ঢাকা ০৮:২২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৫, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা এখনো আক্রমণের মুখে: সম্পাদক পরিষদ হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ট্রাষ্টের মাসবপ্যাপী সেহরি বিতরণ চলমান মুরারিচাঁদ কলেজের দর্শন বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে স্মরণসভা ৮ ঘন্টায় তিনবার ভূমিকম্পে কাঁপল দেশ সিলেটে ট্রাক,প্রাইভেট কারসহ গ্রেপ্তার ৩ ট্রাফিক আইন মেনে চলা এবং হেলমেট পরিধানকারী চালকদের ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় প্রবীণ সাংবাদিক আব্দুল আজিজ মাহফুজের মৃত্যু: সাংবাদিকতার অঙ্গনে অপূরণীয় ক্ষতি হবিগঞ্জ সমিতি সিলেট’র অভিষেক সম্পন্ন পরিকল্পিত শিল্পায়ন ও অর্থনৈতিক অঞ্চল উন্নয়নের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে – আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের এক মাস রাতে জিরাপানি খেলে শরীরে যেসব পরিবর্তন দেখবেন মাইলফলকের অপেক্ষায় থেকে লাঞ্চে মুশফিক-মুমিনুল বিশ্বের প্রথম পারমাণবিক বিস্ফোরণ সহনশীল ‘ভাসমান দ্বীপ’ নির্মাণ করছে চীন পশ্চিমতীরের ঐতিহাসিক স্থাপনা দখলের পরিকল্পনা ইসরাইলের

ভূমিকম্পের সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে যেসব জেলা

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৭:১৬:৪৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২২ নভেম্বর ২০২৫ ৫ বার পড়া হয়েছে

ভিউ নিউজ ৭১ ডেস্ক :

ভূমিকম্পের ঝুঁকি বিবেচনায় সমগ্র বাংলাদেশকে মোট তিনটি জোনে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে উচ্চঝুঁকির আওতাভুক্ত অঞ্চলকে জোন-১, মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা জোন-২ এবং জোন-৩-এর এলাকা নিম্ন ঝুঁকিপ্রবণ হিসাবে চিহ্নিত। আবহাওয়া অধিদপ্তরের এক মানচিত্রে দেশের ভূমিকম্প ঝুঁকিপ্রবণ এলাকা চিহ্নিত করা হয়।

প্রকাশিত মানচিত্র অনুযায়ী দেশের উত্তর ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের কয়েকটি এলাকা জোন-১-এর আওতায় সর্বোচ্চ ঝুঁকিপ্রবণ হিসাবে চিহ্নিত। সাধারণত ফল্ট লাইন বা প্লেট বাউন্ডারির আশপাশের এলাকা ভূমিকম্পের ক্ষেত্রে উচ্চঝুঁকিপূর্ণ। বিশেষ করে সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগের ৯টি জেলা, ঢাকা বিভাগের টাঙ্গাইল, গাজীপুর, নরসিংদীর কিছু অংশ, পুরো কিশোরগঞ্জ জেলা, কুমিল্লা বিভাগের ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটির বেশ কিছু এলাকা উচ্চঝুঁকিপ্রবণ। তবে জোন-৩-এর এলাকা হিসাবে খুলনা, যশোর, বরিশাল এবং পটুয়াখালী এলাকায় ভূমিকম্পের ঝুঁকি সর্বনিম্ন।

প্রাপ্ত পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ১৯৭৬ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত দেশে অন্তত ৫ দফা বেশ জোরালো ভূকম্পন অনূভূত হয়। এর প্রায় সবগুলোর উৎপত্তিস্থল ছিল সিলেট, মৌলভীবাজার, রাঙামাটি, বান্দরবান এবং কক্সবাজার এলাকা। ফলে ভবিষ্যতে এসব এলাকায় আরও বড় ধরনের কম্পনের আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসাম ও মেঘালয়ের সীমান্তসংলগ্ন সিলেট, ময়মনসিংহ অঞ্চলকে উচ্চমাত্রার ঝুঁকিপ্রবণ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশের চারপাশে ভূমিকম্পের পাঁচটি উৎপত্তিস্থল চিহ্নিত করা আছে। এর একটিকে বলা হয় প্লেট বাউন্ডারি-১, যেটা মিয়ানমার থেকে নোয়াখালী পর্যন্ত। এছাড়া প্লেট বাউন্ডারি-২ নোয়াখালী থেকে সিলেট এবং প্লেট বাউন্ডারি-৩ সিলেট থেকে ভারতের দিকে চলে গেছে। অন্যদিকে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট এলাকায় ডাউকি ফল্ট এবং মধুপুর ফল্ট রয়েছে। এগুলোই ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল।

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) পরিসংখ্যান অনুযায়ী ঢাকায় প্রায় ২১ লাখের মতো ভবন রয়েছে। এর মধ্যে ১৫ লাখ ভবন দ্বিতল বা এর চেয়ে কম। এগুলোর ক্ষেত্রে ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি কম। কিন্তু ৪ থেকে ৩০ তলা পর্যন্ত বাকি ৬ লাখ ভবন উচ্চঝুঁকিতে রয়েছে। ভূমিকম্পের সময় এগুলো ধসে পড়লে ব্যাপক প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে। এজন্য সংস্কারের মাধ্যমে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো ভূমিকম্প সহনশীল করে তোলার কথা বলা হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভূমিকম্প সবচেয়ে ভয়াবহ এবং অনিশ্চিত প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোর অন্যতম। এটি প্রতিরোধের ক্ষমতা কারও হাতে নেই। তবে ক্ষয়ক্ষতি হ্রাসে ভূমিকম্পের আগাম সংবাদ বা পূর্বাভাস প্রাপ্তির ওপর বিশ্বব্যাপী সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করা হয়। এক্ষেত্রে উন্নত দেশগুলোর বৈজ্ঞানিক গবেষণায় বেশ অগ্রগতি হয়েছে। ভূমিকম্পের আগাম পূর্বাভাসের গবেষণায় জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ আরও বেশকিছু দেশ বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করে।

ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশের বিদ্যমান সক্ষমতা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ডা. মেহেদী আহমেদ আনসারী বলেন, বাংলাদেশ অনেক আগে থেকেই ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে। শুক্রবারের ভূমিকম্প সেই আতঙ্ক হয়তো আরও কিছুটা বাড়িয়ে দিয়েছে। 

তিনি বলেন, শুধু ৫ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্প যেটার উৎপত্তি ঢাকা থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে তাতেই যদি ঢাকা এবং আশপাশের এলাকার স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে এর বড় কম্পন হলে নিঃসন্দেহে বলা যায় পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে। বিল্ডিং কোড অনুসরণ ছাড়াই রাজধানীতে অহরহ ভবন নির্মিত হচ্ছে। সরকারকে এ বিষয়গুলো ভাবতে হবে। 

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

ভূমিকম্পের সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে যেসব জেলা

আপডেট সময় : ০৭:১৬:৪৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২২ নভেম্বর ২০২৫

ভিউ নিউজ ৭১ ডেস্ক :

ভূমিকম্পের ঝুঁকি বিবেচনায় সমগ্র বাংলাদেশকে মোট তিনটি জোনে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে উচ্চঝুঁকির আওতাভুক্ত অঞ্চলকে জোন-১, মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা জোন-২ এবং জোন-৩-এর এলাকা নিম্ন ঝুঁকিপ্রবণ হিসাবে চিহ্নিত। আবহাওয়া অধিদপ্তরের এক মানচিত্রে দেশের ভূমিকম্প ঝুঁকিপ্রবণ এলাকা চিহ্নিত করা হয়।

প্রকাশিত মানচিত্র অনুযায়ী দেশের উত্তর ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের কয়েকটি এলাকা জোন-১-এর আওতায় সর্বোচ্চ ঝুঁকিপ্রবণ হিসাবে চিহ্নিত। সাধারণত ফল্ট লাইন বা প্লেট বাউন্ডারির আশপাশের এলাকা ভূমিকম্পের ক্ষেত্রে উচ্চঝুঁকিপূর্ণ। বিশেষ করে সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগের ৯টি জেলা, ঢাকা বিভাগের টাঙ্গাইল, গাজীপুর, নরসিংদীর কিছু অংশ, পুরো কিশোরগঞ্জ জেলা, কুমিল্লা বিভাগের ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটির বেশ কিছু এলাকা উচ্চঝুঁকিপ্রবণ। তবে জোন-৩-এর এলাকা হিসাবে খুলনা, যশোর, বরিশাল এবং পটুয়াখালী এলাকায় ভূমিকম্পের ঝুঁকি সর্বনিম্ন।

প্রাপ্ত পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ১৯৭৬ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত দেশে অন্তত ৫ দফা বেশ জোরালো ভূকম্পন অনূভূত হয়। এর প্রায় সবগুলোর উৎপত্তিস্থল ছিল সিলেট, মৌলভীবাজার, রাঙামাটি, বান্দরবান এবং কক্সবাজার এলাকা। ফলে ভবিষ্যতে এসব এলাকায় আরও বড় ধরনের কম্পনের আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসাম ও মেঘালয়ের সীমান্তসংলগ্ন সিলেট, ময়মনসিংহ অঞ্চলকে উচ্চমাত্রার ঝুঁকিপ্রবণ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশের চারপাশে ভূমিকম্পের পাঁচটি উৎপত্তিস্থল চিহ্নিত করা আছে। এর একটিকে বলা হয় প্লেট বাউন্ডারি-১, যেটা মিয়ানমার থেকে নোয়াখালী পর্যন্ত। এছাড়া প্লেট বাউন্ডারি-২ নোয়াখালী থেকে সিলেট এবং প্লেট বাউন্ডারি-৩ সিলেট থেকে ভারতের দিকে চলে গেছে। অন্যদিকে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট এলাকায় ডাউকি ফল্ট এবং মধুপুর ফল্ট রয়েছে। এগুলোই ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল।

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) পরিসংখ্যান অনুযায়ী ঢাকায় প্রায় ২১ লাখের মতো ভবন রয়েছে। এর মধ্যে ১৫ লাখ ভবন দ্বিতল বা এর চেয়ে কম। এগুলোর ক্ষেত্রে ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি কম। কিন্তু ৪ থেকে ৩০ তলা পর্যন্ত বাকি ৬ লাখ ভবন উচ্চঝুঁকিতে রয়েছে। ভূমিকম্পের সময় এগুলো ধসে পড়লে ব্যাপক প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে। এজন্য সংস্কারের মাধ্যমে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো ভূমিকম্প সহনশীল করে তোলার কথা বলা হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভূমিকম্প সবচেয়ে ভয়াবহ এবং অনিশ্চিত প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোর অন্যতম। এটি প্রতিরোধের ক্ষমতা কারও হাতে নেই। তবে ক্ষয়ক্ষতি হ্রাসে ভূমিকম্পের আগাম সংবাদ বা পূর্বাভাস প্রাপ্তির ওপর বিশ্বব্যাপী সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করা হয়। এক্ষেত্রে উন্নত দেশগুলোর বৈজ্ঞানিক গবেষণায় বেশ অগ্রগতি হয়েছে। ভূমিকম্পের আগাম পূর্বাভাসের গবেষণায় জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ আরও বেশকিছু দেশ বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করে।

ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশের বিদ্যমান সক্ষমতা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ডা. মেহেদী আহমেদ আনসারী বলেন, বাংলাদেশ অনেক আগে থেকেই ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে। শুক্রবারের ভূমিকম্প সেই আতঙ্ক হয়তো আরও কিছুটা বাড়িয়ে দিয়েছে। 

তিনি বলেন, শুধু ৫ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্প যেটার উৎপত্তি ঢাকা থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে তাতেই যদি ঢাকা এবং আশপাশের এলাকার স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে এর বড় কম্পন হলে নিঃসন্দেহে বলা যায় পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে। বিল্ডিং কোড অনুসরণ ছাড়াই রাজধানীতে অহরহ ভবন নির্মিত হচ্ছে। সরকারকে এ বিষয়গুলো ভাবতে হবে।