ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়েছে।এ প্রসঙ্গে ভারতের দিকে তাকানোর অনুরোধ করে তিনি বলেন,সেখানে কয়েক দিন ধরে বিবিসির কার্যালয়ে তল্লাশি করা হয়েছে, সেখানে কি বিভিন্ন দেশ উদ্বেগ প্রকাশ, বিবৃতি দিয়েছে? দেওয়া হয়নি।কারণ, ভারত বড় দেশ,ভারতের শক্তি–সামর্থ্য বেশি।সে জন্য সেখানে সেই সাহস দেখাতে পারেনি।
তথ্যমন্ত্রী বলেন,প্রয়োজনে কূটনীতিকদের আচরণ সম্পর্কিত ভিয়েনা কনভেনশন স্মরণ করিয়ে দেওয়া হবে। আমরা বাজেটের জন্য ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে কারও দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াই না।বরং আমাদের সাহায্য দেওয়ার জন্য তারাই এখন অর্থের ঝুলি নিয়ে আমাদের কাছে আসে।আমাদের খাটো করার সময় চলে গেছে।বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে ইফতারে বিএনপির মহাসচিব দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে তাঁদের সহায়তা কামনা করেছেন, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে হাছান মাহমুদ বলেন,আমরা তো প্রথম থেকেই বলে আসছি তারা জনগণের কাছে যায় না, তারা বিদেশি কূটনীতিকদের দ্বারে দ্বারে যায়। আমি আশা করেছিলাম তারা দুস্থ মানুষের সঙ্গে ইফতার করবে, সেটি না করে ফাইভ স্টার হোটেলে বসে কূটনীতিকদের সঙ্গে ইফতার করেছে। সেখানে গিয়ে আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের জন্য অনুনয়-বিনয় করেছে।তথ্যমন্ত্রী বলেন,আসলে দোষটা কূটনীতিকদের চেয়েও আমাদের অনেকের অনেক বেশি। কারণ,আমরা গিয়ে তাদের হাতে–পায়ে ধরি একটু কিছু বলার জন্য, আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার জন্য। এটি আসলে দেশবিরোধী এবং দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের শামিল।’
এ সময় সাংবাদিকদের স্মরণ করিয়ে দিয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন করবে না বলার পর কিছু বড় পত্রিকায় ব্যানার হেডিং দিয়েছিল ‘‘পদ্মা সেতু আর হচ্ছে না’’। কিন্তু বাংলাদেশে পদ্মা সেতু হয়েছে নিজেদের টাকায়। সে জন্য দেশের এসব বিষয়ে সাংবাদিক বন্ধুদের সতর্ক থাকতে হবে। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে গণমাধ্যম ও সাংবাদিকেরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। মানুষকে সঠিক তথ্য পেতে এবং সঠিক চিন্তা করার ক্ষেত্রে সহায়তা করেন। একই সঙ্গে মানুষকে বিশ্ব পরিস্থিতিও জানাতে সহায়তা করেন।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সরকার গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছে এবং তা অব্যাহত রাখতে আমরা বদ্ধপরিকর। স্বাধীনতার নামে যদি আমরা কেউ অপসাংবাদিকতা করি, তাহলে দেশের আপামর জনগণ এবং সাংবাদিক সমাজ নিশ্চয়ই সেটি সমর্থন করে না। সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে, সাংবাদিকতার নামে রাজনীতি করা—সেটি যে সমীচীন নয়, সে বিষয়ে নিশ্চয়ই আপনারা আমার সঙ্গে একমত হবেন।’এ সময় চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন, সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি এম এ সালাম, দক্ষিণ জেলার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, জাতীয় শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি সফর আলী উপস্থিত ছিলেন।