ঢাকা ১১:৩২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ১২ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা এখনো আক্রমণের মুখে: সম্পাদক পরিষদ হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ট্রাষ্টের মাসবপ্যাপী সেহরি বিতরণ চলমান বিএনপি ক্ষমতায় গেলে শিক্ষিত বেকার ভাতা চালু করবে: তারেক রহমান সংস্কার ও নির্বাচনকে মুখোমুখি করবেন না: এনসিপি বিশেষজ্ঞদের দাবি, হাসি বাড়াবে আয়ু কল্পনাশক্তি মানুষকে লক্ষ্যে পৌঁছাতে সাহায্য করে: প্রধান উপদেষ্টা বাবার ঠিকাদারি ইস্যুতে ক্ষমা চাইলেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ হবিগঞ্জে বিজিবি’র অভিযান দেড় কোটি মূল্যের পণ্য ও ১টি ট্রাক আটক জৈন্তাপুরে আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত ইলিয়াস কাঞ্চনের নেতৃত্বে আসছে ‘জনতার পার্টি বাংলাদেশ’ দীর্ঘদিন থেকে ভোলাগঞ্জ রোপওয়ে (বাংকার) থেকে পাথর লুটপাট হচ্ছে সরকারি চাল আত্মসাতে বিএনপি নেতার কারাদণ্ড

ডোপ টেস্টে ১১৬ মাদকাসক্ত পুলিশ চাকরিচ্যুত

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৬:০৫:৪৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৫ মার্চ ২০২৩ ৭৭ বার পড়া হয়েছে

পুলিশ সদস্যদের মাদকমুক্ত করতে তিন বছর আগে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে (ডিএমপি) ডোপ টেস্ট বা মাদক পরীক্ষা শুরু হয়।এ সময়ের মধ্যে ডিএমপির কনস্টেবল থেকে উপপরিদর্শক (এসআই) পদমর্যাদার ১২৬ জন মাদকাসক্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন।চাকরিচ্যুত হয়েছেন ১১৬ জন।এ ছাড়া ব্যবস্থা নেওয়ার আগে একজন মারা গেছেন এবং আরেকজন অবসরে চলে গেছেন।বাকি আটজন শাস্তি দেওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যে আছেন।সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন,পুলিশকে মাদকমুক্ত ও সুশৃঙ্খল রাখতে এ পরীক্ষা চালু রাখা জরুরি।ডিএমপির পরিসংখ্যান অনুযায়ী,ডোপ টেস্টে বেশি পজিটিভ হয়েছেন পুলিশ কনস্টেবলরা।ডোপ টেস্টে মাদকাসক্ত হিসেবে শনাক্ত হওয়া ১২৬ পুলিশ সদস্যের মধ্যে ৯৮ জনই কনস্টেবল। বাকিদের মধ্যে একজন পুলিশ পরিদর্শক,১১ জন উপপরিদর্শক (এসআই),একজন ট্রাফিক সার্জেন্ট,সাতজন সহকারী উপরিদর্শক (এএসআই) এবং আটজন নায়েক।ডিএমপি সূত্র জানায়,২০২০ সালের ১০ মার্চ তৎকালীন ডিএমপি কমিশনার মো.শফিকুল ইসলাম পুলিশকে মাদকমুক্ত করতে ডিএমপিতে ডোপ টেস্ট (মাদকাসক্ত চিহ্নিতের পরীক্ষা) চালু করেন।

২০২০ সালের ১০ মার্চ থেকে ২০২২ সালের ২৭ জুলাই পর্যন্ত ডোপ টেস্টে ১২০ জন পুলিশ সদস্যকে মাদকাসক্ত হিসেবে শনাক্ত করা হয়।এর মধ্যে ২০২১ সালের মার্চ থেকে ২০২২ সালের জুলাই পর্যন্ত এই ১৬ মাসে মাত্র ২০ জন পুলিশ সদস্য শনাক্ত হন।ওই বছরের আগস্ট,সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে ডোপ টেস্টে কেউ মাদকাসক্ত হিসেবে শনাক্ত হননি।২০২২ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মাত্র ছয়জন পুলিশ সদস্য মাদকাসক্ত হিসেবে শনাক্ত হন।পরিসংখ্যানে দেখা গেছে,২০২০ সালের ১০ মার্চ থেকে ডিএমপিতে শুরু হওয়া এই ডোপ টেস্ট ২০২২ সালের জুলাই পর্যন্ত জোরেশোরে চলে।ওই বছরের আগস্ট থেকে ডোপ টেস্টে শনাক্তের সংখ্যা কমে গেছে।এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক সাংবাদিকদের বলেন,পুলিশের ডোপ টেস্ট বন্ধ হয়নি।এখন সন্দেহভাজন পুলিশ সদস্যকে এই ডোপ টেস্ট করা হয়। অনেকের চাকরি চলে যাওয়ায় পুলিশে মাদকাসক্তের সংখ্যা কমে গেছে।এই ডোপ টেস্ট অব্যাহত থাকবে।

যেভাবে ডোপ টেস্ট শুরু

ডিএমপি সূত্র বলছে, ২০২০ সালের শুরুতে ডিএমপিতে সাতজনের ডোপ টেস্ট করলে বেশির ভাগের ফল পজিটিভ আসে।পরে বিভিন্ন ইউনিটের আরও ১৮ জনের পরীক্ষা করলে একজনের পজিটিভ আসে। এতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সতর্ক হন।মাদকবিরোধী শুদ্ধি অভিযান শুরুর পর বিভিন্ন সূত্র থেকেও মাদকাসক্ত পুলিশ সদস্যদের ব্যাপারে তথ্য আসতে থাকে।এরপর রাজধানীর তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ড ও রেললাইন এলাকায় মাদকবিরোধী অভিযানে মাদক চক্রের ২১ কারবারিকে গ্রেপ্তার করে সংশ্লিষ্ট থানা-পুলিশ।পরে তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদে সংশ্লিষ্ট থানার কিছু পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মাদক কারবারের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়।কারবারিদের সহযোগিতাকারী হিসেবে প্রথমে শিল্পাঞ্চল থানার এক সহকারী উপপরিদর্শকের (এএসআই) নাম আসে।এরপর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মাসিক অপরাধ সভায় উপস্থিত ডিএমপির ৫০ থানার ওসিদের এ বিষয়ে সতর্ক করা হয়।

ডোপ টেস্টের উদ্যোক্তা সাবেক ডিএমপি কমিশনার মো. শফিকুল ইসলামের সঙ্গে এ নিয়ে কথা হয়। তিনি প্রথম আলোকে বলেন,গোপন অনুসন্ধানে তিনি জানতে পারেন,কোনো কোনো পুলিশ সদস্য বন্ধুর পাল্লায় পড়ে কৌতূহলী হয়ে প্রথমে মাদক গ্রহণ করেন।পরে ওই বন্ধুর চাপাচাপিতে আবারও মাদক নেন।পরে তিনি মাদকসেবী হয়ে পড়েন।তার সান্নিধ্যে এসে ওই পুলিশ সদস্যের ব্যাচমেট,পরে ব্যারাকের রুমমেট মাদকাসক্ত হচ্ছিলেন,প্রতিদিন তাঁদের তিনটির কম ইয়াবায় হতো না।এভাবে তিনটি ইয়াবা কিনতে তাঁর খরচ হতো ১ হাজার টাকা, সে হিসাবে মাসে খরচ হতো ৩০ হাজার টাকা।অথচ একজন পুলিশ কনস্টেবল বেতন পান ১৭ হাজার টাকা।মাদকের খরচ চালাতে মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে যান তাঁরা।এভাবে পুলিশ লাইনের অনেক সদস্য মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন।

শফিকুল ইসলাম বলেন,ডিএমপি কমিশনার থাকাকালে নিয়োগ পাওয়া তিন হাজার পুলিশ সদস্যকে প্রশিক্ষণের সময় ডোপ টেস্ট করিয়েছিলেন।সন্দেহভাজন মাদকাসক্ত পুলিশ সদস্যের তালিকা ধরে তিনি মাদক পরীক্ষা করেন।ডোপ টেস্টে শনাক্ত হওয়া পুলিশ সদস্যদের চাকরিচ্যুতির নোটিশ পাঠানোর পর এ খবর ছড়িয়ে পড়ে।এতে অনেকেই ভয়ে মাদকসেবন ও মাদক ব্যবসা ছেড়ে দেন।শেষমেশ তিনি অবসর নেওয়ার আগের তিন মাস (২০২২ সালের আগস্ট,সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর) ডোপ টেস্টে কোনো পুলিশ সদস্য পজিটিভ হননি।তাঁর মতে,এখন ডিএমপিতে মাদকাসক্তের সংখ্যা কমে গেছে।২০২২ সালের ৩০ অক্টোবর মো. শফিকুল ইসলাম অবসরকালীন ছুটিতে যান।

যেভাবে তালিকা হয়

বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করতে ডিএমপি কমিশনারের নিজস্ব গোয়েন্দা সংস্থা (ইন্টেলিজেন্স অ্যানালাইসিস ডিভিশন এনআইডি) পুলিশের মাদক সেবন ও মাদক সম্পৃক্ততার বিষয়ে তদন্ত শুরু করে। পাশাপাশি ডিএমপি সদর দপ্তর থেকে প্রতিটি ইউনিট ও বিভাগের উপকমিশনারদের চিঠি দিয়ে সন্দেহভাজন মাদকাসক্ত সদস্যদের তালিকা করতে বলা হয়।বিভিন্ন ইউনিট ও বিভাগের উপকমিশনাররা তালিকা পাঠালে তা যাচাই-বাছাই করে সন্দেহভাজন পুলিশ সদস্যদের তালিকা তৈরি করা হয়।পরে তাঁদের ডোপ টেস্ট করানো হয়।

পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মোখলেসুর রহমান গত রোববার রাতে সাংবাদিকদের বলেন,পুলিশকে মাদকমুক্ত ও সুশৃঙ্খল করতে অবশ্যই ডোপ টেস্ট চালু রাখতে হবে।তাঁর মতে,ডোপ টেস্টে ভাটা পড়লে পুলিশ কর্তৃপক্ষের এ উদ্যোগ চালু করতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের স্মরণ করিয়ে দিলে তা আবার চাঙা হবে।এতে ডোপ টেস্টের প্রবণতা আবার স্বাভাবিক হবে।শনাক্তের হার কমে যাওয়া প্রসঙ্গে মোখলেসুর মনে করেন,ডোপ টেস্ট চালু থাকায় সবাই সতর্ক হয়ে গেছেন,সেই জন্য হয়তো ধরা পড়ছে কম।তবে ডিএমপিতে মাদকাসক্ত পুলিশের সংখ্যা জানা গেলেও ডোপ টেস্টে সারা দেশে শনাক্ত হওয়া মাদকাসক্ত পুলিশ সদস্যদের সংখ্যা জানাতে পারেনি পুলিশ সদর দপ্তর।দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন,পুলিশ সদর দপ্তরে সারা দেশের তথ্য সংরক্ষিত নেই। সংশ্লিষ্ট ইউনিট ডোপ টেস্টে মাদকাসক্ত হিসেবে শনাক্ত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেও পুলিশ সদর দপ্তরকে তা জানায় না।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

ডোপ টেস্টে ১১৬ মাদকাসক্ত পুলিশ চাকরিচ্যুত

আপডেট সময় : ০৬:০৫:৪৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৫ মার্চ ২০২৩

পুলিশ সদস্যদের মাদকমুক্ত করতে তিন বছর আগে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে (ডিএমপি) ডোপ টেস্ট বা মাদক পরীক্ষা শুরু হয়।এ সময়ের মধ্যে ডিএমপির কনস্টেবল থেকে উপপরিদর্শক (এসআই) পদমর্যাদার ১২৬ জন মাদকাসক্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন।চাকরিচ্যুত হয়েছেন ১১৬ জন।এ ছাড়া ব্যবস্থা নেওয়ার আগে একজন মারা গেছেন এবং আরেকজন অবসরে চলে গেছেন।বাকি আটজন শাস্তি দেওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যে আছেন।সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন,পুলিশকে মাদকমুক্ত ও সুশৃঙ্খল রাখতে এ পরীক্ষা চালু রাখা জরুরি।ডিএমপির পরিসংখ্যান অনুযায়ী,ডোপ টেস্টে বেশি পজিটিভ হয়েছেন পুলিশ কনস্টেবলরা।ডোপ টেস্টে মাদকাসক্ত হিসেবে শনাক্ত হওয়া ১২৬ পুলিশ সদস্যের মধ্যে ৯৮ জনই কনস্টেবল। বাকিদের মধ্যে একজন পুলিশ পরিদর্শক,১১ জন উপপরিদর্শক (এসআই),একজন ট্রাফিক সার্জেন্ট,সাতজন সহকারী উপরিদর্শক (এএসআই) এবং আটজন নায়েক।ডিএমপি সূত্র জানায়,২০২০ সালের ১০ মার্চ তৎকালীন ডিএমপি কমিশনার মো.শফিকুল ইসলাম পুলিশকে মাদকমুক্ত করতে ডিএমপিতে ডোপ টেস্ট (মাদকাসক্ত চিহ্নিতের পরীক্ষা) চালু করেন।

২০২০ সালের ১০ মার্চ থেকে ২০২২ সালের ২৭ জুলাই পর্যন্ত ডোপ টেস্টে ১২০ জন পুলিশ সদস্যকে মাদকাসক্ত হিসেবে শনাক্ত করা হয়।এর মধ্যে ২০২১ সালের মার্চ থেকে ২০২২ সালের জুলাই পর্যন্ত এই ১৬ মাসে মাত্র ২০ জন পুলিশ সদস্য শনাক্ত হন।ওই বছরের আগস্ট,সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে ডোপ টেস্টে কেউ মাদকাসক্ত হিসেবে শনাক্ত হননি।২০২২ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মাত্র ছয়জন পুলিশ সদস্য মাদকাসক্ত হিসেবে শনাক্ত হন।পরিসংখ্যানে দেখা গেছে,২০২০ সালের ১০ মার্চ থেকে ডিএমপিতে শুরু হওয়া এই ডোপ টেস্ট ২০২২ সালের জুলাই পর্যন্ত জোরেশোরে চলে।ওই বছরের আগস্ট থেকে ডোপ টেস্টে শনাক্তের সংখ্যা কমে গেছে।এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক সাংবাদিকদের বলেন,পুলিশের ডোপ টেস্ট বন্ধ হয়নি।এখন সন্দেহভাজন পুলিশ সদস্যকে এই ডোপ টেস্ট করা হয়। অনেকের চাকরি চলে যাওয়ায় পুলিশে মাদকাসক্তের সংখ্যা কমে গেছে।এই ডোপ টেস্ট অব্যাহত থাকবে।

যেভাবে ডোপ টেস্ট শুরু

ডিএমপি সূত্র বলছে, ২০২০ সালের শুরুতে ডিএমপিতে সাতজনের ডোপ টেস্ট করলে বেশির ভাগের ফল পজিটিভ আসে।পরে বিভিন্ন ইউনিটের আরও ১৮ জনের পরীক্ষা করলে একজনের পজিটিভ আসে। এতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সতর্ক হন।মাদকবিরোধী শুদ্ধি অভিযান শুরুর পর বিভিন্ন সূত্র থেকেও মাদকাসক্ত পুলিশ সদস্যদের ব্যাপারে তথ্য আসতে থাকে।এরপর রাজধানীর তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ড ও রেললাইন এলাকায় মাদকবিরোধী অভিযানে মাদক চক্রের ২১ কারবারিকে গ্রেপ্তার করে সংশ্লিষ্ট থানা-পুলিশ।পরে তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদে সংশ্লিষ্ট থানার কিছু পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মাদক কারবারের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়।কারবারিদের সহযোগিতাকারী হিসেবে প্রথমে শিল্পাঞ্চল থানার এক সহকারী উপপরিদর্শকের (এএসআই) নাম আসে।এরপর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মাসিক অপরাধ সভায় উপস্থিত ডিএমপির ৫০ থানার ওসিদের এ বিষয়ে সতর্ক করা হয়।

ডোপ টেস্টের উদ্যোক্তা সাবেক ডিএমপি কমিশনার মো. শফিকুল ইসলামের সঙ্গে এ নিয়ে কথা হয়। তিনি প্রথম আলোকে বলেন,গোপন অনুসন্ধানে তিনি জানতে পারেন,কোনো কোনো পুলিশ সদস্য বন্ধুর পাল্লায় পড়ে কৌতূহলী হয়ে প্রথমে মাদক গ্রহণ করেন।পরে ওই বন্ধুর চাপাচাপিতে আবারও মাদক নেন।পরে তিনি মাদকসেবী হয়ে পড়েন।তার সান্নিধ্যে এসে ওই পুলিশ সদস্যের ব্যাচমেট,পরে ব্যারাকের রুমমেট মাদকাসক্ত হচ্ছিলেন,প্রতিদিন তাঁদের তিনটির কম ইয়াবায় হতো না।এভাবে তিনটি ইয়াবা কিনতে তাঁর খরচ হতো ১ হাজার টাকা, সে হিসাবে মাসে খরচ হতো ৩০ হাজার টাকা।অথচ একজন পুলিশ কনস্টেবল বেতন পান ১৭ হাজার টাকা।মাদকের খরচ চালাতে মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে যান তাঁরা।এভাবে পুলিশ লাইনের অনেক সদস্য মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন।

শফিকুল ইসলাম বলেন,ডিএমপি কমিশনার থাকাকালে নিয়োগ পাওয়া তিন হাজার পুলিশ সদস্যকে প্রশিক্ষণের সময় ডোপ টেস্ট করিয়েছিলেন।সন্দেহভাজন মাদকাসক্ত পুলিশ সদস্যের তালিকা ধরে তিনি মাদক পরীক্ষা করেন।ডোপ টেস্টে শনাক্ত হওয়া পুলিশ সদস্যদের চাকরিচ্যুতির নোটিশ পাঠানোর পর এ খবর ছড়িয়ে পড়ে।এতে অনেকেই ভয়ে মাদকসেবন ও মাদক ব্যবসা ছেড়ে দেন।শেষমেশ তিনি অবসর নেওয়ার আগের তিন মাস (২০২২ সালের আগস্ট,সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর) ডোপ টেস্টে কোনো পুলিশ সদস্য পজিটিভ হননি।তাঁর মতে,এখন ডিএমপিতে মাদকাসক্তের সংখ্যা কমে গেছে।২০২২ সালের ৩০ অক্টোবর মো. শফিকুল ইসলাম অবসরকালীন ছুটিতে যান।

যেভাবে তালিকা হয়

বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করতে ডিএমপি কমিশনারের নিজস্ব গোয়েন্দা সংস্থা (ইন্টেলিজেন্স অ্যানালাইসিস ডিভিশন এনআইডি) পুলিশের মাদক সেবন ও মাদক সম্পৃক্ততার বিষয়ে তদন্ত শুরু করে। পাশাপাশি ডিএমপি সদর দপ্তর থেকে প্রতিটি ইউনিট ও বিভাগের উপকমিশনারদের চিঠি দিয়ে সন্দেহভাজন মাদকাসক্ত সদস্যদের তালিকা করতে বলা হয়।বিভিন্ন ইউনিট ও বিভাগের উপকমিশনাররা তালিকা পাঠালে তা যাচাই-বাছাই করে সন্দেহভাজন পুলিশ সদস্যদের তালিকা তৈরি করা হয়।পরে তাঁদের ডোপ টেস্ট করানো হয়।

পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মোখলেসুর রহমান গত রোববার রাতে সাংবাদিকদের বলেন,পুলিশকে মাদকমুক্ত ও সুশৃঙ্খল করতে অবশ্যই ডোপ টেস্ট চালু রাখতে হবে।তাঁর মতে,ডোপ টেস্টে ভাটা পড়লে পুলিশ কর্তৃপক্ষের এ উদ্যোগ চালু করতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের স্মরণ করিয়ে দিলে তা আবার চাঙা হবে।এতে ডোপ টেস্টের প্রবণতা আবার স্বাভাবিক হবে।শনাক্তের হার কমে যাওয়া প্রসঙ্গে মোখলেসুর মনে করেন,ডোপ টেস্ট চালু থাকায় সবাই সতর্ক হয়ে গেছেন,সেই জন্য হয়তো ধরা পড়ছে কম।তবে ডিএমপিতে মাদকাসক্ত পুলিশের সংখ্যা জানা গেলেও ডোপ টেস্টে সারা দেশে শনাক্ত হওয়া মাদকাসক্ত পুলিশ সদস্যদের সংখ্যা জানাতে পারেনি পুলিশ সদর দপ্তর।দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন,পুলিশ সদর দপ্তরে সারা দেশের তথ্য সংরক্ষিত নেই। সংশ্লিষ্ট ইউনিট ডোপ টেস্টে মাদকাসক্ত হিসেবে শনাক্ত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেও পুলিশ সদর দপ্তরকে তা জানায় না।