১৯৭১ সালের অগ্নিঝরা উত্তাল মার্চ

- আপডেট সময় : ০৬:৪৩:১৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ মার্চ ২০২৩ ১৩৬ বার পড়া হয়েছে
১৯৭১ সালে অগ্নিঝরা মার্চের ১২তম দিন আজ।১৯৭১ সালের এই দিনে প্রতিবাদ-প্রতিরোধে দূরন্ত দুর্বার হয়ে উঠছিল বাঙালী জাতি।একাত্তরের এই দিন চিরপরিচিত শাপলাকে আমাদের জাতীয় ফুল করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।শিল্পী কামরুল হাসানের আহ্বানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনে আয়োজিত শিল্পীদের এক সভায় এ ঘোষণা দেয়া হয়। ঘোষণা শেষে মুক্তিকামী মানুষকে সেদিন আরও বেশি উৎসাহী করে তুলতে তাঁরা প্রতিবাদী পোস্টার,ব্যানার ও ফেস্টুন বিলি করেন।একাত্তরের ১১ মার্চ জাতিসংঘের তদানীন্তন মহাসচিব উথান্ট এক নির্দেশে বলেন,পূর্ব পাকিস্তানে কর্মরত জাতিসংঘের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী যেন সদর দফতরে ফিরে যানএ নির্দেশে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ক্ষুব্ধ বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন,এ দেশের মানুষও এ পৃথিবীর বাসিন্দা। তাদের প্রতি জাতিসংঘের দায়িত্ব রয়েছে।অন্যদিকে, ক্রমেই স্তিমিত হতে থাকে পাকিস্তানী বাহিনীর কর্মকান্ড। লাগাতার অসহযোগ আন্দোলনের ফলেই পূর্ব পাকিস্তানে থাকা পাকিস্তানী সামরিক জান্তা দমে যেতে থাকে। মার্চের শুরুতে পতাকা উত্তোলন এবং ইশতেহার পাঠের পর থেকে বাঙালীর স্বাধীনতা প্রাপ্তির আকাক্ষা আরও তীব্র হতে থাকে। পেশাজীবীরা পথে নেমে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন।পূর্ব পাকিস্তানে পাকিস্তানী শাসন ব্যবস্থা বলে কিছু নেই।ক্যান্টনমেন্ট ছাড়া সমস্ত কিছু পরিচালিত হচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে। একাত্তরের এই দিনে পূর্ব পাকিস্তানের সিভিল সার্ভিস এসোসিয়েশনের সদস্যরা বাঙালীর স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন।
তাঁরা আন্দোলনে অর্থের যোগান দিতে তাঁদের একদিনের বেতন দেয়ার ঘোষণা দেন।এই দিনে রাস্তায় নেমে আসেন শিল্পী,সাংবাদিক,সাহিত্যিক,কর্মজীবী সবাই।শ্লোগানে শ্লোগানে মাতিয়ে রাখেন ঢাকার রাজপথ।পূর্ব পাকিস্তানের সাংবাদিক ইউনিয়ন আন্দোলনকে জোরদার করতে আরও সংঘবদ্ধ করতে রাজপথে নেমে আসেন পাকিস্তান বিরোধী শ্লোগানে রাজপথকে উত্তাল করে তোলেন জনতা।শিল্পী মর্তুজা বশীর ও কাইয়ুম চৌধুরীর নেতৃত্বে এদিন চারুশিল্প সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়।স্বাধীনতা সংগ্রামে এ পরিষদ বিশেষ ভূমিকা রাখে। ৯৭১ সালের মার্চ মাসের দিনগুলো ছিল থমথমে,উৎকণ্ঠা আশঙ্কায় পরিপূর্ণ।চাপা উদ্বেগ, অস্থিরতা আর অনিশ্চয়তার আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছিল সাড়ে সাত কোটি বাঙালী।কি ঘটবে,কী ঘটতে যাচ্ছে তা নিয়ে চিন্তিত-উৎকণ্ঠিত ছিলেন সকলেই।অবরুদ্ধ গণমানুষ ভেতরে ভেতরে প্রস্তুত হচ্ছিলেন চূড়ান্ত লড়াইয়ের জন্য।লক্ষ্য একটাই-নিরঙ্কুশ স্বাধীনতা।পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে শুধু সংগ্রাম,মিছিল-সমাবেশই নয়,আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সারাদেশেই যুবক সমাজকে একত্রিত করে চলতে থাকে গোপনে গেরিলা যুদ্ধের প্রশিক্ষণ।গোপনে অস্ত্র-গোলাবারুদও যোগাড় চলতে থাকে নানা মাধ্যম থেকে। আর এই প্রশিক্ষণ আর অস্ত্র যোগানে সাহায্য করে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীতে থাকা কিছু বাঙালী অফিসার-জওয়ান ও অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা-সৈনিক।