ঢাকা ০৩:৩৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৫, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা এখনো আক্রমণের মুখে: সম্পাদক পরিষদ হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ট্রাষ্টের মাসবপ্যাপী সেহরি বিতরণ চলমান মুরারিচাঁদ কলেজের দর্শন বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে স্মরণসভা ৮ ঘন্টায় তিনবার ভূমিকম্পে কাঁপল দেশ সিলেটে ট্রাক,প্রাইভেট কারসহ গ্রেপ্তার ৩ ট্রাফিক আইন মেনে চলা এবং হেলমেট পরিধানকারী চালকদের ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় প্রবীণ সাংবাদিক আব্দুল আজিজ মাহফুজের মৃত্যু: সাংবাদিকতার অঙ্গনে অপূরণীয় ক্ষতি হবিগঞ্জ সমিতি সিলেট’র অভিষেক সম্পন্ন পরিকল্পিত শিল্পায়ন ও অর্থনৈতিক অঞ্চল উন্নয়নের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে – আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের এক মাস রাতে জিরাপানি খেলে শরীরে যেসব পরিবর্তন দেখবেন মাইলফলকের অপেক্ষায় থেকে লাঞ্চে মুশফিক-মুমিনুল বিশ্বের প্রথম পারমাণবিক বিস্ফোরণ সহনশীল ‘ভাসমান দ্বীপ’ নির্মাণ করছে চীন পশ্চিমতীরের ঐতিহাসিক স্থাপনা দখলের পরিকল্পনা ইসরাইলের

ভূমিকম্পের জন্য সিলেটকে দেশের অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৭:০০:০৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২২ নভেম্বর ২০২৫ ৭ বার পড়া হয়েছে

স্টাফ রিপোর্টার :

ভূমিকম্পের উৎপত্তি হচ্ছে সিলেট সীমান্তের পার্শ্ববর্তী ভারতের মেঘালয়ের ডাউকি ফল্ট থেকে। আবার কখনো উৎপত্তিস্থল সিলেট বিভাগের বিভিন্ন স্থান। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে নিষ্ক্রিয় থাকা স্থানীয় ফল্ট বা চ্যুতিগুলো সক্রিয় হয়ে ওঠায় ভূমিকম্পের সংখ্যা বাড়ছে। ফলে ভূমিকম্পের ‘ডেঞ্জার জোনে’ থাকা সিলেটে দুর্যোগের আশঙ্কা বাড়ছে।

শুক্রবার (নভেম্বর) ঢাকায় অনুভূত হওয়া ভূমিকম্প সিলেটে হলে পুরনো ভবনগুলো ধ্বংসস্তুপে পরিণত হতো-  এমন আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে এতো ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) ও সরকারি অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলো উদাসীন। দুর্যোগ মোকাবেলার সামর্থ্য না থাকলেও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো অপসারণে কার্যত কোন উদ্যোগই নিচ্ছে না সিসিক।

ভূ-তাত্ত্বিক গঠনের কারণে ভূমিকম্পের জন্য সিলেটকে দেশের অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত করেছেন বিশেষজ্ঞরা। আর এর অন্যতম কারণ ভারতের মেঘালয়ের ডাউকি ফল্ট। ১৮৯৭ সালের ১২ জুন ওই ফল্ট থেকে উৎপত্তি হওয়া ভূমিকম্পে বৃহত্তর সিলেটের বড় অংশ ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছিল। যা সিলেটের ইতিহাসে ‘বড় ভুইছাল’ হিসেবে পরিচিত। এরপর বিভিন্ন সময় ওই ফল্ট থেকে ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়েছে, তবে বড় ধরণের কোন ক্ষতি হয়নি। কিন্তু সক্রিয় থাকা এই ফল্ট বারবার বড় ভূমিকম্প ও দুর্যোগের ইঙ্গিত দিয়ে যাচ্ছে।

২০২১ সালের মে মাসে ১০ দিনের মধ্যে সিলেটে ২০ বার ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এর মধ্যে ডাউকি ফল্টের কাছে ছিল কয়েকটির উৎপত্তিস্থল। বাকিগুলোর উৎপত্তিস্থল ছিল সিলেট বিভাগ। ২০২১ সালে দফায় দফায় ভূমিকম্পের পর কিছুটা নড়েচড়ে বসে সিসিক। ঘোষণা দেওয়া হয় নগরের সব ভবন পরীক্ষা করার। পরবর্তীতে বাজেট সংকটের অজুহাতে এই উদ্যোগ ভেস্তে যায়। ওই সময় ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ২২টি ভবন চিহ্নিত করা হয়। ভবনগুলোর কোনটি রঙ পাল্টে, আবার কোনটিতে ‘টুকটাক’ সংস্কার করিয়ে এখনো ঠিকে আছে।

শুক্রবার (নভেম্বর) ঢাকায় ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্পে জান-মালের ব্যাপক ক্ষতির পর সিলেটবাসীর মাঝেও আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। অনেকে বলছেন, সিলেটে এরকম ভূমিকম্প হলে হাতগুটিয়ে দুর্যোগ দেখা ছাড়া কিছুই করার থাকবে না।

সিলেটে নিরাপদ আবাসন ও নগর উন্নয়ন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ও পুর প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. জহির বিন আলম। ঢাকার ভূমিকম্পকে সিলেটের জন্য অশনি সংকেত হিসেবে দেখছেন তিনি। তার মতে, ঢাকায় ৫.৭ মাত্রার যে ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে সেটির উৎপত্তিস্থল ‘মধুপুর ফল্ট লাইন’ এতোদিন নিষ্ক্রিয় ছিল। হঠাৎ করে এটি সক্রিয় হয়ে ওঠেছে। সিলেটে এরকম অনেকগুলো নিষ্ক্রিয় লাইন রয়েছে। গত কয়েক বছরে এগুলো থেকে ছোট ছোট ভূমিকম্প হয়েছে। এতোদিন ডাউকি ফল্ট লাইনে সবার নজর ছিল। এখন সময় এসেছে নিষ্ক্রিয় ও ছোট ফল্ট লাইনগুলোকেও গুরুত্ব দেওয়ার।

সিলেটে ৫.৭ মাত্রার ভূকম্পন অনুভূত হলে পুরনো ভবনগুলো ধ্বংসস্তুপে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করে ড. জহির বিন আলম বলেন, ‘ঢাকায় নতুন বিল্ডিংগুলোর ক্ষতি কম হয়েছে। সিলেটে এরকম ভূমিকম্প হলে পুরনো ও নন ইঞ্জিনিয়ারিং বিল্ডিংগুলো ধ্বংসস্তুপে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সিলেটকে নিরাপদ রাখতে হলে পুরনো ভবনগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এখনই সংস্কার করতে হবে।

আগের তুলনায় সিলেটে দুর্যোগ মোকাবেলায় সক্ষমতা কিছুটা বাড়লেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম উল্লেখ করে অধ্যাপক ড. জহির বিন আলম বলেন, ‘আগে কিছুই ছিল না। এখন সিলেটে একটি ডিজাস্টার সেন্টার হয়েছে। সেটিতে যন্ত্রপাতি ও লোকবল বাড়াতে হবে। আগের চেয়ে স্বেচ্ছাসেবীর সংখ্যা কিছু বেড়েছে। এরপরও বড় দুর্যোগ মোকাবেলার মাত্র ৩০-৪০ শতাংশ সক্ষমতা সিলেটে রয়েছে। নগরের উপশহর আবাসিক এলাকা পুরোটাই জলাশয় ভরাট করে তৈরি করা হয়েছে। এখানে হাইরাইজ বিল্ডিংও বেশি। তাই বড় ভূমিকম্প হলে ওই এলাকায় বেশি ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’

সিলেট নগরে খোলা মাঠ না থাকা দুর্যোগ মোকাবেলায় বড় প্রতিবন্ধকতা হতে পারে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

ভূমিকম্পের জন্য সিলেটকে দেশের অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত

আপডেট সময় : ০৭:০০:০৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২২ নভেম্বর ২০২৫

স্টাফ রিপোর্টার :

ভূমিকম্পের উৎপত্তি হচ্ছে সিলেট সীমান্তের পার্শ্ববর্তী ভারতের মেঘালয়ের ডাউকি ফল্ট থেকে। আবার কখনো উৎপত্তিস্থল সিলেট বিভাগের বিভিন্ন স্থান। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে নিষ্ক্রিয় থাকা স্থানীয় ফল্ট বা চ্যুতিগুলো সক্রিয় হয়ে ওঠায় ভূমিকম্পের সংখ্যা বাড়ছে। ফলে ভূমিকম্পের ‘ডেঞ্জার জোনে’ থাকা সিলেটে দুর্যোগের আশঙ্কা বাড়ছে।

শুক্রবার (নভেম্বর) ঢাকায় অনুভূত হওয়া ভূমিকম্প সিলেটে হলে পুরনো ভবনগুলো ধ্বংসস্তুপে পরিণত হতো-  এমন আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে এতো ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) ও সরকারি অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলো উদাসীন। দুর্যোগ মোকাবেলার সামর্থ্য না থাকলেও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো অপসারণে কার্যত কোন উদ্যোগই নিচ্ছে না সিসিক।

ভূ-তাত্ত্বিক গঠনের কারণে ভূমিকম্পের জন্য সিলেটকে দেশের অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত করেছেন বিশেষজ্ঞরা। আর এর অন্যতম কারণ ভারতের মেঘালয়ের ডাউকি ফল্ট। ১৮৯৭ সালের ১২ জুন ওই ফল্ট থেকে উৎপত্তি হওয়া ভূমিকম্পে বৃহত্তর সিলেটের বড় অংশ ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছিল। যা সিলেটের ইতিহাসে ‘বড় ভুইছাল’ হিসেবে পরিচিত। এরপর বিভিন্ন সময় ওই ফল্ট থেকে ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়েছে, তবে বড় ধরণের কোন ক্ষতি হয়নি। কিন্তু সক্রিয় থাকা এই ফল্ট বারবার বড় ভূমিকম্প ও দুর্যোগের ইঙ্গিত দিয়ে যাচ্ছে।

২০২১ সালের মে মাসে ১০ দিনের মধ্যে সিলেটে ২০ বার ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এর মধ্যে ডাউকি ফল্টের কাছে ছিল কয়েকটির উৎপত্তিস্থল। বাকিগুলোর উৎপত্তিস্থল ছিল সিলেট বিভাগ। ২০২১ সালে দফায় দফায় ভূমিকম্পের পর কিছুটা নড়েচড়ে বসে সিসিক। ঘোষণা দেওয়া হয় নগরের সব ভবন পরীক্ষা করার। পরবর্তীতে বাজেট সংকটের অজুহাতে এই উদ্যোগ ভেস্তে যায়। ওই সময় ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ২২টি ভবন চিহ্নিত করা হয়। ভবনগুলোর কোনটি রঙ পাল্টে, আবার কোনটিতে ‘টুকটাক’ সংস্কার করিয়ে এখনো ঠিকে আছে।

শুক্রবার (নভেম্বর) ঢাকায় ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্পে জান-মালের ব্যাপক ক্ষতির পর সিলেটবাসীর মাঝেও আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। অনেকে বলছেন, সিলেটে এরকম ভূমিকম্প হলে হাতগুটিয়ে দুর্যোগ দেখা ছাড়া কিছুই করার থাকবে না।

সিলেটে নিরাপদ আবাসন ও নগর উন্নয়ন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ও পুর প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. জহির বিন আলম। ঢাকার ভূমিকম্পকে সিলেটের জন্য অশনি সংকেত হিসেবে দেখছেন তিনি। তার মতে, ঢাকায় ৫.৭ মাত্রার যে ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে সেটির উৎপত্তিস্থল ‘মধুপুর ফল্ট লাইন’ এতোদিন নিষ্ক্রিয় ছিল। হঠাৎ করে এটি সক্রিয় হয়ে ওঠেছে। সিলেটে এরকম অনেকগুলো নিষ্ক্রিয় লাইন রয়েছে। গত কয়েক বছরে এগুলো থেকে ছোট ছোট ভূমিকম্প হয়েছে। এতোদিন ডাউকি ফল্ট লাইনে সবার নজর ছিল। এখন সময় এসেছে নিষ্ক্রিয় ও ছোট ফল্ট লাইনগুলোকেও গুরুত্ব দেওয়ার।

সিলেটে ৫.৭ মাত্রার ভূকম্পন অনুভূত হলে পুরনো ভবনগুলো ধ্বংসস্তুপে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করে ড. জহির বিন আলম বলেন, ‘ঢাকায় নতুন বিল্ডিংগুলোর ক্ষতি কম হয়েছে। সিলেটে এরকম ভূমিকম্প হলে পুরনো ও নন ইঞ্জিনিয়ারিং বিল্ডিংগুলো ধ্বংসস্তুপে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সিলেটকে নিরাপদ রাখতে হলে পুরনো ভবনগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এখনই সংস্কার করতে হবে।

আগের তুলনায় সিলেটে দুর্যোগ মোকাবেলায় সক্ষমতা কিছুটা বাড়লেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম উল্লেখ করে অধ্যাপক ড. জহির বিন আলম বলেন, ‘আগে কিছুই ছিল না। এখন সিলেটে একটি ডিজাস্টার সেন্টার হয়েছে। সেটিতে যন্ত্রপাতি ও লোকবল বাড়াতে হবে। আগের চেয়ে স্বেচ্ছাসেবীর সংখ্যা কিছু বেড়েছে। এরপরও বড় দুর্যোগ মোকাবেলার মাত্র ৩০-৪০ শতাংশ সক্ষমতা সিলেটে রয়েছে। নগরের উপশহর আবাসিক এলাকা পুরোটাই জলাশয় ভরাট করে তৈরি করা হয়েছে। এখানে হাইরাইজ বিল্ডিংও বেশি। তাই বড় ভূমিকম্প হলে ওই এলাকায় বেশি ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’

সিলেট নগরে খোলা মাঠ না থাকা দুর্যোগ মোকাবেলায় বড় প্রতিবন্ধকতা হতে পারে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।