ইসরাইলের বোমায় ২৪ ঘণ্টায় ১৮২ শিশুসহ নিহত ৪৩৬ জন

- আপডেট সময় : ০৪:৫৫:১০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৩ ৭৬ বার পড়া হয়েছে
অনলাইন ডেস্ক: অনলাইন সংস্করণ
অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের আগ্রাসন থামানোর যেন কেউ নেই।ভয়াবহ মানবিক সংকটের মধ্যেও হামলার ১৭তম দিনে বোমাবর্ষণ আরও তীব্র করেছে ইসরাইল। তাদের এ নির্মম হামলায় ২৪ ঘণ্টায় প্রাণ হারিয়েছেন ১৮২ শিশুসহ ৪৩৬ ফিলিস্তিনি।এদিকে গাজার স্থিতিশীলতার লক্ষ্যে কানাডা, জার্মানি, যুক্তরাজ্য, ইতালি এবং ফরাসি নেতার সঙ্গে কথা বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এর পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র স্থল হামলা বিলম্বিত করতে ইসরাইলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। খবর আলজাজিরা, বিবিসি, রয়টার্স, স্কাই নিউজের।
ইসরাইলের অধিকৃত ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকা রণক্ষেত্র পরিণত করেছে নেতানিয়াহুর বিমানবাহিনী। এই বর্বরতার বিরুদ্ধে একদিকে আরব দুনিয়ার প্রতিবাদ, অন্যদিকে বিক্ষোভ হলেও তাতে পাত্তা দিচ্ছে না ইসরাইলের প্রশাসন।তারা বরং ঘোষণা দিয়ে গাজা ভূখণ্ডে বোমা হামলার মাত্রা কয়েকগুণ বাড়িয়েছে। রোববার রাতেই তারা ৩২০টি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে বলে সেনাবাহিনী জানিয়েছে। এ হামলার কারণে গাজার চারদিকে কেবল ধ্বংসযজ্ঞ আর বাতাসে লাশের গন্ধ। বিমান হামলায় নিহতদের অধিকাংশই নারী, শিশুসহ সাধারণ ফিলিস্তিনি।
ফিলিস্তিনের স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোয় বলা হচ্ছে, ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের হামলার পর থেকে রোববারের বোমা হামলার মাত্রা ছিল সবচেয়ে জোরালো। গাজার বাসিন্দা ২১ বছরের কলেজছাত্র তালা হারজাল্লাহ হামলার ভয়াবহতা সম্পর্কে বলেন, রোববার রাতের ভয়াবহতা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। আমরা আক্ষরিক অর্থেই ভয়ে থরথর করে কাঁপছিলাম। আমরা বুঝতে পারছিলাম না এ যাত্রা বেঁচে যাব কি না। প্রতিমুহূর্তেই মৃত্যু যেন আমাদের গ্রাস করছিল। সারা রাত আমরা নামাজ পড়ে কাটিয়েছি। দোয়া করেছি আল্লাহ যেন আমাদের বাঁচিয়ে রাখেন।
ফিলিস্তিনি বার্তা সংস্থা ওয়াফা জানিয়েছে, কোনো সতর্কবার্তা না দিয়েই বেসামরিক স্থাপনায় বোমাবর্ষণ করা হচ্ছে। ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের আবাসিক এলাকায় কমপক্ষে ২৫টি ইসরাইলি বিমান হামলা রেকর্ড করা হয়েছে।গাজায় তুমুল হামলা চালানোর পাশাপাশি পশ্চিম তীরে নাবলুস,তুলকারম এবং জেনিনে হামলা চালানোর সময় ফিলিস্তিনি ও ইসরাইলি বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে।স্পেক্টেটর ইনডেস্ক সামাজিক মাধ্যম এক্সে এক পোস্টে জানিয়েছে, কয়েক ঘণ্টা ধরে গাজায় নিরবচ্ছিন্ন বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। গাজার আলশিফা, আল কুদস এবং ইন্দোনেশিয়ান হাসপাতালের কাছে বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে। জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে বিমান হামলা চালিয়ে একটি আবাসিক ভবন গুঁড়িয়ে দিয়েছে ইসরাইল। বিধ্বস্ত ভবন থেকে ৩০ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
তাদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো অনেকে আটকা পড়ে আছেন। রোববার গভীর রাতে জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরের আল-শুহাদা এলাকার ওই ভবনে বিমান হামলা চালানো হয়। এছাড়া দক্ষিণ গাজার রাফাহ এলাকায় একটি আবাসিক ভবনে ইসরাইলের বিমান হামলায় নারী,শিশুসহ কমপক্ষে ১৮ জন নিহত হয়েছেন।ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রোববার রাতভর ইসরাইলি বাহিনীর তীব্র বোমা হামলায় এক রাতেই ১৮২ শিশুসহ ৪৩৬ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এ অবস্থায় গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় রক্তের তীব্র সংকটের কারণে হাসপাতালে রক্তদানের আহ্বান জানিয়েছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরাইলি বাহিনীর বোমা হামলায় ১৭ দিনে ২০৫৫ শিশু এবং ১১১৯ জন নারীসহ কমপক্ষে ৪ হাজার ৮৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১৫ হাজার ২৭৩ জন। ইসরাইলের এ অব্যাহত হামলা ও জ্বালানি সংকটে ১২টি হাসপাতাল এবং ৩২টি স্বাস্থ্যকেন্দ্র সেবাদান বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে। অন্যদিকে,৭ অক্টোবর ইসরাইলের দক্ষিণাঞ্চলে অতর্কিত রকেট নিক্ষেপের কারণে এখন পর্যন্ত ইসরাইলে ১ হাজার ৪০৫ ব্যক্তি নিহত হন।আহত হন ৫ হাজার ৪৩১ জন।এছাড়া ইসরাইল থেকে অন্তত ২২২ ব্যক্তিকে গাজায় নিয়ে জিম্মি করে রেখেছে হামাসসহ গাজার কয়েকটি সশস্ত্র গোষ্ঠী।
এদিকে মিসরের রেড ক্রিসেন্ট জানিয়েছে, রাফাহ সীমান্ত দিয়ে তৃতীয় দফা ত্রাণ সোমবার গাজায় পাঠানো হয়েছে। ইনস্টাগ্রামের আরেক পোস্টে এ তথ্য জানিয়ে রেডক্রস বলছে, এ ত্রাণের মধ্যে চিকিৎসা সরঞ্জামসহ প্রয়োজনীয় ত্রাণ রয়েছে। তবে তৃতীয় দফায় ঠিক কতটি ট্রাক ত্রাণ নিয়ে গেছে, সেটা জানায়নি।এদিকে ইসরাইল-হামাস যুদ্ধ নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। রোববার ভার্চুয়াল বৈঠক শেষে এক যৌথ বিবৃতিতে নেতারা ইসরাইলের প্রতিরক্ষার অধিকারের প্রতি সমর্থন জানালেও আন্তর্জাতিক মানবিক আইন ও বেসামরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন।
হোয়াইট হাউজ জানিয়েছে, বাইডেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্র–ডো, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাত্রেঁদ্ধা, জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া ম্যালোনি এবং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের সঙ্গে কথা বলেন। তাদের সঙ্গে বৈঠকের আগে তিনি ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে ফোনালাপ করেন।যৌথ বিবৃতিতে নেতারা ইসরাইলের প্রতি তাদের সমর্থন এবং সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে তাদের আÍরক্ষার অধিকারের বিষয়টি পুনর্ব্যক্ত করেন। একই সঙ্গে তারা বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষাসহ আন্তর্জাতিক মানবিক আইন মেনে চলারও আহ্বান জানিয়েছেন। নেতারা ইসরাইল-হামাস যুদ্ধে আটকে পড়া তাদের নাগরিক বিশেষ করে যারা গাজা ছাড়তে ইচ্ছুক, তাদের নিয়ে আলোচনা করেন। এছাড়া তারা সংঘাত ছড়িয়ে না পড়া এবং মধ্যপ্রাচ্যে স্থিতিশীলতা বজায় রাখার স্বার্থে নিবিড় কূটনৈতিক সমন্বয়ের বিষয়ে অঙ্গীকার করেন।
গাজায় স্থল অভিযান পেছানোর পরামর্শ : মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ইসরাইলকে গাজায় পরিকল্পিত স্থল অভিযান পিছিয়ে দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। রোববার একাধিক কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে নিউইয়র্ক টাইমস বলেছে, গাজায় হামাসের হাতে আটক জিম্মিদের মুক্তি এবং উপত্যকায় জীবন রক্ষাকারী ত্রাণের প্রবেশের সুযোগ রাখতে এই পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। চার ইসরাইলি প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, একাধিকবার স্থল অভিযান পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে এর কারণ সম্পর্কে তারা অবগত নন।অভিযান মাসের পর মাস চলতে পারে : ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োয়াভ গ্যালান্ট বলেছেন, গাজায় চলমান সামরিক অভিযান শেষ হতে এক, দুই কিংবা তিন মাস লাগতে পারে, কিন্তু এটি শেষ হওয়ার পর হামাস বলতে কিছু থাকবে না। ইসরাইলের বিমানবাহিনীর অপারেশন্স কমান্ড এবং কন্ট্রোল সেন্টারে হামলা পরিচালনার বিষয়ে ব্রিফিংয়ের পর তিনি বলেন, গাজায় এটাই হবে আমাদের শেষ অভিযান। কারণ খুবই সহজ। অভিযান শেষ হওয়ার পর হামাস বলে কিছু থাকবে না।