ঢাকা ০৫:০২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫, ৭ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা এখনো আক্রমণের মুখে: সম্পাদক পরিষদ হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ট্রাষ্টের মাসবপ্যাপী সেহরি বিতরণ চলমান জাতিসংঘকে শান্তিরক্ষী মিশনে বাংলাদেশি নারীদের সংখ্যা বাড়ানোর আহ্বান ড. ইউনূস শায়েস্তাগঞ্জে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে ১৫টি দোকান পুড়ে চাই কোটি টাকার ক্ষতি চুনারুঘাটে প্রকাশ্য দিবালোকে এক ব্যক্তিকে কুপিয়ে হত্যা গোয়াইনঘাটে টাস্কফোর্সের অভিযান: ১৫ টি নৌকা, ১০ টি শ্যালো মেশিন ধ্বংস ব্যাটিংয়ের পর বোলিংয়েও ব্যর্থ বাংলাদেশ জামায়াতে যোগ দেওয়া নেতাকে ব হি ষ্কা র করলো ছাত্রদল সিলেট ছয় দফা দাবিতে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের আন্দোলন তুষারের খুনি, মূল আসামি পারভেজকে ঢাকা গাজীপুর জেলার কালিগঞ্জ থেকে গ্রেফতার আল-আকসা মসজিদ ভাঙার পরিকল্পনা ইসরাইলিদের হামাসের হামলায় ইসরাইলের ৬ সেনা হতাহত

সিলেটে অবহেলিত রবীন্দ্র স্তম্ভ

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৬:৪৮:৪৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৫ মার্চ ২০২৩ ১১৭ বার পড়া হয়েছে

সিলেটে রাত্রিযাপন, কবিতা লেখা, আতিথ্য গ্রহণসহ বহু স্মৃতি রয়েছে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের। সেই কবির আগমনের শতবার্ষিকীর দিনটি উৎসবের সাথে পালন করা হয় সিলেটে। তখন সিলেটের ‘কিনব্রীজ’ নীচে স্থায়ীভাবে নির্মিত করা হয়েছিলো ম্যুরাল আকৃতির একটি রবীন্দ্রস্তম্ভ। যা এখনো আছে। শুধু নেই বিশ্বকবির প্রতি সম্মান। পুরো স্তম্ভজুড়ে ময়লা- আবর্জনার স্তুপ। স্তম্ভের একপিঠে আবর্জনার ভাগাড়, অন্যপাশে ইচ্ছেমতো সময় পার করছে পথের শিশুরা।

১৯১৯ সালের ৫ নভেম্বর রেলযোগে কবি প্রথম সিলেট আসেন। সঙ্গে ছিলেন পুত্র রথীন্দ্রনাথ ও পুত্রবধূ প্রতিমা দেবী। যখন কবি আসলেন তখনো কিনব্রীজ নির্মিত হয়নি। তাই তিনি পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নৌকাযোগে চাঁদনীঘাট হয়ে শহরে প্রবেশ করেন।

কবি তিন দিন সিলেটে ছিলেন। ছিলেন শহরের নয়া সড়কে টিলার ওপর অবস্থিত প্রেসবাইটেরিয়ান পাদরি টমাস সাহেবের বাংলোয়। থাকাকালীন সময়ে কবি এম.সি কলেজ, ব্রাহ্মমন্দিরে উপাসনা অনুষ্ঠান এবং শহরের পূর্ব প্রান্তে মাছিমপুর মণিপুরি পল্লীতে যান। এছাড়াও তিনি কিছু বাড়িতে আতিথ্য গ্রহণ করেন।
সেই আসা, থাকা, চলে যাওয়া এবং সিলেটের অনুপম সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়ে কবিতা লেখাসহ আরো কত স্মৃতি। সেই রবীন্দ্রনাথের প্রতি সবসময় অন্যরকম শ্রদ্ধাশীল সিলেটের মানুষ। সেই শ্রদ্ধারই নিদর্শন সিলেট আগমনের শতবর্ষ উৎসব এবং স্তম্ভ নির্মাণ। আর সেই আয়োজন করে সিলেট সিটি কর্পোরেশন।
২০১৯ সালের ৫ নভেম্বর, আগমনের শতবার্ষিকীর মূল উৎসব পালন করা হয় নগরীর কিনব্রীজের নিচে। উৎসব ঘিরে তিনদিনব্যাপী শহরজুড়ে ছিলো নানা আয়োজন। যা মুগ্ধ করেছে রবীন্দ্রপ্রেমিদের। সেই উৎসবের অংশ হিসেবে সত্যজিৎ রায়ের আঁকা চিত্র অবলম্বনে মুর‌্যাল আকারের একটি দৃষ্টিনন্দন রবীন্দ্রস্তম্ভ তৈরী করা হয়। সেটি স্থাপন হয় ক্বীনব্রীজের নিচেই। দিনের বেলাতেও যেখানে খোলামেলা চলে নানা ধরণের অপরাধ কর্মকান্ড, থাকে সারাক্ষণ প্রস্রাবের দুর্গন্ধ। আর সন্ধ্যার পরের দৃশ্য আরো অবর্ণনীয়। যা সম্পর্কে সিলেটের সাধারণ মানুষও অবগত। তবে স্তম্ভের শিল্পমান নিয়ে কারো কোনো প্রশ্ন নেই। অভিযোগ শুধু স্থাপনের জায়গা নির্ধারণ নিয়ে।লিডিং ইউনিভার্সিটির স্থপতি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান রাজন দাশ জানান, ‘রবীন্দ্রনাথ আমাদের অনুপ্রেরণার উৎস। বাঙালীর সাংস্কৃতিক রুচি নির্মাণে যার রয়েছে বিশাল ভূমিকা। আর সেই মানুষকে সংকীর্ণ, অকার্যকর পরিসরে স্থাপন করা হয়েছে। এটি কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায়না। নতুন প্রজন্ম এখান থেকে কি শিখবে-এমন প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, রিকাবীবাজার নজরুল চত্বরও একইভাবে অবহেলিত। বলা যায় বারো মাসই সেটি পোস্টারে ঢাকা থাকে, কুকুর ঘুমায়। ’
কিনব্রীজের ঠিক মধ্যবর্তী স্থানের পাটাতনের নিচে স্তম্ভটির অবস্থান। যে জায়গাটি সবসময় রিকসাচালক, ভ্যানচালক, দিনমজুররা ব্যবহার করেন। ক্লান্তি অনুভব করলে তারা এই জায়গায় জড়ো হন, বিশ্রাম নেন। রাতের বেলার আরেক চিত্র। বলা যায়, সন্ধ্যার পর থেকেই পথশিশু, ভবঘুরে মানুষ স্তম্ভের উপর বসে থাকে। রাত হলে তারা সেখানে ঘুমিয়ে পড়ে। তবে স্তম্ভের দুইপাশকেই তারা ব্যবহার করছে। একপাশে শুধু রাতে ঘুম আর দিনে আড্ডা, অন্যপাশকে ময়লা আবর্জনার বাঘাড় বানিয়ে দিনের বেলাতেও ঘুমিয়ে থাকে তারা।
স্থানীয় এক চা বিক্রেতা বলেন, ‘এই জায়গায় উনার মতো (রবীন্দ্রনাথ) মানুষকে রাখা ঠিক হয়নি, যেখানে রবীন্দ্রনাথকে দাঁড়িয়ে দেখার মতো পরিবেশও নেই। এছাড়া এখানে মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের মাদক সেবন করতে দেখা যায়। দিনেরবেলাতেও অনেক রিকসা চালক বসে গাঁজা সেবন করেন।’

রোজ সকালে কালিঘাট কিংবা ক্বিনব্রীজ দিয়ে যে সকল কোমলমতি শিশুরা সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, অগ্রগামী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কিংবা অন্যসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাতায়াত করে তাদের মনেও বিষয়টি দাগ কাটছে। কারণ, এই শিশুরা প্রতিদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যার লেখা জাতীয় সংগীত ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’ গাইছে, অন্যদিকে সেই রবীন্দ্রনাথের প্রতি অবহেলার দৃশ্যটিও যাওয়া-আসার পথে তাদেরকে অবলোকন করতে হচ্ছে।

গত বৃহস্পতিবার সেখানে গেলে কথা হয় পাইলট স্কুলের একজন ক্ষুদে শিক্ষার্থীর সাথে। বিষয়টি নিয়ে কথা হলে সুমন নামে সেই শিক্ষার্থী জানায়, ‘আমার খুব ভালো লাগে প্রতিদিন স্কুলে যাবার সময় দেখি রবীন্দ্রনাথকে। তবে রবীন্দ্রনাথের কাছে যেতে ভয় লাগে, বেশী মানুষ থাকে সবসময়, সবাই সিগারেট খায়।’
রবীন্দ্রনাথের স্তম্ভটির ডিজাইন করেন প্রতিশ্রুতিশীল ডিজাইনার অরূপ বাউল। কথা হলে তিনিও স্থাপনের জায়গা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন, ‘বলেন আমি শুধু ডিজাইন করে দিয়েছি, বাস্তবায়ন করেছে সিলেট সিটি কর্পোরেশন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অন্যস্থানে স্থাপন করা হলে সুন্দর হতো।’
শতবর্ষ উদযাপন কমিটির সদস্য, নাট্যব্যক্তিত্ব, লেখক শামসুল আলম সেলিম এর সাথে কথা হলে তিনি স্থান নির্ধারণ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা মেয়রের কাছে দাবি জানিয়েছি স্তম্ভটি সারদা হলের সম্মুখে স্থাপন করার জন্য।’

এ প্রসঙ্গে কথা হলে মেট্টোপলিটন ইউনিভার্সিটির ডেপুটি রেজিস্ট্রার, বিশিষ্ট রবীন্দ্র গবেষক মিহির কান্তি চৌধুরী জানান, যেখানে স্থাপন করা হয়েছে সেই জায়গাটি বিশ্বকবির জন্য একেবারেই বেমানান। কোনো পর্যটকও সেদিকে যাবে না কখনো। তার চেয়ে উত্তম ছিলো চৌহাট্টা এলাকা। সিলেট আসার পর এর আশপাশ এলাকায় রবীন্দ্রনাথ অবস্থানও করেছিলেন। বিভিন্ন দেশের পর্যটক, লেখক সিলেট আসলে অবশ্যই সেদিকে যেতে হয়। সেই জায়গায় গণমানুষের বিচরণ থাকে সবসময়।’
সিলেটে রবীন্দ্রনাথ : শতবর্ষ স্মরণোৎসব উদযাপন পর্ষদের সদস্য সচিব ছিলেন সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। কথা হলে তিনি জানান, ‘সবার সম্মতিতে কিনব্রীজের নিচে স্তম্ভটি স্থাপন করা হয়েছে। এখন সবাই চাইলে সেটি অন্যত্র সরাতে আমার কোনো আপত্তি নেই।’

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

সিলেটে অবহেলিত রবীন্দ্র স্তম্ভ

আপডেট সময় : ০৬:৪৮:৪৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৫ মার্চ ২০২৩

সিলেটে রাত্রিযাপন, কবিতা লেখা, আতিথ্য গ্রহণসহ বহু স্মৃতি রয়েছে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের। সেই কবির আগমনের শতবার্ষিকীর দিনটি উৎসবের সাথে পালন করা হয় সিলেটে। তখন সিলেটের ‘কিনব্রীজ’ নীচে স্থায়ীভাবে নির্মিত করা হয়েছিলো ম্যুরাল আকৃতির একটি রবীন্দ্রস্তম্ভ। যা এখনো আছে। শুধু নেই বিশ্বকবির প্রতি সম্মান। পুরো স্তম্ভজুড়ে ময়লা- আবর্জনার স্তুপ। স্তম্ভের একপিঠে আবর্জনার ভাগাড়, অন্যপাশে ইচ্ছেমতো সময় পার করছে পথের শিশুরা।

১৯১৯ সালের ৫ নভেম্বর রেলযোগে কবি প্রথম সিলেট আসেন। সঙ্গে ছিলেন পুত্র রথীন্দ্রনাথ ও পুত্রবধূ প্রতিমা দেবী। যখন কবি আসলেন তখনো কিনব্রীজ নির্মিত হয়নি। তাই তিনি পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নৌকাযোগে চাঁদনীঘাট হয়ে শহরে প্রবেশ করেন।

কবি তিন দিন সিলেটে ছিলেন। ছিলেন শহরের নয়া সড়কে টিলার ওপর অবস্থিত প্রেসবাইটেরিয়ান পাদরি টমাস সাহেবের বাংলোয়। থাকাকালীন সময়ে কবি এম.সি কলেজ, ব্রাহ্মমন্দিরে উপাসনা অনুষ্ঠান এবং শহরের পূর্ব প্রান্তে মাছিমপুর মণিপুরি পল্লীতে যান। এছাড়াও তিনি কিছু বাড়িতে আতিথ্য গ্রহণ করেন।
সেই আসা, থাকা, চলে যাওয়া এবং সিলেটের অনুপম সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়ে কবিতা লেখাসহ আরো কত স্মৃতি। সেই রবীন্দ্রনাথের প্রতি সবসময় অন্যরকম শ্রদ্ধাশীল সিলেটের মানুষ। সেই শ্রদ্ধারই নিদর্শন সিলেট আগমনের শতবর্ষ উৎসব এবং স্তম্ভ নির্মাণ। আর সেই আয়োজন করে সিলেট সিটি কর্পোরেশন।
২০১৯ সালের ৫ নভেম্বর, আগমনের শতবার্ষিকীর মূল উৎসব পালন করা হয় নগরীর কিনব্রীজের নিচে। উৎসব ঘিরে তিনদিনব্যাপী শহরজুড়ে ছিলো নানা আয়োজন। যা মুগ্ধ করেছে রবীন্দ্রপ্রেমিদের। সেই উৎসবের অংশ হিসেবে সত্যজিৎ রায়ের আঁকা চিত্র অবলম্বনে মুর‌্যাল আকারের একটি দৃষ্টিনন্দন রবীন্দ্রস্তম্ভ তৈরী করা হয়। সেটি স্থাপন হয় ক্বীনব্রীজের নিচেই। দিনের বেলাতেও যেখানে খোলামেলা চলে নানা ধরণের অপরাধ কর্মকান্ড, থাকে সারাক্ষণ প্রস্রাবের দুর্গন্ধ। আর সন্ধ্যার পরের দৃশ্য আরো অবর্ণনীয়। যা সম্পর্কে সিলেটের সাধারণ মানুষও অবগত। তবে স্তম্ভের শিল্পমান নিয়ে কারো কোনো প্রশ্ন নেই। অভিযোগ শুধু স্থাপনের জায়গা নির্ধারণ নিয়ে।লিডিং ইউনিভার্সিটির স্থপতি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান রাজন দাশ জানান, ‘রবীন্দ্রনাথ আমাদের অনুপ্রেরণার উৎস। বাঙালীর সাংস্কৃতিক রুচি নির্মাণে যার রয়েছে বিশাল ভূমিকা। আর সেই মানুষকে সংকীর্ণ, অকার্যকর পরিসরে স্থাপন করা হয়েছে। এটি কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায়না। নতুন প্রজন্ম এখান থেকে কি শিখবে-এমন প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, রিকাবীবাজার নজরুল চত্বরও একইভাবে অবহেলিত। বলা যায় বারো মাসই সেটি পোস্টারে ঢাকা থাকে, কুকুর ঘুমায়। ’
কিনব্রীজের ঠিক মধ্যবর্তী স্থানের পাটাতনের নিচে স্তম্ভটির অবস্থান। যে জায়গাটি সবসময় রিকসাচালক, ভ্যানচালক, দিনমজুররা ব্যবহার করেন। ক্লান্তি অনুভব করলে তারা এই জায়গায় জড়ো হন, বিশ্রাম নেন। রাতের বেলার আরেক চিত্র। বলা যায়, সন্ধ্যার পর থেকেই পথশিশু, ভবঘুরে মানুষ স্তম্ভের উপর বসে থাকে। রাত হলে তারা সেখানে ঘুমিয়ে পড়ে। তবে স্তম্ভের দুইপাশকেই তারা ব্যবহার করছে। একপাশে শুধু রাতে ঘুম আর দিনে আড্ডা, অন্যপাশকে ময়লা আবর্জনার বাঘাড় বানিয়ে দিনের বেলাতেও ঘুমিয়ে থাকে তারা।
স্থানীয় এক চা বিক্রেতা বলেন, ‘এই জায়গায় উনার মতো (রবীন্দ্রনাথ) মানুষকে রাখা ঠিক হয়নি, যেখানে রবীন্দ্রনাথকে দাঁড়িয়ে দেখার মতো পরিবেশও নেই। এছাড়া এখানে মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের মাদক সেবন করতে দেখা যায়। দিনেরবেলাতেও অনেক রিকসা চালক বসে গাঁজা সেবন করেন।’

রোজ সকালে কালিঘাট কিংবা ক্বিনব্রীজ দিয়ে যে সকল কোমলমতি শিশুরা সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, অগ্রগামী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কিংবা অন্যসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাতায়াত করে তাদের মনেও বিষয়টি দাগ কাটছে। কারণ, এই শিশুরা প্রতিদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যার লেখা জাতীয় সংগীত ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’ গাইছে, অন্যদিকে সেই রবীন্দ্রনাথের প্রতি অবহেলার দৃশ্যটিও যাওয়া-আসার পথে তাদেরকে অবলোকন করতে হচ্ছে।

গত বৃহস্পতিবার সেখানে গেলে কথা হয় পাইলট স্কুলের একজন ক্ষুদে শিক্ষার্থীর সাথে। বিষয়টি নিয়ে কথা হলে সুমন নামে সেই শিক্ষার্থী জানায়, ‘আমার খুব ভালো লাগে প্রতিদিন স্কুলে যাবার সময় দেখি রবীন্দ্রনাথকে। তবে রবীন্দ্রনাথের কাছে যেতে ভয় লাগে, বেশী মানুষ থাকে সবসময়, সবাই সিগারেট খায়।’
রবীন্দ্রনাথের স্তম্ভটির ডিজাইন করেন প্রতিশ্রুতিশীল ডিজাইনার অরূপ বাউল। কথা হলে তিনিও স্থাপনের জায়গা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন, ‘বলেন আমি শুধু ডিজাইন করে দিয়েছি, বাস্তবায়ন করেছে সিলেট সিটি কর্পোরেশন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অন্যস্থানে স্থাপন করা হলে সুন্দর হতো।’
শতবর্ষ উদযাপন কমিটির সদস্য, নাট্যব্যক্তিত্ব, লেখক শামসুল আলম সেলিম এর সাথে কথা হলে তিনি স্থান নির্ধারণ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা মেয়রের কাছে দাবি জানিয়েছি স্তম্ভটি সারদা হলের সম্মুখে স্থাপন করার জন্য।’

এ প্রসঙ্গে কথা হলে মেট্টোপলিটন ইউনিভার্সিটির ডেপুটি রেজিস্ট্রার, বিশিষ্ট রবীন্দ্র গবেষক মিহির কান্তি চৌধুরী জানান, যেখানে স্থাপন করা হয়েছে সেই জায়গাটি বিশ্বকবির জন্য একেবারেই বেমানান। কোনো পর্যটকও সেদিকে যাবে না কখনো। তার চেয়ে উত্তম ছিলো চৌহাট্টা এলাকা। সিলেট আসার পর এর আশপাশ এলাকায় রবীন্দ্রনাথ অবস্থানও করেছিলেন। বিভিন্ন দেশের পর্যটক, লেখক সিলেট আসলে অবশ্যই সেদিকে যেতে হয়। সেই জায়গায় গণমানুষের বিচরণ থাকে সবসময়।’
সিলেটে রবীন্দ্রনাথ : শতবর্ষ স্মরণোৎসব উদযাপন পর্ষদের সদস্য সচিব ছিলেন সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। কথা হলে তিনি জানান, ‘সবার সম্মতিতে কিনব্রীজের নিচে স্তম্ভটি স্থাপন করা হয়েছে। এখন সবাই চাইলে সেটি অন্যত্র সরাতে আমার কোনো আপত্তি নেই।’