ঢাকা ১২:০৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৫, ১ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা এখনো আক্রমণের মুখে: সম্পাদক পরিষদ হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ট্রাষ্টের মাসবপ্যাপী সেহরি বিতরণ চলমান যে দেশে মানুষের চেয়ে বিড়াল বেশি হবিগঞ্জ শায়েস্তাগঞ্জে ৩ জন ট্রেনের টিকেট কালোবাজারীকে আটক করেছে র‌্যাব ॥ ভ্রাম্যমান আদালতের ১৫ দিনের কারাদণ্ড মাদক ও চোরাচালানের ভয়ঙ্কর বাস্তবতার মুখোমুখি সিলেটের ১৩টি উপজেলার প্রত্যান্ত অঞ্চল সিলেটের জরুরী উন্নয়ন কাজের জন্য যেসব এলাকায় বিদ্যুৎ থাকবেনা জলবায়ু ঋণ বাতিল করার দাবিতে- সিলেটে সাইকেল র‍্যালি ভারতে হবিগঞ্জের ৩ জনকে পিটিয়ে- তীর মেরে হত্যা সিলেটের এইচএসসির ফল প্রকাশ-পাসের হার শতভাগ মাত্র ৩টি, শতভাগ ফেল ৪ প্রতিষ্ঠানে ডিসির ঘোষনায়ে সিলেট রেলওয়ে স্টেশনের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ সিলেটে জৈন্তাপুর ও কানাইঘাট সীমান্তে আটক ৩১ লাখ টাকার ও চোরাই পণ্য সিলেটের আদালতে সাংবাদিকদের ‍উপর আ সা মী র হামলা

মাদক ও চোরাচালানের ভয়ঙ্কর বাস্তবতার মুখোমুখি সিলেটের ১৩টি উপজেলার প্রত্যান্ত অঞ্চল

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০২:৩৮:১৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫ ২ বার পড়া হয়েছে

ভিউ নিউজ ৭১ ডেস্ক :

বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব সীমান্তঘেঁষা জেলা সিলেট এখন যেন রূপ নিয়েছে এক অবৈধ আমদানির মূল রুটে। জেলার আকাশে যেন ঘনিয়ে এসেছে অপরাধের কালো মেঘ। চুরি, ছিনতাই, মাদক, চোরাচালান সব মিলে এক ভয়ঙ্কর বাস্তবতার মুখোমুখি সিলেটের ১৩টি উপজেলার প্রত্যান্ত অঞ্চলগুলো। প্রতিদিন এই পথ দিয়ে ঢুকছে কোটি কোটি টাকার ভারতীয় পণ্য। চিনি, চা-পাতা, মদ, এমনকি ফ্রোজেন মাংস পর্যন্ত। সঙ্গে রয়েছে মাদক সিন্ডিকেটের তৎপরতা। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে সিলেটের বিভিন্ন উপজেলা হয়ে এসব পণ্য ছড়িয়ে পড়ছে দেশের নানা প্রান্তে।  একদিকে সাধারণ মানুষ ভয়ে দিন কাটাচ্ছেন আবার অন্যদিকে প্রশাসনের ব্যস্ততা বেড়েছে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে। পুলিশের সাফল্যের গল্প যেমন আছে ঠিক তেমনি আছে  প্রশাসনের কাছে সাধারণ জনগনের প্রশ্ন? সিলেটের অপরাধ আসলে কতোটুকু নিয়ন্ত্রণে রয়েছে?

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সিলেট জেলায় ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত মাত্র এক বছরের ব্যবধানে সিলেটের ১৩টি থানায় মামলা হয়েছে ২১৫টি। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি চুরির মামলা এবং সবচেয়ে কম ছিল চাঁদাবাজির মামলা । বছরজুড়ে পরিসংখ্যান অনুযায়ী চুরির মামলা ১৮০ টি, দস্যুতা মামলা ১৬টি, ডাকাতি মামলা ১২টি, ছিনতাই মামলা ৪টি, চাঁদাবাজি মামলা ৩টি দায়ের করা হয়েছে। অপরাধ প্রবণতায় দায়েরকৃত সর্বমোট ২১৫ টি মামলায় একবছরে গ্রেফতার করা হয়েছে ২০৮৭ জনকে।

অন্যদিকে, মাদক ও চোরাচালানের পরিসংখ্যান আরও উদ্বেগজনক। সিলেট জেলা পুলিশের অভিযানে ধরা পড়েছে কোটি কোটি টাকার অবৈধ পণ্য ও মাদক। সীমান্তবর্তী এই জেলায় প্রতিদিনই ঢুকছে ভারতীয় অবৈধ চিনি, মদ, চা-পাতা, এমনকি গরু ও ফ্রোজেন মাংস পর্যন্ত। এসব ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ ও স্থানীয় চক্রগুলোর প্রভাব নিয়ে। পুলিশ অপরাধ দমনে অভিযান চালালেও, পরিসংখ্যান বলছে, অপরাধ এখনো বহুমাত্রিক এবং বিস্তৃত। একদিকে গ্রেফতারের সংখ্যা বাড়ছে, অন্যদিকে অপরাধের ধরন ও পরিমাণও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে।

সিলেট জেলা পুলিশের হাতে সিলেটের ১৩টি থানায় গত এক বছরে আটককৃত মাদকের পরিমাণ ছিল অতুলনীয়। যারমধ্যে গাঁজা ২৬কেজি ১৯০ গ্রাম, ইয়াবা বড়ি ৫০ হাজার ৮২২ পিস, বিদেশী মদ ২ হাজার ২৮১ বোতল, বিয়ার ১৭৫ ক্যান, ফেন্সিডিল ৯৬৫ বোতল। যার আনুমানিক বাজার মূল্য ১ কোটি ৩৯ লাখ ৭৯ হাজার ৬৭২ টাকা।

গত এক বছরে সিলেটের বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে বিপুল সংখ্যক চোরাচালান পণ্য আটক করে সিলেট জেলা পুলিশ। আটককৃত চোরাচালানের মধ্যে ভারতীয় অবৈধ চিনি ৩ লাখ ৩ হাজার ৫২৪ কেজি, গরু ৯৪ টি, মহিষ ৭ টি, শেখ নাসির উদ্দিন বিড়ি (পাতার বিড়ি) ৬ লাখ ৭০ হাজার ২১২ শলাকা, বিভিন্ন ধরনের কাপড় ৪ হাজার ৫৫৩ পিস, চা-পাতা ৩ হাজার ৮৭৪ কেজি, চশমা ১৪ হাজার ২৩৮ পিস, চকলেট ১ লাখ ৫৪ হাজার ১৯৮ পিস, সিগারেট ৮ হাজার ৪৩৫ প্যাকেট, লোশন ৫৯৯ পিস, টুথপেস্ট ৪৫ পিস, ফেইসওয়াশ ১ হাজার ৩০৫ পিস, সাবান ১ হাজার ৮০০ পিস, মেহেদী ৪ হাজার ২০০ প্যাকেট, রসূন ৩৪০ কেজি, বিস্কুট ১ হাজার ৪৮৮ প্যাকেট, ফুসকা ৩৩৬ প্যাকেট, ভারতীয় অবৈধ মদ ৫৯ বোতল, বিয়ার ৪৮ ক্যান, রেডবোল এনার্জি ড্রিংক ৫ হাজার ৫৮৬ পিস, সুপারি ৭২০ কেজি, কম্বল ১৯ টি, মাল্টা ১৫৫ কার্টুন, ক্রিম ১২ হাজার ৩৪০ পিস, জুতা ৪০ জোড়া, বাসমতি চাল ৯ হাজার ৬৯১ কেজি, গুড়া দুধ ৩ হাজার ১৫০ কেজি, তৈল ১ হাজার ৫৪০ কেজি, চুইঝাল ১ হাজার ৫০০ কেজি, ফ্রোজেন গরু মাংশ ৪ হাজার কেজি, ৩ লাখ ৮৯ হাজার টাকা মূল্যের ভারতীয় বিভিন্ন ধরনের ঔষধ এবং ৫ লাখ ৫৯ হাজার ৩২০ টাকা মূল্যের ভারতীয় বিভিন্ন ধরনের প্রসাধনী সামগ্রী। সিলেট জেলা পুলিশ কতৃক গত ১ বছরে আটককৃত চোরাচালানের মালামালের আনুমানিক মূল্য ২০ কোটি ৪০ লাখ ৩৮ হাজার ৮১৬ টাকা।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০২৪ সালের শেষ প্রান্তে দীর্ঘদিনের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের পট পরিবর্তনের পর থেকেই দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এক অনিশ্চয়তায় পড়ে যায়। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে অপরাধ বেড়ে যায় চোখে পড়ার মতো। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভ্যন্তরীণ পুনর্বিন্যাস, প্রশাসনিক শিথিলতা এবং রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের অন্তর্দ্বন্দ্বের সুযোগে সন্ত্রাস, মাদক ও চোরাচালান নিয়ন্ত্রণে মারাত্মক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। তবে বর্তমান সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, তারা নতুন বাস্তবতায় দ্রুত অভিযানে গতি বাড়িয়েছে এবং অপরাধ নিয়ন্ত্রণে জনগণের সহযোগিতা ছাড়া সাফল্য সম্ভব নয়।

একটি জাতীয় অপরাধ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত দেশে মোট অপরাধের হার বেড়েছে প্রায় ১৮%। এর মধ্যে সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে মাদক ও চোরাচালান-সংক্রান্ত অপরাধ বেড়েছে ২৫%। সিলেট জেলা তার অন্যতম নজির। সরকারের পরিবর্তন এবং প্রশাসনের অস্থিরতার সুযোগে অনেক স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে।

সিলেট জেলা পুলিশের মিডিয়া অফিসার (এএসপি) মো. সম্রাট তালুকদার সিলেটভিউকে বলেন, ‘আমরা সিলেট জেলাকে অপরাধমুক্ত, মাদকমুক্ত ও নিরাপদ একটি জনপদে পরিণত করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। গত এক বছরে আমরা নিয়মিত অভিযান চালিয়ে হাজারেরও বেশি অপরাধীকে আইনের আওতায় এনেছি। বিপুল পরিমাণ মাদক ও চোরাচালান আটক করেছি। এটি আমাদের একক কোনো কৃতিত্ব নয়, বরং এটি সম্ভব হয়েছে জনগণের আস্থা, তথ্য এবং সহযোগিতার ফলে। তবে বাস্তবতা হলো, অপরাধ ও অপরাধী এখন আরও চালাক, আধুনিক এবং সংঘবদ্ধ। চোরাচালান ও মাদক ব্যবসা আন্তর্জাতিক সীমান্ত জুড়ে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেট দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। যাদের টাকার জোর ও পেশিশক্তি রয়েছে। তবুও আমরা নির্ভীকভাবে এই চক্রগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি, এবং ভবিষ্যতে আরও কঠোর হতে যাচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, ‘আগামীর সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে মাদক বা চোরাচালানের যেকোনো তথ্য থাকলে পুলিশকে জানিয়ে সহযোগিতার হাত বাড়াতে সবাইকে আহ্বান জানান। সিলেট জেলার প্রতিটি মানুষকে সঙ্গে নিয়ে আমরা একটি নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ সমাজ গড়তে চাই।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

মাদক ও চোরাচালানের ভয়ঙ্কর বাস্তবতার মুখোমুখি সিলেটের ১৩টি উপজেলার প্রত্যান্ত অঞ্চল

আপডেট সময় : ০২:৩৮:১৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫

ভিউ নিউজ ৭১ ডেস্ক :

বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব সীমান্তঘেঁষা জেলা সিলেট এখন যেন রূপ নিয়েছে এক অবৈধ আমদানির মূল রুটে। জেলার আকাশে যেন ঘনিয়ে এসেছে অপরাধের কালো মেঘ। চুরি, ছিনতাই, মাদক, চোরাচালান সব মিলে এক ভয়ঙ্কর বাস্তবতার মুখোমুখি সিলেটের ১৩টি উপজেলার প্রত্যান্ত অঞ্চলগুলো। প্রতিদিন এই পথ দিয়ে ঢুকছে কোটি কোটি টাকার ভারতীয় পণ্য। চিনি, চা-পাতা, মদ, এমনকি ফ্রোজেন মাংস পর্যন্ত। সঙ্গে রয়েছে মাদক সিন্ডিকেটের তৎপরতা। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে সিলেটের বিভিন্ন উপজেলা হয়ে এসব পণ্য ছড়িয়ে পড়ছে দেশের নানা প্রান্তে।  একদিকে সাধারণ মানুষ ভয়ে দিন কাটাচ্ছেন আবার অন্যদিকে প্রশাসনের ব্যস্ততা বেড়েছে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে। পুলিশের সাফল্যের গল্প যেমন আছে ঠিক তেমনি আছে  প্রশাসনের কাছে সাধারণ জনগনের প্রশ্ন? সিলেটের অপরাধ আসলে কতোটুকু নিয়ন্ত্রণে রয়েছে?

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সিলেট জেলায় ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত মাত্র এক বছরের ব্যবধানে সিলেটের ১৩টি থানায় মামলা হয়েছে ২১৫টি। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি চুরির মামলা এবং সবচেয়ে কম ছিল চাঁদাবাজির মামলা । বছরজুড়ে পরিসংখ্যান অনুযায়ী চুরির মামলা ১৮০ টি, দস্যুতা মামলা ১৬টি, ডাকাতি মামলা ১২টি, ছিনতাই মামলা ৪টি, চাঁদাবাজি মামলা ৩টি দায়ের করা হয়েছে। অপরাধ প্রবণতায় দায়েরকৃত সর্বমোট ২১৫ টি মামলায় একবছরে গ্রেফতার করা হয়েছে ২০৮৭ জনকে।

অন্যদিকে, মাদক ও চোরাচালানের পরিসংখ্যান আরও উদ্বেগজনক। সিলেট জেলা পুলিশের অভিযানে ধরা পড়েছে কোটি কোটি টাকার অবৈধ পণ্য ও মাদক। সীমান্তবর্তী এই জেলায় প্রতিদিনই ঢুকছে ভারতীয় অবৈধ চিনি, মদ, চা-পাতা, এমনকি গরু ও ফ্রোজেন মাংস পর্যন্ত। এসব ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ ও স্থানীয় চক্রগুলোর প্রভাব নিয়ে। পুলিশ অপরাধ দমনে অভিযান চালালেও, পরিসংখ্যান বলছে, অপরাধ এখনো বহুমাত্রিক এবং বিস্তৃত। একদিকে গ্রেফতারের সংখ্যা বাড়ছে, অন্যদিকে অপরাধের ধরন ও পরিমাণও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে।

সিলেট জেলা পুলিশের হাতে সিলেটের ১৩টি থানায় গত এক বছরে আটককৃত মাদকের পরিমাণ ছিল অতুলনীয়। যারমধ্যে গাঁজা ২৬কেজি ১৯০ গ্রাম, ইয়াবা বড়ি ৫০ হাজার ৮২২ পিস, বিদেশী মদ ২ হাজার ২৮১ বোতল, বিয়ার ১৭৫ ক্যান, ফেন্সিডিল ৯৬৫ বোতল। যার আনুমানিক বাজার মূল্য ১ কোটি ৩৯ লাখ ৭৯ হাজার ৬৭২ টাকা।

গত এক বছরে সিলেটের বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে বিপুল সংখ্যক চোরাচালান পণ্য আটক করে সিলেট জেলা পুলিশ। আটককৃত চোরাচালানের মধ্যে ভারতীয় অবৈধ চিনি ৩ লাখ ৩ হাজার ৫২৪ কেজি, গরু ৯৪ টি, মহিষ ৭ টি, শেখ নাসির উদ্দিন বিড়ি (পাতার বিড়ি) ৬ লাখ ৭০ হাজার ২১২ শলাকা, বিভিন্ন ধরনের কাপড় ৪ হাজার ৫৫৩ পিস, চা-পাতা ৩ হাজার ৮৭৪ কেজি, চশমা ১৪ হাজার ২৩৮ পিস, চকলেট ১ লাখ ৫৪ হাজার ১৯৮ পিস, সিগারেট ৮ হাজার ৪৩৫ প্যাকেট, লোশন ৫৯৯ পিস, টুথপেস্ট ৪৫ পিস, ফেইসওয়াশ ১ হাজার ৩০৫ পিস, সাবান ১ হাজার ৮০০ পিস, মেহেদী ৪ হাজার ২০০ প্যাকেট, রসূন ৩৪০ কেজি, বিস্কুট ১ হাজার ৪৮৮ প্যাকেট, ফুসকা ৩৩৬ প্যাকেট, ভারতীয় অবৈধ মদ ৫৯ বোতল, বিয়ার ৪৮ ক্যান, রেডবোল এনার্জি ড্রিংক ৫ হাজার ৫৮৬ পিস, সুপারি ৭২০ কেজি, কম্বল ১৯ টি, মাল্টা ১৫৫ কার্টুন, ক্রিম ১২ হাজার ৩৪০ পিস, জুতা ৪০ জোড়া, বাসমতি চাল ৯ হাজার ৬৯১ কেজি, গুড়া দুধ ৩ হাজার ১৫০ কেজি, তৈল ১ হাজার ৫৪০ কেজি, চুইঝাল ১ হাজার ৫০০ কেজি, ফ্রোজেন গরু মাংশ ৪ হাজার কেজি, ৩ লাখ ৮৯ হাজার টাকা মূল্যের ভারতীয় বিভিন্ন ধরনের ঔষধ এবং ৫ লাখ ৫৯ হাজার ৩২০ টাকা মূল্যের ভারতীয় বিভিন্ন ধরনের প্রসাধনী সামগ্রী। সিলেট জেলা পুলিশ কতৃক গত ১ বছরে আটককৃত চোরাচালানের মালামালের আনুমানিক মূল্য ২০ কোটি ৪০ লাখ ৩৮ হাজার ৮১৬ টাকা।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০২৪ সালের শেষ প্রান্তে দীর্ঘদিনের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের পট পরিবর্তনের পর থেকেই দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এক অনিশ্চয়তায় পড়ে যায়। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে অপরাধ বেড়ে যায় চোখে পড়ার মতো। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভ্যন্তরীণ পুনর্বিন্যাস, প্রশাসনিক শিথিলতা এবং রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের অন্তর্দ্বন্দ্বের সুযোগে সন্ত্রাস, মাদক ও চোরাচালান নিয়ন্ত্রণে মারাত্মক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। তবে বর্তমান সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, তারা নতুন বাস্তবতায় দ্রুত অভিযানে গতি বাড়িয়েছে এবং অপরাধ নিয়ন্ত্রণে জনগণের সহযোগিতা ছাড়া সাফল্য সম্ভব নয়।

একটি জাতীয় অপরাধ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত দেশে মোট অপরাধের হার বেড়েছে প্রায় ১৮%। এর মধ্যে সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে মাদক ও চোরাচালান-সংক্রান্ত অপরাধ বেড়েছে ২৫%। সিলেট জেলা তার অন্যতম নজির। সরকারের পরিবর্তন এবং প্রশাসনের অস্থিরতার সুযোগে অনেক স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে।

সিলেট জেলা পুলিশের মিডিয়া অফিসার (এএসপি) মো. সম্রাট তালুকদার সিলেটভিউকে বলেন, ‘আমরা সিলেট জেলাকে অপরাধমুক্ত, মাদকমুক্ত ও নিরাপদ একটি জনপদে পরিণত করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। গত এক বছরে আমরা নিয়মিত অভিযান চালিয়ে হাজারেরও বেশি অপরাধীকে আইনের আওতায় এনেছি। বিপুল পরিমাণ মাদক ও চোরাচালান আটক করেছি। এটি আমাদের একক কোনো কৃতিত্ব নয়, বরং এটি সম্ভব হয়েছে জনগণের আস্থা, তথ্য এবং সহযোগিতার ফলে। তবে বাস্তবতা হলো, অপরাধ ও অপরাধী এখন আরও চালাক, আধুনিক এবং সংঘবদ্ধ। চোরাচালান ও মাদক ব্যবসা আন্তর্জাতিক সীমান্ত জুড়ে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেট দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। যাদের টাকার জোর ও পেশিশক্তি রয়েছে। তবুও আমরা নির্ভীকভাবে এই চক্রগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি, এবং ভবিষ্যতে আরও কঠোর হতে যাচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, ‘আগামীর সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে মাদক বা চোরাচালানের যেকোনো তথ্য থাকলে পুলিশকে জানিয়ে সহযোগিতার হাত বাড়াতে সবাইকে আহ্বান জানান। সিলেট জেলার প্রতিটি মানুষকে সঙ্গে নিয়ে আমরা একটি নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ সমাজ গড়তে চাই।