আপডেট সময় :
১০:৫৫:০৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২২ অক্টোবর ২০২৩
১২৫
বার পড়া হয়েছে
ভিউ নিউজ ৭১ ডেস্ক: অনলাইন সংস্করণ
আগে যেখানে ক্যানটিন ছিল,সেখানে এখন হয়েছে দশতলা একাডেমিক ভবন।খোলা জায়গাটাতে চোখে পড়ে ফুলের বাগান। ক্যাম্পাসজুড়ে দাঁড়িয়ে থাকা টিলায় টিলায় বেড়েছে গাছের সংখ্যাও।সুউচ্চ ভবন থেকে রবীন্দ্র-নজরুল-বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল অনেক কিছুই গত কয়েক বছরে নির্মাণ করা হয়েছে। তবে বদলায়নি আড্ডা। আগেও যেমন হতো, এখনো তেমন।পুকুরপাড়,মিলনায়তন,পুরোনো কলাভবনের পাশে সব জায়গায় শিক্ষার্থীদের আড্ডা আগের মতোই চোখে পড়ে।পড়ালেখার পাশাপাশি এই শিক্ষার্থী আর এই আড্ডাই তো মুরারিচাঁদ কলেজ ক্যাম্পাসের প্রাণ।
সিলেটের মুরারিচাঁদ কলেজটি এমসি কলেজ নামেই সুপরিচিত।১৮৯২ সালে রাজা গিরিশচন্দ্র রায় এটি প্রতিষ্ঠা করেন।নগরের টিলাগড় এলাকায় ১২৪ একর জায়গার ওপর অবস্থিত এ কলেজের লাইব্রেরিতে আছে প্রায় ৬০ হাজার বই। এখানে একটি করে বোটানিক্যাল গার্ডেন ও জুলজিক্যাল মিউজিয়াম আছে। সহশিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে অন্তত ২০টি সংগঠন। মোট শিক্ষার্থী প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার। উচ্চমাধ্যমিকের পাশাপাশি এখানে স্নাতক (পাস),১৫টি বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) ও ১৬টি বিষয়ে স্নাতকোত্তর পড়ানো হয়। শিক্ষক আছেন ১৩০ জন।গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাগর চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ১৩১ বছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী কলেজটি শুধু শিক্ষা ক্ষেত্রেই যে অবদান রাখছে, তা নয়। পড়ালেখার পাশাপাশি সহশিক্ষা কার্যক্রমে সম্পৃক্ত হয়ে কলেজের শিক্ষার্থীরা নিজেদের মনোবিকাশ ঘটাচ্ছেন। অনেকে সহশিক্ষা কার্যক্রমে অংশ নিয়ে জাতীয় পর্যায়েও মেধার প্রমাণ রেখেছেন।
ক্যাম্পাস মাতানো যত ক্লাব
১৯ অক্টোবর আমরা যখন কলেজে হাজির হয়েছি, ক্যাম্পাসে তখন দুর্গাপূজার আমেজ। চলছে পরীক্ষাও। এরই মধ্যে ছোট ছোট দল চোখে পড়ল। পুকুরপাড়ে বসে কথা বলছিলেন কয়েকজন। জানালেন, মূলত এই পুকুরপাড়, মিলনায়তনের আশপাশ, পুরোনো কলাভবনের পাশেই আড্ডাটা জমে বেশি। কলেজে মুরারিচাঁদ কবিতা পরিষদ, মোহনা এবং থিয়েটার মুরারিচাঁদ—এই তিন সংগঠনই বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কার্যক্রম পরিচালনা করে। পয়লা বৈশাখ থেকে শুরু থেকে জাতীয় দিবসগুলোতে এসব সংগঠন দিনব্যাপী কার্যক্রমের মাধ্যমে ক্যাম্পাস মুখর করে রাখে। এ ছাড়া কলেজের ১৬টি বিভাগের প্রায় প্রতিটিরই একটি করে ক্লাব আছে। ক্লাবগুলোও আয়োজন করে নানা অনুষ্ঠান।
প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ভালো ফলের ধারাবাহিকতায় মুরারিচাঁদ কলেজ অনন্য দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে। শিক্ষার্থীরা যেন ভালো শিক্ষার্থীর পাশাপাশি মানবিক মানুষ হন, সে নজরও আমাদের থাকে। মোটকথা একজন শিক্ষার্থী যেন পড়াশোনাসহ সব দিক দিয়েই পূর্ণাঙ্গ মানুষ হতে পারেন, সে পাঠই আমাদের শিক্ষকেরা দেন। এ ছাড়া সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে শিক্ষার্থী নিজের প্রয়োজনকে বুঝতে পারেন, দেশপ্রেমী হয়ে গড়ে উঠতে পারেন। তাই সহশিক্ষা কার্যক্রমকে আমরা নিয়মিত উৎসাহ দিই। পাঠ্যবইয়ের বাইরে অন্যান্য বই পড়তেও শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করি। কলেজ বার্ষিকী ও জার্নাল প্রকাশের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের সৃষ্টিশীল ও মননশীল প্রতিভার বিকাশেও নিয়মিত উদ্যোগ নেওয়া হয়। উচ্চমাধ্যমিক থেকে স্নাতকোত্তর পর্যন্ত সব পর্যায়ে আমরা মান ধরে রাখতে চেষ্টা করি। এখন আর লেকচার–নির্ভর ক্লাসে শিক্ষার্থীরা আগ্রহী নন, তাই শ্রেণিকক্ষ আধুনিক প্রযুক্তিতে সাজানো হয়েছে।
আবুল আনাম মো.রিয়াজ,অধ্যক্ষ,মুরারিচাঁদ কলেজ
শিক্ষার্থীরা জানালেন, গণিত বিভাগের ধ্রুবক ক্লাব নবীনবরণ, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, ইনডোর গেমস, কুইজ প্রতিযোগিতাসহ নানা অনুষ্ঠান আয়োজন করে। একইভাবে ফিজিকস ক্লাব, ইকোনমিকস ক্লাব, কেমিস্ট্রি ক্লাব, স্কাইলার্ক ক্লাবেরও থাকে নানা অনুষ্ঠান। কলেজের মাঠে সারা বছরই ক্রীড়াপ্রেমী শিক্ষার্থীদের চোখে পড়ে। এ বছর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত জাতীয় সাহিত্য-সংস্কৃতি ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতার ছয়টি ইভেন্টে এ কলেজের শিক্ষার্থীরা সেরা তিনে জায়গা করে নিয়েছেন।
থিয়েটার মুরারিচাঁদের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আছেন রিংকু মালাকার। তিনি বাংলা বিভাগের স্নাতকোত্তর শেষ বর্ষের ছাত্র। অধ্যক্ষের কক্ষের পাশেই তাঁকে পাওয়া গেল। রিংকু জানান, শুদ্ধ সংস্কৃতিচর্চার জন্য ২০১৩ সালে তাঁদের সংগঠন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এখন পর্যন্ত তাঁরা ৪টি মঞ্চ নাটক, ১৬টি পথনাটক, আবৃত্তি ও নৃত্য প্রযোজনাসহ মোট ৩৭টি নিজস্ব প্রযোজনাভিত্তিক অনুষ্ঠান করেছেন। ২০১৭ সালে তাঁদের সংগঠন জয়বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ডের সেরা দশে স্থান পেয়েছিল। সর্বশেষ তাঁরা একটি পালানাটকের মহড়া শুরু করেছেন। সায়িক সিদ্দিকীর নির্দেশনায় শিগগির এ নাটকের মঞ্চায়ন হবে।
অতীতের আলোয়
কলেজের একাধিক শিক্ষক জানালেন, কলেজে নানা সময়ে প্রথিতযশা অনেক শিক্ষক কর্মরত ছিলেন। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি এখানে এসেছেন। ১৯১৯ সালে কলেজ ছাত্রাবাসে শিক্ষার্থীরা কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে সংবর্ধনা দেন। টিলাঘেরা সবুজ-শ্যামল এ কলেজ দেখতে দেশ-বিদেশের দর্শনার্থীরাও নিয়মিত ভিড় জমান।
ঐতিহ্যবাহী এমসি কলেজ প্রাঙ্গণ পুকুর…..
মুরারিচাঁদ কলেজের অনেক শিক্ষার্থী আছেন, যাঁরা পরবর্তী সময়ে দেশব্যাপী পরিচিতি পেয়েছেন।তাঁদেরই একজন কবি দিলওয়ার।তিনি সাহিত্যে অবদানের জন্য একুশে পদকের পাশাপাশি বাংলা একাডেমি পদকও পেয়েছেন। এই কবি মুরারিচাঁদ কলেজকে ‘তারুণ্যের বিদ্যানিকেতন’ আর ‘নিসর্গের প্রেক্ষাপটে এক খণ্ড শিল্পের প্রতীক’ বলে অভিধা দিয়েছিলেন।তিনি লিখেছেন,এম. সি কলেজ আসে,আরও কাছে কানে কানে বলে/ আমাকে দিয়েছ তুমি একরাশ সুরভিত ফুল,নতুন দিগন্ত এক, মুক্ত হতে নিয়ত ব্যাকুল,গভীর আশি নাও।আত্মত্যাগ যায় না বিফলে।