অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে কাজ করতে চায় চীন, যা বললেন ড. ইউনূস

- আপডেট সময় : ০৪:৩৮:২৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১০৯ বার পড়া হয়েছে
ভিউ নিউজ ৭১ ডেস্ক :
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে গভীরভাবে কাজ করতে চায় চীন। এবিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের ‘নতুন একটি অধ্যায়’ খুলতে চাই। এর মাধ্যমে অতীতের মতো সব উন্নয়ন কাজের অংশীদার হবে চীন।
বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) স্থানীয় সময় বিকালে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সাইডলাইনে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সৌজন্য সাক্ষাৎ হয়। এ সময় তিনি এসব কথা বলেন।
চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বলেন, চীন-বাংলাদেশে সোলার প্যানেলে বিনিয়োগ এবং ঢাকার সঙ্গে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও গভীর করতে চায়।
প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বলেন, চীনা সৌর কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে আরও বড় আকারে বিনিয়োগ করতে পারে, যা অনেক ধনী দেশের কাছে পছন্দের বাজারে প্রবেশাধিকার ভোগ করে।
তিনি অন্যান্য চীনা নির্মাতাদেরও বাংলাদেশে তাদের কারখানা স্থাপন করার আহ্বান জানান।
প্রধান উপদেষ্টা চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এবং দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের ‘একটি নতুন অধ্যায়’ খোলার ওপর জোর দেন। তিনি উভয় দেশের কোম্পানির মধ্যে প্রযুক্তিগত সহযোগিতা বাড়ানোরও আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, আমরা চাইনিজ কোম্পানিগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা করতে পছন্দ করব। আমাদের একসঙ্গে কাজ করার অনেক সুযোগ আছে।
তিনি আরও বলেন, চাইনিজ রেড ক্রস জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের সময় গুরুতর আহত ছাত্র ও মানুষদের চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকদের একটি দল পাঠিয়েছে। ওয়াং ই আরও বলেন, চীন বাংলাদেশ থেকে আরও বেশি শিক্ষার্থীকে স্বাগত জানাবে।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস চীনের এমন অবস্থানের জন্য ধন্যবাদ জানান। একইসঙ্গে কয়েক মিলিয়ন মানুষকে দারিদ্র্য থেকে বের করে আনার জন্য আশ্চর্যজনক চীনা প্রচেষ্টারও প্রশংসা করেছেন।
অন্তর্বর্তী সরকারকে সহায়তা দিতে প্রস্তুত জাপান: রাষ্ট্রদূত

বাংলাদেশের চলমান ক্রান্তিকালীন সময়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রয়োজনে সহায়তা দিতে প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছেন জাপানের রাষ্ট্রদূত আইডব্লিউএএমএ কিমিনোরি।
বুধবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে অ্যাসোসিয়েশন অব ফর্মার অ্যাম্বাসেডরস (এওএফএ) আয়োজিত ‘বাংলাদেশ-জাপান সম্পর্ক’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তৃতাকালে এ সহায়তার কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, বর্তমান কাঠামোর অধীনে কী প্রয়োজন, তা মূল্যায়ন করতে আমরা নতুন সরকারের অংশীজন ও বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে যুক্ত হতে প্রস্তুত। আমাদের অবস্থান হলো- নতুন সরকারের চাহিদা ও অনুরোধে সাড়া দেওয়া এবং সে অনুযায়ী সহযোগিতার প্রস্তাব দেওয়া।
এ সময় কিমিনোরি ব্যবসা, প্রতিরক্ষা ও দুদেশের জনগণের মধ্যে যোগাযোগসহ গুরুত্বপূর্ণ খাতে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারের লক্ষ্যে সহযোগিতার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে বাংলাদেশকে তার সংস্কার উদ্যোগে সহায়তা করার জন্য জাপানের প্রতিশ্রুতির প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, জাপান তার নিজস্ব সমাজ এবং বাংলাদেশে পরিচালিত জাপানি ব্যবসার স্বার্থের সঙ্গে তার প্রচেষ্টাকে একত্রিত করবে।
এওএফএ সভাপতি রাষ্ট্রদূত আবদুল্লাহ আল হাসানের সভাপতিত্বে সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন রাষ্ট্রদূত গাউসুল আজম ও রাষ্ট্রদূত শাহেদ আক্তার। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- রাষ্ট্রদূত ফারুক সোবহান, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক নাইলুর নাহার।
রাষ্ট্রদূত কিমিনোরি বলেন, ৩ শতাধিক জাপানি কোম্পানি বর্তমানে বাংলাদেশে কাজ করছে। এ দেশে ক্রান্তিকালীন সময়ে নিরাপত্তা উদ্বেগ সত্ত্বেও এই কোম্পানিগুলোর কোনোটিই প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। বাংলাদেশকে একটি সমৃদ্ধশালী সমাজের পথে এগিয়ে যাওয়ার জন্য জাপানসহ আরও বিদেশি বিনিয়োগের প্রয়োজন। আর এটি অর্জনের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যবসার পরিবেশ উন্নত করতে হবে।
আমলাতান্ত্রিক জটিলতাকে বিনিয়োগ আকৃষ্টের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য বাধা হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, টোকিও চলমান পাবলিক-প্রাইভেট জয়েন্ট ইকোনমিক ডায়ালগের (পিপিইডি) মাধ্যমে বাণিজ্য সম্পর্ক ও বিনিয়োগ বাড়াতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোর লক্ষ্যে অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তির (ইপিএ) সঙ্গে চলমান আলোচনার কথাও উল্লেখ করেন।
বাংলাদেশ-জাপান সম্পর্কের অন্যতম স্তম্ভ হিসেবে দুদেশের জনগণের মধ্যে যোগাযোগকে চিহ্নিত করা হয়েছে উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত কিমিনোরি বলেন, জাপান শিক্ষাগত ও সাংস্কৃতিক বিনিময়ের পাশাপাশি ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজে সফর বিনিময়ের মতো উদ্যোগের মাধ্যমে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
অনুষ্ঠানে জাপান এক্সটার্নাল ট্রেড অর্গানাইজেশনের (জেট্রো) কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ ইউজি আন্দোও বক্তৃতা করেন। তিনি জাপানি কোম্পানিগুলোকে বাংলাদেশের বাজার অন্বেষণ ও মূল্যায়নের জন্য প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি অন্তর্বর্তী সরকারকে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা হ্রাস, শাসনব্যবস্থার উন্নতি ও দুর্নীতির মতো সমস্যাগুলো মোকাবিলার দিকে মনোনিবেশ করার আহ্বান জানান, যা আরও বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
আন্দো বলেন, আরও বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে বাংলাদেশের ব্যবসার পরিবেশ পুনঃস্থাপনের এটাই উপযুক্ত সময়। বাংলাদেশে বর্তমানে ৪৫টি মন্ত্রণালয় রয়েছে। বাংলাদেশ সরকারি কাঠামোকে আরও বর্ধিত ও গতিশীল করতে পারে।