ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের টাকা ডাকাতি: উদ্ধারের দাবি ৯ কোটি,পাওয়া গেল প্রায় চার কোটি

- আপডেট সময় : ০১:৩৩:৫৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ মার্চ ২০২৩ ১৪৫ বার পড়া হয়েছে
ডাকাতি হওয়া ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ১১ কোটি ২৫ লাখ টাকার মধ্যে প্রায় ৯ কোটি টাকা নয়,এখন বলা হচ্ছে প্রায় ৪ কোটি টাকা উদ্ধার হয়েছে। এ ছাড়া গতকাল বৃহস্পতিবার এ ঘটনায় আটক সাতজনকে ডাকাত বলা হলেও তাঁদের মধ্যে ছয়জন সিকিউরিটি কোম্পানির কর্মী ও একজন ডাকাতিতে ব্যবহৃত গাড়ির চালক।গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) জানিয়েছিল তারা ধারণা করছে উদ্ধার হওয়া তিনটি ট্রাংক থেকে প্রায় ৯ কোটি টাকা পাওয়া গেছে।তবে তুরাগ থানার পুলিশ আজ শুক্রবার জানায়,গতকাল রাতে তারা উদ্ধার হওয়ার টাকা গণনা করে ৩ কোটি ৮৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা পেয়েছে।এ ছাড়া গতকাল ডিবির পক্ষ থেকে অভিযান চালিয়ে তিনটি ট্রাংক উদ্ধারের কথা বলা হয়।আর আজ বলা হচ্ছে,ডাকাতিতে ব্যবহৃত গাড়ির চালকই ডাকাতেরা চলে যাওয়ার পর ট্রাংকগুলো নিয়ে খিলক্ষেত থানায় যান।গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল সাতটার দিকে রাজধানীর উত্তরায় এ ডাকাতির ঘটনা ঘটে।ডাকাত দলটি মাইক্রোবাসে এসে সিকিউরিটি কোম্পানি মানি প্ল্যান্ট লিংক (প্রাইভেট) লিমিটেডের গাড়ির গতি রোধ করে।এ সময় তাদের হাতে অস্ত্র ছিল না।এরপর তাদের একজন নিজেকে ডিবি পরিচয় দিয়ে গাড়িতে থাকা কর্মীদের চড়থাপ্পড় ও ঘুষি মেরে টাকাভর্তি চারটি ট্রাংক ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়।ওই টাকা মিরপুর ডিওএইচএস থেকে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের সাভারের ইপিজেড বুথে নেওয়া হচ্ছিল।
তুরাগ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শরীফুল ইসলাম আজ শুক্রবার দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন,তিনটি ট্রাংকের মধ্যে একটি ছিল ফাঁকা।আর দুটির মধ্যে একটিতে ছিল অর্ধেক ফাঁকা।সব মিলিয়ে তিনটি ট্রাংকের টাকা গণনা করে ৩ কোটি ৮৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা পাওয়া গেছে।টাকা পরিবহনের দায়িত্বে থাকা মানি প্ল্যান্ট লিংক প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক যশোদা জীবন দেবনাথের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন,ডিবি মাত্র ৩ কোটি ৮৯ লাখ টাকা উদ্ধার করেছে।আমি সে সময় (টাকা গণনার সময়) তুরাগ থানায় উপস্থিত ছিলাম। ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ গতকাল সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলন করে বলেছিলেন,৯ কোটি টাকা উদ্ধার হয়েছে। তাহলে সেই ৯ কোটি টাকার বাকি টাকা গেল কোথায়, এমন প্রশ্ন রাখেন যশোদা।মানি প্ল্যান্ট কোম্পানির কর্মকর্তা যশোদা জীবন আরও বলেন,ডাকাতি হওয়া ওই গাড়িতে মানি প্ল্যান্টের একজন ব্যবস্থাপক,একজন নির্বাহী কর্মকর্তা, একজন সুপারভাইজার, একজন কর্মচারী,দুজন গার্ড ও চালক ছিলেন।তাঁরা ঘটনার পরপর ৯৯৯–এ ফোন করে জানান এবং তুরাগ থানায় রিপোর্ট করতে গাড়ি নিয়ে চলে যান। পরে সন্ধ্যায় ডিবি তাঁদের নিজেদের হেফাজতে নিয়ে নেয়।
গাড়ির নিরাপত্তার বিষয়ে জানতে চাইলে যশোদা জীবন বলেন,সকালে তিনটি গাড়ি ক্যাশ লোডের জন্য বেরিয়েছিল।দ্বিতীয় গাড়িটি দুর্ভাগ্যবশত পথে কারিগরি সমস্যায় পরে।তৃতীয় গাড়িতে দুটি অস্ত্র ছিল।সেটি ওই গাড়ির সঙ্গে দাঁড়ায়।তখন প্রথম গাড়িটি এগিয়ে যায় এবং ছিনতাইয়ের শিকার হয়।ডাকাতিতে ব্যবহৃত গাড়ির চালককে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ডিএমপির অপরাধ বিভাগের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আজ শুক্রবার ঘটনার বিস্তারিত জানান।তাঁদের ভাষ্য,ডাকাতেরা কালো রঙের যে হাইয়েস মাইক্রোবাসটি ব্যবহার করেছে, সেটি ছিল ভাড়া করা।ডাকাতদের টাকা বহনকারী সিকিউরিটি কোম্পানি মানি প্ল্যান্ট লিংক (প্রাইভেট) লিমিটেডের গাড়ি থেকে চারটি ট্রাংক নামিয়ে নিজেদের মাইক্রোবাসে তোলে।এরপর গাড়িচালককে বেঁধে ডাকাত দলের একজন সদস্য মাইক্রোবাসটি চালায়।এ সময় ট্রাংক থেকে বেশ কিছু টাকা বের করে ডাকাতেরা আলাদা করে ব্যাগে রাখে। এরপর তারা মাইক্রোবাসটি নিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে ঘোরাঘুরির পর একপর্যায়ে খিলক্ষেতে অভিজাত হোটেল লা মেরিডিয়ানের পাশের রাস্তায় থামে।সেখানে তারা মাইক্রোবাসের চালককে ছেড়ে দেওয়ার জন্য বাঁধন খোলার সময় চালক চিৎকার দিলে ডাকাতেরা মাইক্রোবাসসহ তিনটি ট্রাংক ফেলে পালিয়ে যায়। পরে মাইক্রোবাসচালক ট্রাংকসহমাইক্রোবাস চালিয়ে আজিমপুরে তাঁর মালিকের কাছে যান।পরে মালিক ও চালক মাইক্রোবাসটি নিয়ে খিলক্ষেত থানায় যান।তখন মাইক্রোবাসের চালক এসব ঘটনা পুলিশকে জানান।সে সময় মানি প্ল্যান্টের যশোদা জীবন দেবনাথ সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
গতকাল ডিএমপির গোয়েন্দা প্রধান যা বলেছিলেনঃবৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় খিলক্ষেত এলাকায় সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে ডিএমপির গোয়েন্দা প্রধান হারুন অর রশীদ বলেছিলেন,আমরা ছিনতাইয়ের কাজে ব্যবহৃত একটি গাড়ি খিলক্ষেত থেকে জব্দ করেছি।গাড়িতে তিনটি ট্রাংকে থাকা প্রায় ৯ কোটি টাকা উদ্ধার করেছি এবং বাকি টাকা উদ্ধারে অভিযান চলছে।এ ঘটনায় সাতজনকে আটক করা হয়েছ।তিনি আরও বলেছিলেন,এটি একটি পরিকল্পিত ঘটনা।আমরা দেখব কেন মানি প্ল্যান্টের কর্মকর্তারা এত সহজে ডাকাতদের টাকা নিতে দিলেন। আমরা কিছু নাম পেয়েছি।আটকদের জিজ্ঞাসাবাদের পর আমরা ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারব।তবে আজ বিকেলে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে হারুন অর রশীদ বলেন,গণনা না করে তাৎক্ষণিকভাবে তিন ট্রাংকে ৯ কোটি টাকা আছে বলে অনুমান করে বলেছিলাম।পরে তুরাগ থানার পুলিশ গণনা করে তিন কোটির বেশি টাকা পেয়েছে।এটাই এখন ফিগার।তিনি বলেন, তুরাগ থানা-পুলিশ ডাকাতি মামলার মূল তদন্ত করছে।আর ডিবি পুলিশ এই মামলার ছায়াতদন্ত শুরু করেছে।ডিবি পুলিশ এখন ডাকাতির সঙ্গে জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তার করে বাকি টাকা উদ্ধারে চেষ্টা চালাচ্ছে।’