ঢাকা ০২:৪৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫, ১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা এখনো আক্রমণের মুখে: সম্পাদক পরিষদ হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ট্রাষ্টের মাসবপ্যাপী সেহরি বিতরণ চলমান ড. ইউনূস – নরেন্দ্র মোদির ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় শাহজালালে কতক্ষণ ছিলেন আব্দুল হামিদ হবিগঞ্জে সেনাঅভিযানে আ.লীগ নে তা গ্রেফ তার করোনা বাড়ছে, মাস্ক পরার অনুরোধ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্ত্রীর জানাজায় অঝোরে কাঁদলেন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী ড.ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করতে চান টিউলিপ দীর্ঘদিন কুরবানির মাংস সংরক্ষণের সহজ উপায় কুরবানির ঈদ: ঝক্কি ছাড়াই ভুঁড়ি পরিষ্কারের দারুণ কৌশল কুরবানিতে মাংস খাওয়ার পর হজমে যে শরবত খাবেন ঈদের দিন কারাগারে গলা ছেড়ে গাইলেন নোবেল

রেশন বন্ধ, পেটে ভাত নেই, সিলেটের দেড় হাজার শ্রমিক যাবে কোথায়?

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১১:০৪:১৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৩ এপ্রিল ২০২৫ ১৮ বার পড়া হয়েছে

স্টাফ রিপোর্টার :

১৭ সপ্তাহ ধরে মিলছে না মজুরি। রেশনও বন্ধ। কবে মজুরি ও রেশন মিলবে সেটাও বলতে পারছেন না মালিকপক্ষ। মজুরি ও রেশন না পেয়ে প্রায় এক মাস ধরে কাজে যান না শ্রমিকরাও। ফলে বন্ধ রয়েছে চা পাতা উত্তোলনও। এতে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে বাগান। বাগান কর্তৃপক্ষ বলছে ব্যাংক থেকে ঋণ নবায়ন না হওয়ায় মারাত্মক আর্থিক সংকটে পড়েছে কোম্পানি। গেল বছরের ঋণ পরিশোধ করতে না পারায় এবার ব্যাংক নবায়ন করছে না। আর ঋণ না পেলে শ্রমিকদেরও মজুরি দেওয়া সম্ভব নয়।

আর শ্রমিকদের দাবি, তাদের চুলো বন্ধ। মজুরি ও রেশন না পাওয়ায় তারা মানবেতর জীবন যাপন করছেন। পেটে ভাত না ঝুটলে হাতে কাজ ওঠে না- এমন দাবি তাদের। এমন নাজুক অবস্থা চলছে সিলেটের তিনটি চা বাগান ও একটি কারখানায়। মজুরি ও রেশন না পাওয়ায় প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রায় দেড় হাজার শ্রমিকের চুলোয় জ্বলছে না আগুন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অব্যাহত লোকসানের মুখে মারাত্মক আর্থিক সংকটে রয়েছে বুরজান টি কোম্পানির মালিকানাধীন বুরজান, ছড়াগাঙ ও কালাগুল চা বাগান এবং বুরজান চা ম্যানুফেকচারিং কারখানা। গত বছর কৃষি ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণ পরিশোধ করতে পারেনি কোম্পানি। ফলে এবছর নতুন করে ঋণ মিলেনি। এ নিয়ে আইন-আদালত করেও কোন লাভ হয়নি।

ব্যাংক কর্তৃপক্ষ অনড়। বকেয়া টাকা না পেলে নতুন ঋণ দেবে না। এই অবস্থায় তিনটি চা বাগান ও একটি কারখানার স্থায়ী ও অস্থায়ী প্রায় দেড় হাজার শ্রমিকের মজুরি ও রেশন বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। ফলে মারাত্মক বিপদে পড়েন শ্রমিকরা।

এদিকে, গত ১৫ মার্চ থেকে বুরজান টি কোম্পানির তিনটি বাগান ও একটি কারখানার শ্রমিকরা ধর্মঘট পালন করে আসছেন। শ্রমিকরা কাজে না যাওয়ায় বাগানে নষ্ট হচ্ছে চা পাতা। নষ্ট হচ্ছে চা গাছও। এতে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে বাগানও।

বাগানের শ্রমিকরা জানান, এতোদিন তারা ধার-কর্জ করে চলেছেন। এখন সেটাও মিলছে না। অর্থাভাবে বাচ্চাদের পড়ালেখা বন্ধ করে দেওয়ার উপক্রম। কেউ অসুস্থ হলেও চিকিৎসা করানো যাচ্ছে না।

এদিকে, বকেয়া মজুরি ও রেশন পরিশোধসহ ১১ দফা দাবিতে ঈদের আগ থেকে আন্দোলন করে যাচ্ছেন চা শ্রমিকরা। ‘চা শ্রমিক ও চা বাগান রক্ষা কমিটি’র ব্যানারে তারা এই আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। ঈদের পর লাক্কাতুড়া বাগানের শ্রমিকদের বকেয়া মজুরির একাংশ পরিশোধ করা হলেও বঞ্চিত রয়েছে বুরজান টি কোম্পানির মালিকানাধীন বাগান ও কারখানার শ্রমিকরা।

চা শ্রমিক ইউনিয়ন সিলেট ভ্যালির সভাপতি রাজু গোয়ালা জানান, বুরজান টি কোম্পানির মালিকানাধীন চা বাগান ও কারখানাগুলোতে প্রায় ১৭ মাস ধরে মজুরি ও রেশন বন্ধ। শ্রমিকদের চুলোয় আগুন জ্বলছে না। চরম মানবেতর জীবন যাপন করছেন তারা। বকেয়া মজুরি ও রেশন নিয়ে মালিক পক্ষের কাছ থেকেও কোন ইতিবাচক সাড়া মিলছে না।

বুরজান টি কোম্পানির ব্যবস্থাপক কামরুজ্জামান চৌধুরী জানান, কোম্পানির বাগানগুলো লোকসানে আছে। গতবারের ঋণ পরিশোধ করতে না পারায় এবার ঋণ নবায়ন হয়নি। তাই শ্রমিকদের মজুরি ও রেশন দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। মালিকপক্ষ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, তবে ঋণ না পেলে কোম্পানির আর্থিক সংকট কাটবে না। শ্রমিকদের মজুরি ও রেশন দিতে হলে ব্যাংক ঋণ নবায়নের কোন বিকল্প নেই।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

রেশন বন্ধ, পেটে ভাত নেই, সিলেটের দেড় হাজার শ্রমিক যাবে কোথায়?

আপডেট সময় : ১১:০৪:১৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৩ এপ্রিল ২০২৫

স্টাফ রিপোর্টার :

১৭ সপ্তাহ ধরে মিলছে না মজুরি। রেশনও বন্ধ। কবে মজুরি ও রেশন মিলবে সেটাও বলতে পারছেন না মালিকপক্ষ। মজুরি ও রেশন না পেয়ে প্রায় এক মাস ধরে কাজে যান না শ্রমিকরাও। ফলে বন্ধ রয়েছে চা পাতা উত্তোলনও। এতে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে বাগান। বাগান কর্তৃপক্ষ বলছে ব্যাংক থেকে ঋণ নবায়ন না হওয়ায় মারাত্মক আর্থিক সংকটে পড়েছে কোম্পানি। গেল বছরের ঋণ পরিশোধ করতে না পারায় এবার ব্যাংক নবায়ন করছে না। আর ঋণ না পেলে শ্রমিকদেরও মজুরি দেওয়া সম্ভব নয়।

আর শ্রমিকদের দাবি, তাদের চুলো বন্ধ। মজুরি ও রেশন না পাওয়ায় তারা মানবেতর জীবন যাপন করছেন। পেটে ভাত না ঝুটলে হাতে কাজ ওঠে না- এমন দাবি তাদের। এমন নাজুক অবস্থা চলছে সিলেটের তিনটি চা বাগান ও একটি কারখানায়। মজুরি ও রেশন না পাওয়ায় প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রায় দেড় হাজার শ্রমিকের চুলোয় জ্বলছে না আগুন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অব্যাহত লোকসানের মুখে মারাত্মক আর্থিক সংকটে রয়েছে বুরজান টি কোম্পানির মালিকানাধীন বুরজান, ছড়াগাঙ ও কালাগুল চা বাগান এবং বুরজান চা ম্যানুফেকচারিং কারখানা। গত বছর কৃষি ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণ পরিশোধ করতে পারেনি কোম্পানি। ফলে এবছর নতুন করে ঋণ মিলেনি। এ নিয়ে আইন-আদালত করেও কোন লাভ হয়নি।

ব্যাংক কর্তৃপক্ষ অনড়। বকেয়া টাকা না পেলে নতুন ঋণ দেবে না। এই অবস্থায় তিনটি চা বাগান ও একটি কারখানার স্থায়ী ও অস্থায়ী প্রায় দেড় হাজার শ্রমিকের মজুরি ও রেশন বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। ফলে মারাত্মক বিপদে পড়েন শ্রমিকরা।

এদিকে, গত ১৫ মার্চ থেকে বুরজান টি কোম্পানির তিনটি বাগান ও একটি কারখানার শ্রমিকরা ধর্মঘট পালন করে আসছেন। শ্রমিকরা কাজে না যাওয়ায় বাগানে নষ্ট হচ্ছে চা পাতা। নষ্ট হচ্ছে চা গাছও। এতে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে বাগানও।

বাগানের শ্রমিকরা জানান, এতোদিন তারা ধার-কর্জ করে চলেছেন। এখন সেটাও মিলছে না। অর্থাভাবে বাচ্চাদের পড়ালেখা বন্ধ করে দেওয়ার উপক্রম। কেউ অসুস্থ হলেও চিকিৎসা করানো যাচ্ছে না।

এদিকে, বকেয়া মজুরি ও রেশন পরিশোধসহ ১১ দফা দাবিতে ঈদের আগ থেকে আন্দোলন করে যাচ্ছেন চা শ্রমিকরা। ‘চা শ্রমিক ও চা বাগান রক্ষা কমিটি’র ব্যানারে তারা এই আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। ঈদের পর লাক্কাতুড়া বাগানের শ্রমিকদের বকেয়া মজুরির একাংশ পরিশোধ করা হলেও বঞ্চিত রয়েছে বুরজান টি কোম্পানির মালিকানাধীন বাগান ও কারখানার শ্রমিকরা।

চা শ্রমিক ইউনিয়ন সিলেট ভ্যালির সভাপতি রাজু গোয়ালা জানান, বুরজান টি কোম্পানির মালিকানাধীন চা বাগান ও কারখানাগুলোতে প্রায় ১৭ মাস ধরে মজুরি ও রেশন বন্ধ। শ্রমিকদের চুলোয় আগুন জ্বলছে না। চরম মানবেতর জীবন যাপন করছেন তারা। বকেয়া মজুরি ও রেশন নিয়ে মালিক পক্ষের কাছ থেকেও কোন ইতিবাচক সাড়া মিলছে না।

বুরজান টি কোম্পানির ব্যবস্থাপক কামরুজ্জামান চৌধুরী জানান, কোম্পানির বাগানগুলো লোকসানে আছে। গতবারের ঋণ পরিশোধ করতে না পারায় এবার ঋণ নবায়ন হয়নি। তাই শ্রমিকদের মজুরি ও রেশন দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। মালিকপক্ষ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, তবে ঋণ না পেলে কোম্পানির আর্থিক সংকট কাটবে না। শ্রমিকদের মজুরি ও রেশন দিতে হলে ব্যাংক ঋণ নবায়নের কোন বিকল্প নেই।