সিলেটের এইচএসসির ফল প্রকাশ-পাসের হার শতভাগ মাত্র ৩টি, শতভাগ ফেল ৪ প্রতিষ্ঠানে

- আপডেট সময় : ১২:৫১:১৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫ ৪ বার পড়া হয়েছে
স্টাফ রিপোর্টার :
চলতি বছরের উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমান পরীক্ষায় সিলেট শিক্ষা বোর্ডের ৩২৩ টি কলেজের মধ্যে ৪টি কলেজ শতভাগ শিক্ষার্থী ফেল করেছে। আর পাসের হার শতভাগ মাত্র ৩টি প্রতিষ্ঠানে।
সিলেট বোর্ডে এবার পাসের হার ৫১ দশমিক ৮৬ শতাংশ। যা গত বছরের তুলনায় ৩৩ দশমিক ৫৩ শতাংশ কম। এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ হাজার ৬০২ জন শিক্ষার্থী। বিভাগটিতে এ বছর পাসের হার ও জিপিএ-৫ দুইই কমেছে। দীর্ঘ ৫ বছর পর পূর্ণাঙ্গ সিলেবাসে অনুষ্ঠিত হয় এবারের পরীক্ষা। ২০০৫ সালের পর এটি সিলেটের সর্বনিম্ন পাসের হার।
বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, সিলেট শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এবার মোট পরীক্ষার্থী ছিলেন ৬৯ হাজার ১৭২ জন। তাদের মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছেন ৩৫ হাজার ৮৭১ জন।
বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় সিলেট শিক্ষা বোর্ডের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ফলাফল প্রকাশ করেন মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. আনোয়ার হোসেন চৌধুরী।
বিভাগভিত্তিক ফলাফলে দেখা যায়, বিজ্ঞান বিভাগে ১২ হাজার ৮৯৩ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেয়, এর মধ্যে পাস করেছে ৯ হাজার ৭৯২ জন এবং জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ হাজার ৩৭৯ জন।
মানবিক বিভাগে ৪৭ হাজার ১৪৮ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছেন ২১ হাজার ৪৯৭ জন, যার মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১৫৩ জন।
বাণিজ্য বিভাগে অংশ নেয় ৯ হাজার ২৭২ জন, এর মধ্যে পাস করেছেন ৪ হাজার ৫৮২ জন এবং জিপিএ-৫ পেয়েছেন মাত্র ৭০ জন।
সিলেটে পাসের হার বেশি, কম মৌলভীবাজারে : এগিয়ে মেয়েরা–
চলতি বছরের উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমান পরীক্ষার ফলাফলে সিলেট বিভাগে পাসের হার সবেচেয়ে বেশি সিলেট জেলায় আর কম মৌলভীবাজারে। ফল অনুযায়ী পাসের হারে এগিয়ে রয়েছে মেয়েরা। যদিও বিগত ১২ বছরের মধ্যে এবার পাসের হার সর্বনিম্ন। প্রায় অর্ধেক শিক্ষার্থীই এবার ফেল করেছে। তবে এবার কেবল সিলেট নয় সারা দেশের চিত্র একই।
বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) ঘোষণা হওয়া ফলাফলে সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে সর্বোচ্চ পাসের হার ঢাকায় বোর্ডে। পাসের হার ৬৪.৬২ শতাংশ। এছাড়া বরিশালে ৬২.৫৭ শতাংশ, রাজশাহীতে ৫৯.৪০ শতাংশ, দিনাজপুরে ৫৭.৪৯ শতাংশ, চট্টগ্রামে ৫২.৫৭ শতাংশ, সিলেটে ৫১.৮৬ শতাংশ, ময়মনসিংহে ৫১.৫৪ শতাংশ যশোরে ৫০.২০ শতাংশ ও কুমিল্লায় পাসের হার ৪৮.৮৬ শতাংশ।
ফল অনুযায়ী, সিলেট বিভাগে পাসের হার ৫১ দশমিক ৮৬। যা বিগত ১২ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। গত বছর ২০২৪ সালে পাসের হার ছিলো ৮৫ দশমিক ৩৯ ভাগ, ২০২৩ সালে ৭১ দশমিক ৬২ ভাগ, ২০২২ সালে ৮১ দশমিক ৪০ ভাগ, ২০২১ সালে ৯৪ দশমিক ৮০ ভাগ, আর ২০২০ সালে শতভাগ, ২০১৯ সালে ৬৭ দশমিক ০৫, ২০১৮ সালে ৭৩ দশমিক ৭, ২০১৭ সালে ৭২ ভাগ, ২০১৬ সালে ৬৮ দশমিক ৫৯ ভাগ, ২০১৫ সালে ৭৪ দশমিক ৫৭ আর ২০১৪ সালে ৭৯ দশমিক ১৬।
চলতি বছর সিলেটে মোট পরীক্ষার্থী ছিলো ৬৯ হাজার ৯৪৪ জন। যেখানে ৬৯ হাজার ১৭২ জন পরীক্ষায় অংশ নেন। যার মধ্যে ছেলে ২৭ হাজার ৭৬৪ জন আর মেয়ে ৪১ হাজার ৪০৮ জন। মোট পাসকৃত পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৩৫ হাজার ৮৭০ জন। যার মধ্যে ছেলে ১৩ হাজার ৮৭০ এবং মেয়ে ২২ হাজার ১ জন। মোট জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১৬০২ জন যার মধ্যে ছেলে ৬৮১ এবং মেয়ে ৯২১ জন। পাসের হারে পিছিয়ে রয়েছে ছেলেরা। ছেলে পরীর্ক্ষীদের মধ্যে পাস করেছেন ৪৯ দশমিক ৯৬ জন আর মেয়েদের পাসের হার ৫৩ দশমিক ১৩ ভাগ।
প্রাপ্ত ফল অনুযায়ী পাসের হার সবচেয়ে কম মানবিক বিভাগে। এই বিভাগে পাস করেছেন ৪৫ দশমিক ৫৯ ভাগ পরীক্ষার্থী। আর বিজ্ঞান বিভাগে পাসের হার ৭৫ দশমিক ৯৫ ভাগ এবং ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ৫০ দশমিক ১৮। ১৬০২ জন জিপিএ-৫ প্রাপ্তের মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগে পেয়েছেন ১ হাজার ৩৭৯ জন, মানবিক বিভাগে ১৫৩ জন আর ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ৭০ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন। আর গত বছর জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন ৬ হাজার ৬৯৮ জন। অর্থাৎ জিপিএ-৫ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বড় ধরনের ধস নেমেছে।
অপরদিকে, সিলেট বিভাগে পাসের হার সবচেয়ে কম মৌলভীবাজারে আর বেশি সিলেট জেলায়। সিলেটে পাসের হার ৬০ দশমিক ৬১ ভাগ, হবিগঞ্জে ৪৯ দশমিক ৮৮, সুনামগঞ্জে ৪৭ দশমিক ৩৫ এবং মৌলভীবাজারে ৪৫ দশমিক ৮০ ভাগ শিক্ষার্থী পাস করেছেন।
বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় সিলেট শিক্ষাবোর্ডের সম্মেলন কক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে এই ফলাফল ঘোষণা করেন সিলেট শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. আনোয়ার হোসেন চৌধুরী।
এ বছর সিলেট শিক্ষা বোর্ডে শতভাগ ফেল করেছে ৪টি প্রতিষ্ঠান। এবছর ফলাফল ঘিরে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের আনন্দ উচ্ছাস দেখা যায় নি।
সংশ্লিষ্টদের মতে, ইংরেজি বিষয়ে দুর্বলতার কারণে ফলাফলে এ ধস নেমেছে। পাশাপাশি ৫ আগস্টের পর শিক্ষার্থীদের ক্লাসে অনিয়মিত থাকা, শিক্ষক সংকট এবং মানসম্পন্ন শিক্ষকের অভাবও এ বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ।