ঢাকা ০২:০৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২১ নভেম্বর ২০২৫, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা এখনো আক্রমণের মুখে: সম্পাদক পরিষদ হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ট্রাষ্টের মাসবপ্যাপী সেহরি বিতরণ চলমান আজ বিশ্ব পুরুষ দিবস ৫ খাবারে কিডনি থাকবে সুস্থ দুবাইয়ে ঐশ্বর্য-সালমান-সানিয়া-শাহরুখদের বিলাসবহুল আবাসন, দাম কত? দুই কিংবদন্তিকে ছাড়িয়ে যাওয়ার পথে মুশফিক নির্বাচন উৎসবমুখর করতে সেনাবাহিনীর সহায়তা দরকার: প্রধান উপদেষ্টা জাতিসংঘ প্রতিবেদনকে ঐতিহাসিক ঘোষণা দিয়ে হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হবীগঞ্জ নবীগঞ্জে থামছেনা টিলা কাটা হবিগঞ্জ রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে নার্সকে মারধরের ঘটনায় কর্মবিরতী সুনামগঞ্জে তাহিরপুরে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে ইউএন অভিযান দ্বীপের শেষ বিদায়ে অশ্রুধারা

লেবানিজ সেনাবাহিনী কি ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে প্রস্তুত?

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১০:২১:৪৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১ নভেম্বর ২০২৫ ১১ বার পড়া হয়েছে

ভিউ নিউজ ৭১ ডেস্ক :

লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলের ব্লেইদা এলাকায় ইসরাইলি বাহিনীর সাম্প্রতিক হামলায় এক পৌর কর্মচারী নিহত হওয়ার পর দেশটির প্রেসিডেন্ট এক নজিরবিহীন নির্দেশ জারি করেছেন।ওই নির্দেশে বলা হয়েছে ইসরাইলি যেকোনো অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীকে সরাসরি মোকাবিলায় নামতে হবে।

সম্প্রতি ইসরাইলি সেনারা লেবাননের দক্ষিণ সীমান্তে এক সামরিক অভিযান চালায়। এতে ব্লেইদা শহরের পৌর কার্যালয়ে কর্মরত ইব্রাহিম সালামা নিহত হন। এর পরপরই ইসরাইলি যুদ্ধবিমানগুলো দক্ষিণ লেবাননের বিভিন্ন এলাকা বোমাবর্ষণ করে। তেলআবিবের দাবি—তারা নাকি ‘হিজবুল্লাহ-সংশ্লিষ্ট অবকাঠামো’ লক্ষ্যবস্তু করেছে।

লেবানিজ সেনাবাহিনীর প্রতিক্রিয়া

লেবাননের সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে এই হামলাকে ‘অপরাধমূলক, সার্বভৌমত্বের স্পষ্ট লঙ্ঘন এবং জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ১৭০১ নম্বর প্রস্তাবের সুস্পষ্ট অবমাননা’ হিসেবে অভিহিত করেছে।

বিবৃতিতে জাতিসংঘের যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণ কমিটিকে ইসরাইলের আগ্রাসন থামাতে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। 

অন্যদিকে এ ঘটনার পরই ইসরাইলের যেকোনো সামরিক অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে নিজ সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দেন লেবানিজ প্রেসিডেন্ট জেনারেল জোসেফ আউন।

উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো— ইসরাইলি সেনাদের সীমান্ত লঙ্ঘন ও বারবার যুদ্ধবিরতি ভঙ্গের দীর্ঘ সময় পর এ ধরনের নির্দেশ দেওয়া হলো।

কেন এই নির্দেশ গুরুত্বপূর্ণ?

গত কয়েক দশকে লেবাননের সেনাবাহিনী সরাসরি ইসরাইলের সঙ্গে যুদ্ধে জড়ায়নি। দেশটির দক্ষিণাঞ্চলে ইসরাইলি আগ্রাসনের মোকাবিলা করেছে প্রধানত হিজবুল্লাহ ও অন্যান্য প্রতিরোধ বাহিনী।

কেননা, লেবাননের সেনাবাহিনী সামরিক সক্ষমতা, অস্ত্রশক্তি ও অবকাঠামোগত প্রস্তুতির দিক থেকে ইসরাইলি সেনাবাহিনীর সমকক্ষ নয় বর্তমানে দেশটির সেনাবাহিনী পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ পরিচালনার মতো সামর্থ্যও রাখে না। 

লেবাননের সামরিক সক্ষমতা ও সীমাবদ্ধতা

লেবাননের সংবিধান অনুযায়ী, দেশের প্রতিরক্ষার দায়িত্ব একমাত্র সেনাবাহিনীর হাতে। কিন্তু বাস্তবে পরিস্থিতি ভিন্ন। লেবাননের সেনাবাহিনী অস্ত্র ও অর্থের দিক থেকে বিদেশি সহায়তার ওপর নির্ভরশীল। যুক্তরাষ্ট্র হচ্ছে তাদের সবচেয়ে বড় পৃষ্ঠপোষক—যারা সেনা সদস্যদের বেতন ও হালকা অস্ত্র সরবরাহে সহায়তা করে।

সামরিক সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, লেবাননের সেনাবাহিনীর স্থল, নৌ ও বিমান বাহিনীতে প্রায় ৫০,০০০ সদস্য রয়েছে। এই সেনাবাহিনীর কাছে কোন যুদ্ধবিমান নেই এবং তাদের হাতে ৭০টিরও কম হেলিকপ্টার রয়েছে, যার বেশিরভাগই প্রশিক্ষণ, উদ্ধার ও অগ্নিনির্বাপণের কাজে ব্যবহৃত হয়। স্থল বাহিনীতে তাদের প্রায় ২০০ ট্যাঙ্ক এবং হাজার হাজার সাঁজোয়া যান রয়েছে, যেগুলোর বেশিরভাগই সোভিয়েত ইউনিয়নের আমলের।

ইসরাইলিদের দৃষ্টিতে লেবাননের সেনাবাহিনী

ইসরাইলের অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল আসাফ ওরিয়ন লেবাননের সেনাবাহিনীকে ‘একটি বশীভূত বাহিনী’ বলে অভিহিত করেছেন যাকে পশ্চিমা দেশগুলো সমর্থন করে এবং যার জন্য জাতিসংঘ খাদ্য ও জ্বালানি সরবরাহ করে।

এছাড়া ইসরাইলি গবেষণা প্রতিষ্ঠান আলমা সেন্টারের গবেষণা বিভাগের প্রধান তাল বেইরি মনে করেন, লেবানিজ সেনাবাহিনীর অস্ত্রশস্ত্র এতটাই পুরোনো যে, তা ইসরাইলের জন্য কোনো বাস্তব হুমকি নয়।

এই ঘটনাগুলো এমন সময় ঘটছে, যখন লেবাননের দক্ষিণ সীমান্তে উত্তেজনা বাড়ছে এবং গত নভেম্বরের ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতির ভবিষ্যত অনিশ্চয়তার ঘেরাটোপে রয়েছে।

এ অবস্থায় লেবাননের সেনাবাহিনী কি সংঘর্ষের নতুন পর্যায়ে প্রবেশ করবে? নাকি এই নির্দেশটি কেবল আরও আগ্রাসন রোধ করার জন্য একটি রাজনৈতিক বার্তা?

সময়ই বলে দেবে, লেবানন কি সত্যিই যুদ্ধের পথে যাচ্ছে, নাকি কূটনৈতিক ভারসাম্য রক্ষার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে? 

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

লেবানিজ সেনাবাহিনী কি ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে প্রস্তুত?

আপডেট সময় : ১০:২১:৪৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১ নভেম্বর ২০২৫

ভিউ নিউজ ৭১ ডেস্ক :

লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলের ব্লেইদা এলাকায় ইসরাইলি বাহিনীর সাম্প্রতিক হামলায় এক পৌর কর্মচারী নিহত হওয়ার পর দেশটির প্রেসিডেন্ট এক নজিরবিহীন নির্দেশ জারি করেছেন।ওই নির্দেশে বলা হয়েছে ইসরাইলি যেকোনো অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীকে সরাসরি মোকাবিলায় নামতে হবে।

সম্প্রতি ইসরাইলি সেনারা লেবাননের দক্ষিণ সীমান্তে এক সামরিক অভিযান চালায়। এতে ব্লেইদা শহরের পৌর কার্যালয়ে কর্মরত ইব্রাহিম সালামা নিহত হন। এর পরপরই ইসরাইলি যুদ্ধবিমানগুলো দক্ষিণ লেবাননের বিভিন্ন এলাকা বোমাবর্ষণ করে। তেলআবিবের দাবি—তারা নাকি ‘হিজবুল্লাহ-সংশ্লিষ্ট অবকাঠামো’ লক্ষ্যবস্তু করেছে।

লেবানিজ সেনাবাহিনীর প্রতিক্রিয়া

লেবাননের সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে এই হামলাকে ‘অপরাধমূলক, সার্বভৌমত্বের স্পষ্ট লঙ্ঘন এবং জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ১৭০১ নম্বর প্রস্তাবের সুস্পষ্ট অবমাননা’ হিসেবে অভিহিত করেছে।

বিবৃতিতে জাতিসংঘের যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণ কমিটিকে ইসরাইলের আগ্রাসন থামাতে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। 

অন্যদিকে এ ঘটনার পরই ইসরাইলের যেকোনো সামরিক অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে নিজ সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দেন লেবানিজ প্রেসিডেন্ট জেনারেল জোসেফ আউন।

উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো— ইসরাইলি সেনাদের সীমান্ত লঙ্ঘন ও বারবার যুদ্ধবিরতি ভঙ্গের দীর্ঘ সময় পর এ ধরনের নির্দেশ দেওয়া হলো।

কেন এই নির্দেশ গুরুত্বপূর্ণ?

গত কয়েক দশকে লেবাননের সেনাবাহিনী সরাসরি ইসরাইলের সঙ্গে যুদ্ধে জড়ায়নি। দেশটির দক্ষিণাঞ্চলে ইসরাইলি আগ্রাসনের মোকাবিলা করেছে প্রধানত হিজবুল্লাহ ও অন্যান্য প্রতিরোধ বাহিনী।

কেননা, লেবাননের সেনাবাহিনী সামরিক সক্ষমতা, অস্ত্রশক্তি ও অবকাঠামোগত প্রস্তুতির দিক থেকে ইসরাইলি সেনাবাহিনীর সমকক্ষ নয় বর্তমানে দেশটির সেনাবাহিনী পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ পরিচালনার মতো সামর্থ্যও রাখে না। 

লেবাননের সামরিক সক্ষমতা ও সীমাবদ্ধতা

লেবাননের সংবিধান অনুযায়ী, দেশের প্রতিরক্ষার দায়িত্ব একমাত্র সেনাবাহিনীর হাতে। কিন্তু বাস্তবে পরিস্থিতি ভিন্ন। লেবাননের সেনাবাহিনী অস্ত্র ও অর্থের দিক থেকে বিদেশি সহায়তার ওপর নির্ভরশীল। যুক্তরাষ্ট্র হচ্ছে তাদের সবচেয়ে বড় পৃষ্ঠপোষক—যারা সেনা সদস্যদের বেতন ও হালকা অস্ত্র সরবরাহে সহায়তা করে।

সামরিক সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, লেবাননের সেনাবাহিনীর স্থল, নৌ ও বিমান বাহিনীতে প্রায় ৫০,০০০ সদস্য রয়েছে। এই সেনাবাহিনীর কাছে কোন যুদ্ধবিমান নেই এবং তাদের হাতে ৭০টিরও কম হেলিকপ্টার রয়েছে, যার বেশিরভাগই প্রশিক্ষণ, উদ্ধার ও অগ্নিনির্বাপণের কাজে ব্যবহৃত হয়। স্থল বাহিনীতে তাদের প্রায় ২০০ ট্যাঙ্ক এবং হাজার হাজার সাঁজোয়া যান রয়েছে, যেগুলোর বেশিরভাগই সোভিয়েত ইউনিয়নের আমলের।

ইসরাইলিদের দৃষ্টিতে লেবাননের সেনাবাহিনী

ইসরাইলের অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল আসাফ ওরিয়ন লেবাননের সেনাবাহিনীকে ‘একটি বশীভূত বাহিনী’ বলে অভিহিত করেছেন যাকে পশ্চিমা দেশগুলো সমর্থন করে এবং যার জন্য জাতিসংঘ খাদ্য ও জ্বালানি সরবরাহ করে।

এছাড়া ইসরাইলি গবেষণা প্রতিষ্ঠান আলমা সেন্টারের গবেষণা বিভাগের প্রধান তাল বেইরি মনে করেন, লেবানিজ সেনাবাহিনীর অস্ত্রশস্ত্র এতটাই পুরোনো যে, তা ইসরাইলের জন্য কোনো বাস্তব হুমকি নয়।

এই ঘটনাগুলো এমন সময় ঘটছে, যখন লেবাননের দক্ষিণ সীমান্তে উত্তেজনা বাড়ছে এবং গত নভেম্বরের ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতির ভবিষ্যত অনিশ্চয়তার ঘেরাটোপে রয়েছে।

এ অবস্থায় লেবাননের সেনাবাহিনী কি সংঘর্ষের নতুন পর্যায়ে প্রবেশ করবে? নাকি এই নির্দেশটি কেবল আরও আগ্রাসন রোধ করার জন্য একটি রাজনৈতিক বার্তা?

সময়ই বলে দেবে, লেবানন কি সত্যিই যুদ্ধের পথে যাচ্ছে, নাকি কূটনৈতিক ভারসাম্য রক্ষার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে?