ঢাকা ১১:৩৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ ২০২৫, ১১ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা এখনো আক্রমণের মুখে: সম্পাদক পরিষদ হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ট্রাষ্টের মাসবপ্যাপী সেহরি বিতরণ চলমান সীমান্তবর্তী এলাকায় বিজিবি’র জনসচেতনামূলক সভা অনুষ্ঠিত জেলরোড থেকে আক্তার হোসেন গ্রেফতার মাহে রামাদ্বান উপলক্ষে অসহায় ও হতদরিদ্রদের মধ্যে ফুড প্যাক বিতরণ এনসিপি’র শ্রমিক উইং এর কেন্দ্রীয় সংগঠক হলেন সিলেটের শিব্বির আহমদ পথশিশুদের নিয়ে ইউনিস্যাবের ঈদ উৎসব-২০২৫ উদ্যাপন তিন খানকে নিয়ে আসছে সিনেমা আমার বয়স নিয়ে নায়িকার সমস্যা না হলে আপনার কেন সমস্যা: সালমান সকালে খালি পেটে পানি পান করলে কী হয় শরীরে? মানসিক অবসাদ কাটাতে রাতে যা করবেন গাজীপুরে আইজিপি

ঢাকায় বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলোচনার নামে প্রহসন শুরু ইয়াহিয়ার

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৩:৩২:২১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ মার্চ ২০২৩ ১০৫ বার পড়া হয়েছে

অগ্নিঝরা মার্চের ১৬তম দিন আজ। ১৯৭১ সালের ১৬ মার্চ ছিল মঙ্গলবার।এদিন আলোচনার নামে প্রহসন শুরু করেন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া।ঢাকায় প্রেসিডেন্ট ভবনে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আড়াই ঘণ্টার বৈঠকে কোনো ফল আসেনি। কারণ,জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী তাদের টালবাহানা অব্যাহত রাখে।এদিন দেশের সর্বত্র ওড়ছিল কালো পতাকা।মহল্লায় গড়ে উঠতে থাকে সংগ্রাম কমিটি।মুক্তির নেশায় সব বয়স ও শ্রেণি-পেশার মানুষ বেরিয়ে আসতে থাকে রাজপথে। অব্যাহত ছিল অসহযোগ আন্দোলন। রাজপথে মিছিল-সমাবেশে মুখর ছিল গোটা দেশ। ১৯৭১ সালের ১৬ মার্চ সকালে আওয়ামী লীগপ্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গাড়িতে কালো পতাকা উড়িয়ে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যান। দুই নেতার আলোচনা শেষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে বের হয়ে এলে সেখানে অপেক্ষমাণ দেশি-বিদেশি সাংবাদিকরা বৈঠক সম্পর্কে জানতে চান। এ সময় বঙ্গবন্ধু জানান, তিনি রাজনৈতিক এবং অন্যান্য সমস্যা সম্পর্কে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। আরও আলোচনা হবে।কাল সকালে তারা আবার বসবেন। এর চেয়ে বেশি কিছু তার বলার নেই।

প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে নিজ বাসভবনে ফিরে বঙ্গবন্ধু দলের শীর্ষস্থানীয় সহকর্মীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। গভীর রাত পর্যন্ত এই আলোচনা চলে।ময়মনসিংহে এক জনসভায় ন্যাপপ্রধান মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী স্বাধীন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পদ অলংকৃত করার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি আহ্বান জানান। জনসভায় তিনি ‘বাংলাদেশের পাওনা বাংলাদেশকে বুঝিয়ে দেওয়ার’ দাবিও জানান।চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকরা কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে সভা করেন। সভা শেষে মিছিল বের করা হয়। মিছিলে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন নেতৃত্ব দেন।একাত্তরের আজকের দিনে ভারত সরকার তার ভূখণ্ডের ওপর দিয়ে সব বিদেশি বিমানের পূর্ব পাকিস্তানে যাতায়াতের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।পশ্চিম পাকিস্তান থেকে বিদেশি বিমানে পূর্ব পাকিস্তানে সৈন্য পরিবহণ বন্ধ করার জন্যই এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়।ভারতের স্বাধীনতাকর্মী জয়প্রকাশ নারায়ণ নয়াদিল্লিতে বলেন, জনসাধারণের গণতান্ত্রিক অধিকারে বিশ্বাসী বিশ্বের প্রতিটি মানুষ ও সরকারের উচিত শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশকে অকুণ্ঠ সমর্থন দেওয়া।

তিনি এক বিবৃতিতে বঙ্গবন্ধুর অসাধারণ নেতৃত্বের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন।এদিন শাসনতন্ত্র প্রণয়নের আগে আওয়ামী লীগ ও পিপলস পার্টির সমন্বয়ে কোয়ালিশন সরকার গঠনসংক্রান্ত পিপিপি চেয়ারম্যান জুলফিকার আলী ভুট্টোর প্রস্তাবের তীব্র সমালোচনা করে পশ্চিম পাকিস্তানের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা পৃথক বিবৃতি দেন।করাচিতে আওয়ামী লীগের সহসভাপতি কাজী ফয়েজ মোহাম্মদ বলেন,গণতন্ত্রের নিয়ম অনুযায়ী সংখ্যাগরিষ্ঠ দল একটি। অতএব সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে, অন্যের কাছে নয়।১৯৭১ সালের এই দিনে শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের আলোচনার পাশাপাশি সারা দেশে আন্দোলন বাঁধভাঙা রূপ নিয়েছিল।রাজপথ ছিল মিছিলে মিছিলে উত্তপ্ত, রাজনৈতিক নেতাকর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষজনও দেশের উদ্ভূত সমস্যার চূড়ান্ত সমাধানে বঙ্গবন্ধুর সর্বশেষ নির্দেশনার অপেক্ষায় ছিলেন।এদিন বঙ্গবন্ধুর নতুন নির্দেশ আসে-এখন থেকে শুল্ক কর, আবগারি কর ও বিক্রয় কর স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানে জমা দেওয়া হবে না। এভাবেই অসহযোগ আন্দোলন তার লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যায়।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

ঢাকায় বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলোচনার নামে প্রহসন শুরু ইয়াহিয়ার

আপডেট সময় : ০৩:৩২:২১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ মার্চ ২০২৩

অগ্নিঝরা মার্চের ১৬তম দিন আজ। ১৯৭১ সালের ১৬ মার্চ ছিল মঙ্গলবার।এদিন আলোচনার নামে প্রহসন শুরু করেন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া।ঢাকায় প্রেসিডেন্ট ভবনে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আড়াই ঘণ্টার বৈঠকে কোনো ফল আসেনি। কারণ,জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী তাদের টালবাহানা অব্যাহত রাখে।এদিন দেশের সর্বত্র ওড়ছিল কালো পতাকা।মহল্লায় গড়ে উঠতে থাকে সংগ্রাম কমিটি।মুক্তির নেশায় সব বয়স ও শ্রেণি-পেশার মানুষ বেরিয়ে আসতে থাকে রাজপথে। অব্যাহত ছিল অসহযোগ আন্দোলন। রাজপথে মিছিল-সমাবেশে মুখর ছিল গোটা দেশ। ১৯৭১ সালের ১৬ মার্চ সকালে আওয়ামী লীগপ্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গাড়িতে কালো পতাকা উড়িয়ে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যান। দুই নেতার আলোচনা শেষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে বের হয়ে এলে সেখানে অপেক্ষমাণ দেশি-বিদেশি সাংবাদিকরা বৈঠক সম্পর্কে জানতে চান। এ সময় বঙ্গবন্ধু জানান, তিনি রাজনৈতিক এবং অন্যান্য সমস্যা সম্পর্কে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। আরও আলোচনা হবে।কাল সকালে তারা আবার বসবেন। এর চেয়ে বেশি কিছু তার বলার নেই।

প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে নিজ বাসভবনে ফিরে বঙ্গবন্ধু দলের শীর্ষস্থানীয় সহকর্মীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। গভীর রাত পর্যন্ত এই আলোচনা চলে।ময়মনসিংহে এক জনসভায় ন্যাপপ্রধান মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী স্বাধীন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পদ অলংকৃত করার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি আহ্বান জানান। জনসভায় তিনি ‘বাংলাদেশের পাওনা বাংলাদেশকে বুঝিয়ে দেওয়ার’ দাবিও জানান।চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকরা কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে সভা করেন। সভা শেষে মিছিল বের করা হয়। মিছিলে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন নেতৃত্ব দেন।একাত্তরের আজকের দিনে ভারত সরকার তার ভূখণ্ডের ওপর দিয়ে সব বিদেশি বিমানের পূর্ব পাকিস্তানে যাতায়াতের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।পশ্চিম পাকিস্তান থেকে বিদেশি বিমানে পূর্ব পাকিস্তানে সৈন্য পরিবহণ বন্ধ করার জন্যই এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়।ভারতের স্বাধীনতাকর্মী জয়প্রকাশ নারায়ণ নয়াদিল্লিতে বলেন, জনসাধারণের গণতান্ত্রিক অধিকারে বিশ্বাসী বিশ্বের প্রতিটি মানুষ ও সরকারের উচিত শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশকে অকুণ্ঠ সমর্থন দেওয়া।

তিনি এক বিবৃতিতে বঙ্গবন্ধুর অসাধারণ নেতৃত্বের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন।এদিন শাসনতন্ত্র প্রণয়নের আগে আওয়ামী লীগ ও পিপলস পার্টির সমন্বয়ে কোয়ালিশন সরকার গঠনসংক্রান্ত পিপিপি চেয়ারম্যান জুলফিকার আলী ভুট্টোর প্রস্তাবের তীব্র সমালোচনা করে পশ্চিম পাকিস্তানের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা পৃথক বিবৃতি দেন।করাচিতে আওয়ামী লীগের সহসভাপতি কাজী ফয়েজ মোহাম্মদ বলেন,গণতন্ত্রের নিয়ম অনুযায়ী সংখ্যাগরিষ্ঠ দল একটি। অতএব সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে, অন্যের কাছে নয়।১৯৭১ সালের এই দিনে শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের আলোচনার পাশাপাশি সারা দেশে আন্দোলন বাঁধভাঙা রূপ নিয়েছিল।রাজপথ ছিল মিছিলে মিছিলে উত্তপ্ত, রাজনৈতিক নেতাকর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষজনও দেশের উদ্ভূত সমস্যার চূড়ান্ত সমাধানে বঙ্গবন্ধুর সর্বশেষ নির্দেশনার অপেক্ষায় ছিলেন।এদিন বঙ্গবন্ধুর নতুন নির্দেশ আসে-এখন থেকে শুল্ক কর, আবগারি কর ও বিক্রয় কর স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানে জমা দেওয়া হবে না। এভাবেই অসহযোগ আন্দোলন তার লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যায়।