ঢাকা ১১:৩৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ ২০২৫, ১১ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা এখনো আক্রমণের মুখে: সম্পাদক পরিষদ হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ট্রাষ্টের মাসবপ্যাপী সেহরি বিতরণ চলমান সীমান্তবর্তী এলাকায় বিজিবি’র জনসচেতনামূলক সভা অনুষ্ঠিত জেলরোড থেকে আক্তার হোসেন গ্রেফতার মাহে রামাদ্বান উপলক্ষে অসহায় ও হতদরিদ্রদের মধ্যে ফুড প্যাক বিতরণ এনসিপি’র শ্রমিক উইং এর কেন্দ্রীয় সংগঠক হলেন সিলেটের শিব্বির আহমদ পথশিশুদের নিয়ে ইউনিস্যাবের ঈদ উৎসব-২০২৫ উদ্যাপন তিন খানকে নিয়ে আসছে সিনেমা আমার বয়স নিয়ে নায়িকার সমস্যা না হলে আপনার কেন সমস্যা: সালমান সকালে খালি পেটে পানি পান করলে কী হয় শরীরে? মানসিক অবসাদ কাটাতে রাতে যা করবেন গাজীপুরে আইজিপি

ফিলিস্তিনের গাজায় হাসপাতালে ইসরায়েলি বিমান হামলায় নারী–শিশুসহ ৫০০ জনের বেশি নিহত

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১২:২৯:১১ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৩ ৬২ বার পড়া হয়েছে

দ্য গার্ডিয়ান

ফিলিস্তিনের গাজায় হাসপাতালে গতকাল মঙ্গলবার নির্বিচার ইসরায়েলি বিমান হামলায় নারী–শিশুসহ ৫০০ জনের বেশি নিহত হয়েছেন। ২০০৭ সালে গাজায় হামাস নির্বাচিত হওয়ার পর ইসরায়েলের সঙ্গে তাদের পাঁচ দফা যুদ্ধ হয়েছে। কিন্তু তখন থেকে অবরুদ্ধ গাজার কোনো হাসপাতালে কখনো এতটা ভয়াবহ হামলা চালায়নি ইসরায়েল।গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, গতকাল রাতে আল–আহলি আল–আরবি হাসপাতালে হামলায় অন্তত ৫০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।ইসরায়েল–ফিলিস্তিন সংঘাত শুরুর ১১ দিন পর এমন নৃশংস হামলা চালানো হয়েছে। ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলের অভ্যন্তরে হামলা চালানোর পর ইহুদি রাষ্ট্রটি গাজার ওপর টানা নির্বিচারে বোমা ও বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের অব্যাহত হামলার কারণে গাজায় বেসামরিক নাগরিকদের আশ্রয় নেওয়ার মতো কোনো নিরাপদ জায়গা নেই।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ইসরায়েল সফরের ঠিক আগের রাতে হাসপাতালে নৃশংস এই হামলার ঘটনা ঘটল।এ ঘটনা গাজার বাইরে যুদ্ধ ছড়িয়ে না পড়ার মার্কিন উদ্যোগকে জটিল করে তুলতে পারে।ইসরায়েলি বাহিনীর বিরুদ্ধে এই হামলার অভিযোগ উঠলেও উল্টো তারা এ হামলাকে হামাসের ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করছে। তারা দাবি করেছে, হামাসের ব্যর্থ রকেট হামলায় হাসপাতালে ওই হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। অবশ্য পরে আবার ইসলামিক জিহাদের ওপর দোষ চাপিয়েছে ইসরায়েল। ইসলামিক জিহাদ ইসরায়েলের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, এই মাত্রায় হামলা চালানোর মতো ক্ষমতা তাদের নেই। ইসরায়েলই এই হামলার জন্য দায়ী।

আল–জাজিরায় সম্প্রচার করা ভিডিওতে দেখা যায়, বহুতল হাসপাতাল ভবন থেকে গাঢ় ধোঁয়ার কুণ্ডলী উঠছে। হাসপাতাল ও এর আশপাশে নারী–শিশুসহ মানুষের নিথর দেহ ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছে।ভবনের চারপাশে ধ্বংসস্তূপ।অ্যাংলিকান গির্জার মালিকানাধীন এই হাসপাতালে কোনো পূর্বসতর্কতা ছাড়াই হামলা চালানো হয়েছে। এর আগে গত শনিবার ওই হাসপাতালে রকেট আঘাত হেনেছিল, যাতে চার স্বাস্থকর্মী আহত হন।গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে হাসপাতালে হামলা চালানো হয়। এ সময় হাসপাতালে ইসরায়েলি হামলায় আহত প্রচুর রোগী চিকিৎসার জন্য ভর্তি ছিলেন। ইসরায়েলি হামলার ভয়ে প্রচুর বেসামরিক নাগরিক ওই হাসপাতালে আশ্রয় নিয়েছেন। তাঁদের বিশ্বাস ছিল, নির্বিচার ইসরায়েলি হামলার কারণে বাড়ির চেয়ে এই হাসপাতালই নিরাপদ।

ড. ঘাসান আবু সিত্তাহ বলেন, ‘আমরা হাসপাতালে কাজ করছি, হঠাৎ বিকট বিস্ফোরণ। ছাদ ধসে হুড়মুড়িয়ে নিচে পড়ে গেল। কোনো কিছুই এই হামলার পক্ষে যুক্তি হতে পারে না। এখানে অনেক রোগী, স্বাস্থ্যকর্মী এবং আশ্রয়প্রার্থী মানুষ ছিলেন।আবু সিত্তাহ বলেন, হাসপাতাল হামলার লক্ষ্যবস্তু হতে পারে না। এই রক্তপাত বন্ধ করতে হবে। যথেষ্ট হয়েছে।হাসপাতালে আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসার জন্য গাজা সিটির আল শিফা হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। এই হাসপাতাল ইতিমধ্যে ইসরায়েলি হামলায় আহত মানুষে ভর্তি। তাঁদের চিৎকার আর রক্তে হাসপাতালের মেঝে লাল হয়ে আছে।

ডা. জিয়াদ শিহাদাহ আল–জাজিরাকে বলেন, যা ঘটেছে, তা ভয়ংকর। যাঁরা হামলার শিকার হয়েছেন, সবাই বেসামরিক নাগরিক। তাঁরা নিরাপদ আশ্রয় ভেবে বাড়ি থেকে পালিয়ে এই হাসপাতালে এসেছেন। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ীও যুদ্ধের সময় হাসপাতাল হচ্ছে নিরাপদ জায়গা।জিয়াদ বলেন, টানা ইসরায়েলি হামলায় নিজের বাড়িকে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করেই মানুষ স্কুল ও হাসপাতালে এসে আশ্রয় নিয়েছেন। মাত্র এক মিনিটে হাসপাতালে তাঁদের অনেকেই নিহত হয়েছেন।বিশ্বজুড়ে আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা ও বিভিন্ন দেশের সরকার এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে। তারা এটাকে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে অবহিত করেছে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, আল–আহলি আল–আরবি হাসপাতালে হামলার আগে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ২ হাজার ৭৭৮ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছিলেন, আহত হয়েছিলেন ৯ হাজার ৭০০ ব্যক্তি। এখন সেই নিহতের সংখ্যা ৩ হাজারের বেশি।ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত সুইডিশ নাগরিক জামিল আবদুল্লাহ গাজা ছাড়তে চেষ্টা করছেন। তিনি বলেন, রাস্তায় মানুষের মরদেহ ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছে। ভবনগুলো বসবাসকারী মানুষের ওপর ধসে পড়ছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আজ বুধবার তেল আবিবে এসেছেন। ইসরায়েল থেকে তাঁর জর্ডানে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু হাসপাতালে হামলার পর জর্ডানের বাদশাহ বৈঠক বাতিল করেছেন।বৈঠক বাতিলের পর ফিলিস্তিন প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘যা চলছে, সেটা গণহত্যা।এই গণহত্যা বন্ধে আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি হস্তক্ষেপের আহ্বান জানাচ্ছি।’

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

ফিলিস্তিনের গাজায় হাসপাতালে ইসরায়েলি বিমান হামলায় নারী–শিশুসহ ৫০০ জনের বেশি নিহত

আপডেট সময় : ১২:২৯:১১ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৩

দ্য গার্ডিয়ান

ফিলিস্তিনের গাজায় হাসপাতালে গতকাল মঙ্গলবার নির্বিচার ইসরায়েলি বিমান হামলায় নারী–শিশুসহ ৫০০ জনের বেশি নিহত হয়েছেন। ২০০৭ সালে গাজায় হামাস নির্বাচিত হওয়ার পর ইসরায়েলের সঙ্গে তাদের পাঁচ দফা যুদ্ধ হয়েছে। কিন্তু তখন থেকে অবরুদ্ধ গাজার কোনো হাসপাতালে কখনো এতটা ভয়াবহ হামলা চালায়নি ইসরায়েল।গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, গতকাল রাতে আল–আহলি আল–আরবি হাসপাতালে হামলায় অন্তত ৫০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।ইসরায়েল–ফিলিস্তিন সংঘাত শুরুর ১১ দিন পর এমন নৃশংস হামলা চালানো হয়েছে। ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলের অভ্যন্তরে হামলা চালানোর পর ইহুদি রাষ্ট্রটি গাজার ওপর টানা নির্বিচারে বোমা ও বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের অব্যাহত হামলার কারণে গাজায় বেসামরিক নাগরিকদের আশ্রয় নেওয়ার মতো কোনো নিরাপদ জায়গা নেই।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ইসরায়েল সফরের ঠিক আগের রাতে হাসপাতালে নৃশংস এই হামলার ঘটনা ঘটল।এ ঘটনা গাজার বাইরে যুদ্ধ ছড়িয়ে না পড়ার মার্কিন উদ্যোগকে জটিল করে তুলতে পারে।ইসরায়েলি বাহিনীর বিরুদ্ধে এই হামলার অভিযোগ উঠলেও উল্টো তারা এ হামলাকে হামাসের ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করছে। তারা দাবি করেছে, হামাসের ব্যর্থ রকেট হামলায় হাসপাতালে ওই হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। অবশ্য পরে আবার ইসলামিক জিহাদের ওপর দোষ চাপিয়েছে ইসরায়েল। ইসলামিক জিহাদ ইসরায়েলের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, এই মাত্রায় হামলা চালানোর মতো ক্ষমতা তাদের নেই। ইসরায়েলই এই হামলার জন্য দায়ী।

আল–জাজিরায় সম্প্রচার করা ভিডিওতে দেখা যায়, বহুতল হাসপাতাল ভবন থেকে গাঢ় ধোঁয়ার কুণ্ডলী উঠছে। হাসপাতাল ও এর আশপাশে নারী–শিশুসহ মানুষের নিথর দেহ ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছে।ভবনের চারপাশে ধ্বংসস্তূপ।অ্যাংলিকান গির্জার মালিকানাধীন এই হাসপাতালে কোনো পূর্বসতর্কতা ছাড়াই হামলা চালানো হয়েছে। এর আগে গত শনিবার ওই হাসপাতালে রকেট আঘাত হেনেছিল, যাতে চার স্বাস্থকর্মী আহত হন।গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে হাসপাতালে হামলা চালানো হয়। এ সময় হাসপাতালে ইসরায়েলি হামলায় আহত প্রচুর রোগী চিকিৎসার জন্য ভর্তি ছিলেন। ইসরায়েলি হামলার ভয়ে প্রচুর বেসামরিক নাগরিক ওই হাসপাতালে আশ্রয় নিয়েছেন। তাঁদের বিশ্বাস ছিল, নির্বিচার ইসরায়েলি হামলার কারণে বাড়ির চেয়ে এই হাসপাতালই নিরাপদ।

ড. ঘাসান আবু সিত্তাহ বলেন, ‘আমরা হাসপাতালে কাজ করছি, হঠাৎ বিকট বিস্ফোরণ। ছাদ ধসে হুড়মুড়িয়ে নিচে পড়ে গেল। কোনো কিছুই এই হামলার পক্ষে যুক্তি হতে পারে না। এখানে অনেক রোগী, স্বাস্থ্যকর্মী এবং আশ্রয়প্রার্থী মানুষ ছিলেন।আবু সিত্তাহ বলেন, হাসপাতাল হামলার লক্ষ্যবস্তু হতে পারে না। এই রক্তপাত বন্ধ করতে হবে। যথেষ্ট হয়েছে।হাসপাতালে আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসার জন্য গাজা সিটির আল শিফা হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। এই হাসপাতাল ইতিমধ্যে ইসরায়েলি হামলায় আহত মানুষে ভর্তি। তাঁদের চিৎকার আর রক্তে হাসপাতালের মেঝে লাল হয়ে আছে।

ডা. জিয়াদ শিহাদাহ আল–জাজিরাকে বলেন, যা ঘটেছে, তা ভয়ংকর। যাঁরা হামলার শিকার হয়েছেন, সবাই বেসামরিক নাগরিক। তাঁরা নিরাপদ আশ্রয় ভেবে বাড়ি থেকে পালিয়ে এই হাসপাতালে এসেছেন। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ীও যুদ্ধের সময় হাসপাতাল হচ্ছে নিরাপদ জায়গা।জিয়াদ বলেন, টানা ইসরায়েলি হামলায় নিজের বাড়িকে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করেই মানুষ স্কুল ও হাসপাতালে এসে আশ্রয় নিয়েছেন। মাত্র এক মিনিটে হাসপাতালে তাঁদের অনেকেই নিহত হয়েছেন।বিশ্বজুড়ে আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা ও বিভিন্ন দেশের সরকার এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে। তারা এটাকে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে অবহিত করেছে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, আল–আহলি আল–আরবি হাসপাতালে হামলার আগে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ২ হাজার ৭৭৮ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছিলেন, আহত হয়েছিলেন ৯ হাজার ৭০০ ব্যক্তি। এখন সেই নিহতের সংখ্যা ৩ হাজারের বেশি।ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত সুইডিশ নাগরিক জামিল আবদুল্লাহ গাজা ছাড়তে চেষ্টা করছেন। তিনি বলেন, রাস্তায় মানুষের মরদেহ ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছে। ভবনগুলো বসবাসকারী মানুষের ওপর ধসে পড়ছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আজ বুধবার তেল আবিবে এসেছেন। ইসরায়েল থেকে তাঁর জর্ডানে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু হাসপাতালে হামলার পর জর্ডানের বাদশাহ বৈঠক বাতিল করেছেন।বৈঠক বাতিলের পর ফিলিস্তিন প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘যা চলছে, সেটা গণহত্যা।এই গণহত্যা বন্ধে আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি হস্তক্ষেপের আহ্বান জানাচ্ছি।’