ঢাকা ১০:২১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ ২০২৫, ১১ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা এখনো আক্রমণের মুখে: সম্পাদক পরিষদ হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ট্রাষ্টের মাসবপ্যাপী সেহরি বিতরণ চলমান সীমান্তবর্তী এলাকায় বিজিবি’র জনসচেতনামূলক সভা অনুষ্ঠিত জেলরোড থেকে আক্তার হোসেন গ্রেফতার মাহে রামাদ্বান উপলক্ষে অসহায় ও হতদরিদ্রদের মধ্যে ফুড প্যাক বিতরণ এনসিপি’র শ্রমিক উইং এর কেন্দ্রীয় সংগঠক হলেন সিলেটের শিব্বির আহমদ পথশিশুদের নিয়ে ইউনিস্যাবের ঈদ উৎসব-২০২৫ উদ্যাপন তিন খানকে নিয়ে আসছে সিনেমা আমার বয়স নিয়ে নায়িকার সমস্যা না হলে আপনার কেন সমস্যা: সালমান সকালে খালি পেটে পানি পান করলে কী হয় শরীরে? মানসিক অবসাদ কাটাতে রাতে যা করবেন গাজীপুরে আইজিপি

মহান স্বাধীনতা দিবস আজ

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৪:২০:২৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৬ মার্চ ২০২৩ ৬৭ বার পড়া হয়েছে

ভিউ নিউজ ৭১

স্টাফ রিপোর্টার : আজ ২৬ মার্চ।দেশের ৫৩তম মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস।হাজার বছরের পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে ১৯৭১ সালের এই দিনে বিশ্বের বুকে স্বাধীন অস্তিত্ব ঘোষণা করেছিল বীর বাঙালি।দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র দেশ হিসেবে স্বাধীনতার জন্য সশস্ত্র যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিল এদেশের মানুষ। দীর্ঘ ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয় মহান স্বাধীনতা।রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের সূচনার সেই গৌরব ও অহঙ্কারের দিন আজ। আজ থেকে ৫২ বছর আগের ঠিক এমনি এক রাতে অর্থাৎ ১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চের প্রথম প্রহরে পাকিস্তানি হিংস্র শ্বাপদের গণহত্যার বিরুদ্ধে বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা করেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা।শত্রুসেনাদের বিতাড়িত করতে শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে লড়াই করার জন্য বঙ্গবন্ধুর ডাকে জীবনপণ সশস্ত্র লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে বীর বাঙালি। ওই ঘোর অমানিশা ভেদ করেই দেশের আকাশে উদিত হয় স্বাধীনতার চিরভাস্বর সূর্য।

বাঙালির অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই শুরু হয়েছিল ১৯৭১ সালের আজকের এই দিনে। দীর্ঘ নয় মাস এক সাগর রক্তের বিনিময়ে ছিনিয়ে আনে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠতম অর্জন- মহান স্বাধীনতা।আজ ভোরের সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গেই বাঙালী জাতির জীবনে সূচনা ঘটবে আরও একটি ঝলমল উৎসব দিনের।অত্যাচার-নিপীড়নে জর্জরিত বাঙালী জাতির সামনে আলোকময় ভবিষ্যতের দুয়ার খুলেছিল এই দিন। গৌরব ও স্বজন হারানোর বেদনার এই দিনে বীর বাঙালী সশস্ত্র স্বাধীনতা যুদ্ধের সূচনা করেছিল। তাই আজ গৌরব ও অহঙ্কারের দিন। প্রিয় স্বাধীন মাতৃভূমিকে হিংস্র মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে প্রগতি, কল্যাণ ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেয়ার, কষ্টার্জিত স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সংহত করার নতুন শপথে বলীয়ান হওয়ার দিন আজ। মুক্তিযুদ্ধের প্রখর চেতনায় প্রগতিবিরোধী শক্তিকে প্রতিহত করার অঙ্গীকারে প্রাণিত হবে বীর বাঙালি।আজকের এই স্বাধীনতা অর্জন করতে বাঙালী জাতিকে করতে হয়েছে দীর্ঘ সংগ্রাম, দিতে হয়েছে একসাগর রক্ত।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ধাপে ধাপে পুরো বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতার প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ করেন। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের অব্যবহিত পরেই ভাষার প্রশ্নে একাত্ম হয় বাঙালি।১৯৪৮,৫২ পেরিয়ে ৫৪,৬২,১৯৬৬-এর পথ বেয়ে আসে ১৯৬৯। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে কেঁপে ওঠে জেনারেল আইয়ুবের শাসন।জনতার ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগানে-প্রকম্পিত হয় গ্রাম-শহর,জনপদ।শত ষড়যন্ত্র ও সামরিক জান্তার রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে সত্তরের জাতীয় ও প্রাদেশিক নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পায় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ।কিন্তু বাঙালীর হাতে শাসনভার দেয়ার বদলে শুরু হয় ষড়যন্ত্র।প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া ও পাকিস্তান পিপলস পার্টির জুলফিকার আলী ভুট্টো বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলোচনার নামে করতে থাকেন কালক্ষেপণ।প্রস্তুত হয় হিংস্র কায়দায় বাঙালি হত্যাযজ্ঞে।তবে ৭ মার্চে রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণেই পাওয়া যায় দিকনির্দেশনা।

আক্ষরিক অর্থেই তখন পূর্ব পাকিস্তানের প্রশাসন চলছিল বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে।সেই প্রবল আন্দোলনের জোয়ারে ধীরে ধীরে বাঙালীর হৃদয়ে আঁকা হয় একটি লাল-সবুজ পতাকা,একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশের ছবি।কিন্তু বাঙালির আবেগ,সংগ্রাম ও মুক্তির আকাঙ্খাকে নির্মূল করতে অস্ত্র হাতে নামে হানাদার পাকিস্তানী বাহিনী।শোষিত ও নির্যাতিত মানুষের স্বাধীনতার আকাক্সক্ষাকে রক্তের বন্যায় ডুবিয়ে দিতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে শুরু করে নিষ্ঠুর গণহত্যা।সেই কালরাত থেকেই শুরু হয় মৃত্যু,ধ্বংস,আগুন আর আর্তনাদের পৈশাচিক বর্বরতা। কিন্তু ওই ঘোর অমানিশা ভেদ করেই দেশের আকাশে উদিত হয় স্বাধীনতার চিরভাস্বর সূর্য।২৬ মার্চের সূচনালগ্নে গ্রেফতার হওয়ার আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ওয়্যারলেসের মাধ্যমে স্বাধীনতার ঘোষণা করে বলেন,এটাই হয়ত আমার শেষ বার্তা,আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন।

পাকিস্তান সেনাবাহিনী অতর্কিতে পিলখানার ইপিআর ঘাঁটি, রাজারবাগ পুলিশ লাইন আক্রমণ করেছে এবং শহরের লোকদের হত্যা করছে। ঢাকা, চট্টগ্রামের রাস্তায় রাস্তায় যুদ্ধ চলছে।আমি বিশ্বের জাতিগুলোর কাছে সাহায্যের আবেদন করছি।আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা বীরত্বের সঙ্গে মাতৃভূমি মুক্ত করার জন্য শত্রুদের সঙ্গে যুদ্ধ করছে। সর্বশক্তিমান আল্লাহর নামে আপনাদের কাছে আমার আবেদন ও আদেশ- দেশকে স্বাধীন করার জন্য শেষ রক্তবিন্দু থাকা পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যান। আপনাদের পাশে এসে যুদ্ধ করার জন্য পুলিশ,ইপিআর,বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও আনসারদের সাহায্য চান। কোন আপোস নেই,জয় আমাদের হবেই। আমাদের পবিত্র মাতৃভূমি থেকে শেষ শত্রুকে বিতাড়িত করুন।সব আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী এবং অন্য দেশপ্রেমিক ও স্বাধীনতাপ্রিয় লোকদের এ সংবাদ পৌঁছে দিন।আল্লাহ আমাদের মঙ্গল করুন। জয় বাংলা।

বঙ্গবন্ধুর এই স্বাধীনতার ঘোষণা প্রচার হওয়ার পর পাকিস্তানি হানাদারবাহিনীর বর্বর ও নির্বিচারে গণহত্যা,লুণ্ঠন, ধর্ষণ,অগ্নিসংযোগ ও সর্বব্যাপী পৈশাচিক হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে বাঙালি জাতি তাদের সর্বশক্তি নিয়ে ইস্পাতকঠিন প্রত্যয় নিয়ে সশস্ত্র লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে।সারাদেশে শুরু হয় প্রতিরোধ যুদ্ধ। দেশের অকুতোভয় সূর্যসন্তানরা তুমুল যুদ্ধ করে লাখো প্রাণের বিনিময়ে ছিনিয়ে আনে স্বাধীনতা।একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর হানাদার বাহিনী মাথানত করে পরাজয় স্বীকার করে আত্মসমর্পণে বাধ্য হয়। আর সেদিন বিশ্বের মানচিত্রে স্থান পায় এক সাগর রক্তের বিনিময়ে একটি স্বাধীন দেশ,স্বাধীন পতাকা- যার নাম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ।যাঁদের রক্ত ও সম্ভ্রমের মূল্যে আমরা পেয়েছি মহামূল্যবান এই স্বাধীনতা,তাঁদের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা,ভালোবাসা ও বিনম্র শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করার দিন আজ। মহান স্বাধীনতা দিবসে জাতি আজ উৎসবের পাশাপাশি গভীর শ্রদ্ধা, ভালোবাসা আর বেদনায় স্মরণ করবে মহান মুক্তিযুদ্ধের লাখো শহীদকে।

স্মরণ করবে স্বাধীনতার স্থপতি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সন্তান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনাকারী তাঁর সহকর্মী জাতীয় নেতাদের।জাতি শ্রদ্ধা জানাবে বীরাঙ্গনা আর শহীদমাতাদের।দৃপ্ত শপথ নেবেÑ স্বাধীনতা বিরোধী শত্রুদের সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার।আজ প্রত্যুষে একত্রিশবার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসটির সূচনা হবে। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে নানা অনুষ্ঠান আয়োজনের মধ্য দিয়ে মহান এ দিবসটি পালন করা হবে।এ উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক,সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পৃথক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আজ সরকারি ছুটি।এছাড়া,দিবসটি উপলক্ষে রেডিও,টেলিভিশন,ইলেকট্রনিক মিডিয়া ও সংবাদপত্রে বিশেষ নিবন্ধ ও অনুষ্ঠানমালা প্রচার করছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

মহান স্বাধীনতা দিবস আজ

আপডেট সময় : ০৪:২০:২৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৬ মার্চ ২০২৩

ভিউ নিউজ ৭১

স্টাফ রিপোর্টার : আজ ২৬ মার্চ।দেশের ৫৩তম মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস।হাজার বছরের পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে ১৯৭১ সালের এই দিনে বিশ্বের বুকে স্বাধীন অস্তিত্ব ঘোষণা করেছিল বীর বাঙালি।দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র দেশ হিসেবে স্বাধীনতার জন্য সশস্ত্র যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিল এদেশের মানুষ। দীর্ঘ ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয় মহান স্বাধীনতা।রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের সূচনার সেই গৌরব ও অহঙ্কারের দিন আজ। আজ থেকে ৫২ বছর আগের ঠিক এমনি এক রাতে অর্থাৎ ১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চের প্রথম প্রহরে পাকিস্তানি হিংস্র শ্বাপদের গণহত্যার বিরুদ্ধে বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা করেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা।শত্রুসেনাদের বিতাড়িত করতে শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে লড়াই করার জন্য বঙ্গবন্ধুর ডাকে জীবনপণ সশস্ত্র লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে বীর বাঙালি। ওই ঘোর অমানিশা ভেদ করেই দেশের আকাশে উদিত হয় স্বাধীনতার চিরভাস্বর সূর্য।

বাঙালির অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই শুরু হয়েছিল ১৯৭১ সালের আজকের এই দিনে। দীর্ঘ নয় মাস এক সাগর রক্তের বিনিময়ে ছিনিয়ে আনে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠতম অর্জন- মহান স্বাধীনতা।আজ ভোরের সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গেই বাঙালী জাতির জীবনে সূচনা ঘটবে আরও একটি ঝলমল উৎসব দিনের।অত্যাচার-নিপীড়নে জর্জরিত বাঙালী জাতির সামনে আলোকময় ভবিষ্যতের দুয়ার খুলেছিল এই দিন। গৌরব ও স্বজন হারানোর বেদনার এই দিনে বীর বাঙালী সশস্ত্র স্বাধীনতা যুদ্ধের সূচনা করেছিল। তাই আজ গৌরব ও অহঙ্কারের দিন। প্রিয় স্বাধীন মাতৃভূমিকে হিংস্র মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে প্রগতি, কল্যাণ ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেয়ার, কষ্টার্জিত স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সংহত করার নতুন শপথে বলীয়ান হওয়ার দিন আজ। মুক্তিযুদ্ধের প্রখর চেতনায় প্রগতিবিরোধী শক্তিকে প্রতিহত করার অঙ্গীকারে প্রাণিত হবে বীর বাঙালি।আজকের এই স্বাধীনতা অর্জন করতে বাঙালী জাতিকে করতে হয়েছে দীর্ঘ সংগ্রাম, দিতে হয়েছে একসাগর রক্ত।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ধাপে ধাপে পুরো বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতার প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ করেন। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের অব্যবহিত পরেই ভাষার প্রশ্নে একাত্ম হয় বাঙালি।১৯৪৮,৫২ পেরিয়ে ৫৪,৬২,১৯৬৬-এর পথ বেয়ে আসে ১৯৬৯। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে কেঁপে ওঠে জেনারেল আইয়ুবের শাসন।জনতার ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগানে-প্রকম্পিত হয় গ্রাম-শহর,জনপদ।শত ষড়যন্ত্র ও সামরিক জান্তার রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে সত্তরের জাতীয় ও প্রাদেশিক নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পায় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ।কিন্তু বাঙালীর হাতে শাসনভার দেয়ার বদলে শুরু হয় ষড়যন্ত্র।প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া ও পাকিস্তান পিপলস পার্টির জুলফিকার আলী ভুট্টো বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলোচনার নামে করতে থাকেন কালক্ষেপণ।প্রস্তুত হয় হিংস্র কায়দায় বাঙালি হত্যাযজ্ঞে।তবে ৭ মার্চে রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণেই পাওয়া যায় দিকনির্দেশনা।

আক্ষরিক অর্থেই তখন পূর্ব পাকিস্তানের প্রশাসন চলছিল বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে।সেই প্রবল আন্দোলনের জোয়ারে ধীরে ধীরে বাঙালীর হৃদয়ে আঁকা হয় একটি লাল-সবুজ পতাকা,একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশের ছবি।কিন্তু বাঙালির আবেগ,সংগ্রাম ও মুক্তির আকাঙ্খাকে নির্মূল করতে অস্ত্র হাতে নামে হানাদার পাকিস্তানী বাহিনী।শোষিত ও নির্যাতিত মানুষের স্বাধীনতার আকাক্সক্ষাকে রক্তের বন্যায় ডুবিয়ে দিতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে শুরু করে নিষ্ঠুর গণহত্যা।সেই কালরাত থেকেই শুরু হয় মৃত্যু,ধ্বংস,আগুন আর আর্তনাদের পৈশাচিক বর্বরতা। কিন্তু ওই ঘোর অমানিশা ভেদ করেই দেশের আকাশে উদিত হয় স্বাধীনতার চিরভাস্বর সূর্য।২৬ মার্চের সূচনালগ্নে গ্রেফতার হওয়ার আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ওয়্যারলেসের মাধ্যমে স্বাধীনতার ঘোষণা করে বলেন,এটাই হয়ত আমার শেষ বার্তা,আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন।

পাকিস্তান সেনাবাহিনী অতর্কিতে পিলখানার ইপিআর ঘাঁটি, রাজারবাগ পুলিশ লাইন আক্রমণ করেছে এবং শহরের লোকদের হত্যা করছে। ঢাকা, চট্টগ্রামের রাস্তায় রাস্তায় যুদ্ধ চলছে।আমি বিশ্বের জাতিগুলোর কাছে সাহায্যের আবেদন করছি।আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা বীরত্বের সঙ্গে মাতৃভূমি মুক্ত করার জন্য শত্রুদের সঙ্গে যুদ্ধ করছে। সর্বশক্তিমান আল্লাহর নামে আপনাদের কাছে আমার আবেদন ও আদেশ- দেশকে স্বাধীন করার জন্য শেষ রক্তবিন্দু থাকা পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যান। আপনাদের পাশে এসে যুদ্ধ করার জন্য পুলিশ,ইপিআর,বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও আনসারদের সাহায্য চান। কোন আপোস নেই,জয় আমাদের হবেই। আমাদের পবিত্র মাতৃভূমি থেকে শেষ শত্রুকে বিতাড়িত করুন।সব আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী এবং অন্য দেশপ্রেমিক ও স্বাধীনতাপ্রিয় লোকদের এ সংবাদ পৌঁছে দিন।আল্লাহ আমাদের মঙ্গল করুন। জয় বাংলা।

বঙ্গবন্ধুর এই স্বাধীনতার ঘোষণা প্রচার হওয়ার পর পাকিস্তানি হানাদারবাহিনীর বর্বর ও নির্বিচারে গণহত্যা,লুণ্ঠন, ধর্ষণ,অগ্নিসংযোগ ও সর্বব্যাপী পৈশাচিক হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে বাঙালি জাতি তাদের সর্বশক্তি নিয়ে ইস্পাতকঠিন প্রত্যয় নিয়ে সশস্ত্র লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে।সারাদেশে শুরু হয় প্রতিরোধ যুদ্ধ। দেশের অকুতোভয় সূর্যসন্তানরা তুমুল যুদ্ধ করে লাখো প্রাণের বিনিময়ে ছিনিয়ে আনে স্বাধীনতা।একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর হানাদার বাহিনী মাথানত করে পরাজয় স্বীকার করে আত্মসমর্পণে বাধ্য হয়। আর সেদিন বিশ্বের মানচিত্রে স্থান পায় এক সাগর রক্তের বিনিময়ে একটি স্বাধীন দেশ,স্বাধীন পতাকা- যার নাম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ।যাঁদের রক্ত ও সম্ভ্রমের মূল্যে আমরা পেয়েছি মহামূল্যবান এই স্বাধীনতা,তাঁদের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা,ভালোবাসা ও বিনম্র শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করার দিন আজ। মহান স্বাধীনতা দিবসে জাতি আজ উৎসবের পাশাপাশি গভীর শ্রদ্ধা, ভালোবাসা আর বেদনায় স্মরণ করবে মহান মুক্তিযুদ্ধের লাখো শহীদকে।

স্মরণ করবে স্বাধীনতার স্থপতি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সন্তান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনাকারী তাঁর সহকর্মী জাতীয় নেতাদের।জাতি শ্রদ্ধা জানাবে বীরাঙ্গনা আর শহীদমাতাদের।দৃপ্ত শপথ নেবেÑ স্বাধীনতা বিরোধী শত্রুদের সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার।আজ প্রত্যুষে একত্রিশবার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসটির সূচনা হবে। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে নানা অনুষ্ঠান আয়োজনের মধ্য দিয়ে মহান এ দিবসটি পালন করা হবে।এ উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক,সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পৃথক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আজ সরকারি ছুটি।এছাড়া,দিবসটি উপলক্ষে রেডিও,টেলিভিশন,ইলেকট্রনিক মিডিয়া ও সংবাদপত্রে বিশেষ নিবন্ধ ও অনুষ্ঠানমালা প্রচার করছে।