ঢাকা ০৪:৩১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫, ৯ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা এখনো আক্রমণের মুখে: সম্পাদক পরিষদ হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ট্রাষ্টের মাসবপ্যাপী সেহরি বিতরণ চলমান লাখাইয়ে অ্যাম্বুলেন্স ও টমটম সংঘর্ষে আহত৫ হবিগঞ্জ কাভার্ড ভ্যান ভর্তি ভারতীয় ফুচকা আটক সিলেটে বিভাগে ভালো ফলন, লক্ষ্যমাত্রা ছাড়াবে আশাবাদী কৃষি বিভাগ  সিলেটে ইয়াবাসহ গ্রেফতার২ সিলেটে বিএনপি কার্যালয় অগ্নি সংযোগ – আ.লীগ নেতা গ্রেফতার  সিলেটের ৬ জন কক্সবাজারের গিয়ে নিখোঁজ, জাতিসংঘকে শান্তিরক্ষী মিশনে বাংলাদেশি নারীদের সংখ্যা বাড়ানোর আহ্বান ড. ইউনূস শায়েস্তাগঞ্জে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে ১৫টি দোকান পুড়ে চাই কোটি টাকার ক্ষতি চুনারুঘাটে প্রকাশ্য দিবালোকে এক ব্যক্তিকে কুপিয়ে হত্যা গোয়াইনঘাটে টাস্কফোর্সের অভিযান: ১৫ টি নৌকা, ১০ টি শ্যালো মেশিন ধ্বংস

নিহত সাংবাদিক রব্বানির মায়ের কান্না থামছে না, বিচার দিলেন জনগণের কাছে

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১০:৪৭:২৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ জুন ২০২৩ ১৩২ বার পড়া হয়েছে

জামাল পুর প্রতিনিধি:

কোনো সান্ত্বনাই থামাতে পারছে না সাংবাদিক গোলাম রব্বানির মা আলেয়া বেগমের আহাজারি।আজ শুক্রবার সকালে জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলা শহরের গরুহাটি কাচারিপাড়া এলাকায় বাড়িতে মানুষের প্রচণ্ড ভিড়। এর মধ্যে ৬৫ বছর বয়সী আলেয়া বেগম অনবরত কেঁদে যাচ্ছেন।কখনো উচ্চ স্বরে, কখনো নীরবে, আবার কখনো আকাশের দিকে হাত তুলে। সঙ্গে বিলাপ করছেন।কেঁদে কেঁদে উপস্থিত সবার কাছে সন্তান হত্যার বিচার চাচ্ছেন।কিছুতেই তাঁর কান্না থামছিল না। সেখানে সান্ত্বনা দিতে আসা প্রতিবেশীরাও কান্নায় ভেঙে পড়ছেন।আজ সকাল ৯টায় জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলা শহরের গরুহাটি কাচারিপাড়া গ্রামে নিহত সাংবাদিক গোলাম রব্বানির বাড়িতে গিয়ে এ দৃশ্য দেখা গেল।আহাজারি করতে করতেই আলেয়া বেগম বলছিলেন,আমার বাবা (ছেলে) আছিল বকশীগঞ্জের মধ্যে সাহসী সাংবাদিক, আমার বাবার মতো এত সাহসী সাংবাদিক কেউ আছিল না।’ ছেলের জীবন কেড়ে নেওয়ার জন্য বকশীগঞ্জের সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম ওরফে বাবুকে দায়ী করে আলেয়া বেগম বলেন,পেপারের মধ্যে (পত্রিকায়) দেওয়াতে বাবু চেয়ারম্যান আমার বাবা’ক খাইছে গো। আমি ফাঁসি চাই বাবুর গো। আমার বাবার হত্যার বদলে ফাঁসি চাই গো। তুমরা সগলেই আমার বাবা হত্যার বিচার করবে। জনগণের কাছেও এই বিচার দিলেম গো।

গত বুধবার রাত ১০টার দিকে বাড়িতে ফেরার পথে বকশীগঞ্জের পাটহাটি মোড়ে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হন সাংবাদিক গোলাম রব্বানি। এ সময় তাঁকে ব্যাপক মারধর করা হয়। একপর্যায়ে তিনি অচেতন হয়ে পড়লে সন্ত্রাসীরা তাঁকে ফেলে পালিয়ে যায়।স্থানীয় লোকজন গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে বকশীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য রাতেই তাঁকে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানেও অবস্থার অবনতি হলে গতকাল সকালে তাঁকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল দুপুরে তাঁর মৃত্যু হয়।

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল রাত সাড়ে ১০টার দিকে গোলাম রব্বানির লাশ বকশীগঞ্জে আনা হয়। এ সময় স্বজন ও এলাকাবাসীর কান্নায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। আজ সকাল ১০টার দিকে বকশীগঞ্জ পৌর শহরের এন এম নূর মোহাম্মদ উচ্চবিদ্যালয় মাঠে তাঁর প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। তাঁর গ্রামের বাড়ি গোমের চর জিগাতলা মাঠে দ্বিতীয় জানাজার পর তাঁকে দাফন করা হয়।উপজেলা শহরের গরুহাটি কাচারিপাড়া পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন গোলাম রব্বানি। সকালে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিবেশী ও আত্মীয়স্বজনের ভিড়। বাড়ির উঠানে আত্মীয়স্বজন আহাজারি করছিলেন।গোলাম রব্বানির বাবা আবদুল করিমের আহাজারি কেউ থামাতে পারছিলেন না। দুই পাশ থেকে দুজন তাঁকে ধরে রয়েছেন। তিনি দুই হাত নাড়িয়ে-নাড়িয়ে বলছিলেন, ‘আমার বাবার হত্যার বিচার চাই। আমার বাবাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। তুমরা গো, আমার বাবার হত্যার বিচার করতে পারবে গো?’ তাঁকে প্রতিবেশীরা নানাভাবে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। কারও কথাতেই যেন তিনি আশ্বস্ত হতে পারছেন না।

গোলাম রব্বানির স্ত্রী মনিরা বেগমকেও বিলাপ করতে দেখা গেল। তিনি বসে থাকারও শক্তি পাচ্ছিলেন না। আহাজারি করতে করতে প্রতিবেশী নারীর ওপর শরীর ছেড়ে দিচ্ছিলেন। আরেকজন তাঁকে পাতপাখা দিয়ে বাতাস করছিলেন। অনেকেই তাঁকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন।কিন্তু তিনি কিছুই মানছিলেন না। আহাজারি করছিলেন আর বলছিলেন, ‘আল্লাহ গো কেডা (কারা) আমার এই ক্ষতি পুষিয়ে দিবে? আমি শুধু বিচার চাই গো। যাঁরা আমার স্বামীকে কেড়ে নিয়েছে, তাগোর বিচার চাই গো।প্রতিবেশী কয়েকজন বলেন, গোলাম রব্বানির দুই ছেলে ও এক মেয়ে। তিনি ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি। তাঁকে হারিয়ে পুরো পরিবার এখন সর্বস্বান্ত হয়ে গেছে।

সাংবাদিক গোলাম রব্বানি অনলাইন পোর্টাল বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জামালপুর জেলা প্রতিনিধি ছিলেন।একই সঙ্গে তিনি একাত্তর টিভির বকশীগঞ্জ উপজেলার সংবাদ সংগ্রাহক হিসেবে কাজ করতেন।অভিযোগ উঠেছে,সংবাদ প্রকাশের জের ধরে এর সূত্রপাত হয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

নিহত সাংবাদিক রব্বানির মায়ের কান্না থামছে না, বিচার দিলেন জনগণের কাছে

আপডেট সময় : ১০:৪৭:২৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ জুন ২০২৩

জামাল পুর প্রতিনিধি:

কোনো সান্ত্বনাই থামাতে পারছে না সাংবাদিক গোলাম রব্বানির মা আলেয়া বেগমের আহাজারি।আজ শুক্রবার সকালে জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলা শহরের গরুহাটি কাচারিপাড়া এলাকায় বাড়িতে মানুষের প্রচণ্ড ভিড়। এর মধ্যে ৬৫ বছর বয়সী আলেয়া বেগম অনবরত কেঁদে যাচ্ছেন।কখনো উচ্চ স্বরে, কখনো নীরবে, আবার কখনো আকাশের দিকে হাত তুলে। সঙ্গে বিলাপ করছেন।কেঁদে কেঁদে উপস্থিত সবার কাছে সন্তান হত্যার বিচার চাচ্ছেন।কিছুতেই তাঁর কান্না থামছিল না। সেখানে সান্ত্বনা দিতে আসা প্রতিবেশীরাও কান্নায় ভেঙে পড়ছেন।আজ সকাল ৯টায় জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলা শহরের গরুহাটি কাচারিপাড়া গ্রামে নিহত সাংবাদিক গোলাম রব্বানির বাড়িতে গিয়ে এ দৃশ্য দেখা গেল।আহাজারি করতে করতেই আলেয়া বেগম বলছিলেন,আমার বাবা (ছেলে) আছিল বকশীগঞ্জের মধ্যে সাহসী সাংবাদিক, আমার বাবার মতো এত সাহসী সাংবাদিক কেউ আছিল না।’ ছেলের জীবন কেড়ে নেওয়ার জন্য বকশীগঞ্জের সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম ওরফে বাবুকে দায়ী করে আলেয়া বেগম বলেন,পেপারের মধ্যে (পত্রিকায়) দেওয়াতে বাবু চেয়ারম্যান আমার বাবা’ক খাইছে গো। আমি ফাঁসি চাই বাবুর গো। আমার বাবার হত্যার বদলে ফাঁসি চাই গো। তুমরা সগলেই আমার বাবা হত্যার বিচার করবে। জনগণের কাছেও এই বিচার দিলেম গো।

গত বুধবার রাত ১০টার দিকে বাড়িতে ফেরার পথে বকশীগঞ্জের পাটহাটি মোড়ে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হন সাংবাদিক গোলাম রব্বানি। এ সময় তাঁকে ব্যাপক মারধর করা হয়। একপর্যায়ে তিনি অচেতন হয়ে পড়লে সন্ত্রাসীরা তাঁকে ফেলে পালিয়ে যায়।স্থানীয় লোকজন গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে বকশীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য রাতেই তাঁকে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানেও অবস্থার অবনতি হলে গতকাল সকালে তাঁকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল দুপুরে তাঁর মৃত্যু হয়।

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল রাত সাড়ে ১০টার দিকে গোলাম রব্বানির লাশ বকশীগঞ্জে আনা হয়। এ সময় স্বজন ও এলাকাবাসীর কান্নায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। আজ সকাল ১০টার দিকে বকশীগঞ্জ পৌর শহরের এন এম নূর মোহাম্মদ উচ্চবিদ্যালয় মাঠে তাঁর প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। তাঁর গ্রামের বাড়ি গোমের চর জিগাতলা মাঠে দ্বিতীয় জানাজার পর তাঁকে দাফন করা হয়।উপজেলা শহরের গরুহাটি কাচারিপাড়া পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন গোলাম রব্বানি। সকালে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিবেশী ও আত্মীয়স্বজনের ভিড়। বাড়ির উঠানে আত্মীয়স্বজন আহাজারি করছিলেন।গোলাম রব্বানির বাবা আবদুল করিমের আহাজারি কেউ থামাতে পারছিলেন না। দুই পাশ থেকে দুজন তাঁকে ধরে রয়েছেন। তিনি দুই হাত নাড়িয়ে-নাড়িয়ে বলছিলেন, ‘আমার বাবার হত্যার বিচার চাই। আমার বাবাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। তুমরা গো, আমার বাবার হত্যার বিচার করতে পারবে গো?’ তাঁকে প্রতিবেশীরা নানাভাবে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। কারও কথাতেই যেন তিনি আশ্বস্ত হতে পারছেন না।

গোলাম রব্বানির স্ত্রী মনিরা বেগমকেও বিলাপ করতে দেখা গেল। তিনি বসে থাকারও শক্তি পাচ্ছিলেন না। আহাজারি করতে করতে প্রতিবেশী নারীর ওপর শরীর ছেড়ে দিচ্ছিলেন। আরেকজন তাঁকে পাতপাখা দিয়ে বাতাস করছিলেন। অনেকেই তাঁকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন।কিন্তু তিনি কিছুই মানছিলেন না। আহাজারি করছিলেন আর বলছিলেন, ‘আল্লাহ গো কেডা (কারা) আমার এই ক্ষতি পুষিয়ে দিবে? আমি শুধু বিচার চাই গো। যাঁরা আমার স্বামীকে কেড়ে নিয়েছে, তাগোর বিচার চাই গো।প্রতিবেশী কয়েকজন বলেন, গোলাম রব্বানির দুই ছেলে ও এক মেয়ে। তিনি ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি। তাঁকে হারিয়ে পুরো পরিবার এখন সর্বস্বান্ত হয়ে গেছে।

সাংবাদিক গোলাম রব্বানি অনলাইন পোর্টাল বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জামালপুর জেলা প্রতিনিধি ছিলেন।একই সঙ্গে তিনি একাত্তর টিভির বকশীগঞ্জ উপজেলার সংবাদ সংগ্রাহক হিসেবে কাজ করতেন।অভিযোগ উঠেছে,সংবাদ প্রকাশের জের ধরে এর সূত্রপাত হয়।