ঢাকা ১১:২৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ ২০২৫, ১১ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা এখনো আক্রমণের মুখে: সম্পাদক পরিষদ হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ট্রাষ্টের মাসবপ্যাপী সেহরি বিতরণ চলমান সীমান্তবর্তী এলাকায় বিজিবি’র জনসচেতনামূলক সভা অনুষ্ঠিত জেলরোড থেকে আক্তার হোসেন গ্রেফতার মাহে রামাদ্বান উপলক্ষে অসহায় ও হতদরিদ্রদের মধ্যে ফুড প্যাক বিতরণ এনসিপি’র শ্রমিক উইং এর কেন্দ্রীয় সংগঠক হলেন সিলেটের শিব্বির আহমদ পথশিশুদের নিয়ে ইউনিস্যাবের ঈদ উৎসব-২০২৫ উদ্যাপন তিন খানকে নিয়ে আসছে সিনেমা আমার বয়স নিয়ে নায়িকার সমস্যা না হলে আপনার কেন সমস্যা: সালমান সকালে খালি পেটে পানি পান করলে কী হয় শরীরে? মানসিক অবসাদ কাটাতে রাতে যা করবেন গাজীপুরে আইজিপি

প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে নকল পণ্য,বেপরোয়া ভেজাল খাদ্যপণ্যে সয়লাব সিলেটের বাজার

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৯:০৭:৫০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ মার্চ ২০২৪ ৪৯ বার পড়া হয়েছে

ভিউ নিউজ ৭১ ডেস্ক :

মুখরোচক খাদ্য জিলাপি পোড়া মবিল আর মানহীন পামওয়েল দিয়ে তৈরি হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে এতে মিশিয়ে দেয়া হয়, গার্মেন্টসের কাপড়ের রং।রোজায় ইফতারির অন্যতম জনপ্রিয় খাবার জিলাপি। শাহী জিলাপি, বোম্বে জিলাপিসহ জিলাপির বাহারি নামেরও শেষ নেই। কিন্তু, আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে,মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর এই কাপড়ের রং দিয়েই তৈরি হচ্ছে পিঁয়াজু। সয়াবিন ও ডালডা দিয়েই ঘি তৈরীর অভিযোগ রয়েছে। তথ্যানুসন্ধানে নগরীতে খাদ্যপণ্যে এমন ভেজালের বিষয়টি উঠে এসেছে।

প্রখ্যাত কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. নাজমুস সাকিব সাংবাদিকদের বলেন, এমনিতেই দিনে দিনে খাবারের মান কমছে। ক্রেতাদের ভেজাল খাদ্য পণ্য চেনার কোনো উপায় নেই। ভেজাল খাদ্য গ্রহণের ফলে কিডনি, হেপাটাইটিস, লিভার ও ফুসফুস সংক্রমণ, ক্যান্সারসহ অন্যান্য রোগের সংক্রমণ বাড়ছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, হোটেল-রেস্তোরাঁয় বিভিন্ন কালারের রং দিয়ে তৈরি হয় বাহারী খাবার। আর রমজানে সকল খাবারের দোকানেই ব্যবহার করা হয় মাত্রাতিরিক্ত কেমিক্যাল মিশ্রিত রং। এই যেমন, নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য পণ্য হলুদ, মরিচ, ধনিয়াগুঁড়া, জিরা মশলায় ক্ষতিকর কেমিক্যাল পদার্থ মিশ্রিত করা হয়। কাপড়ের বিষাক্ত রং, ধানের তুষ, ইট, কাঠেরগুঁড়া, মটর ডাল ও সুজি মেশানো হয় খাবারের এ সকল মশলায়। সেমাই, সরিষার তৈল, সাবান, শ্যাম্পু, কসমেটিকস, গুঁড়ো দুধ, শিশুখাদ্য সবকিছুতেই ভেজাল। ভেজাল খাদ্য পণ্যে এখন বাজার সয়লাব হয়ে গেছে। নকল পণ্যের ভিড়ে বর্তমানে আসল পণ্য চেনাই দায় হয়ে পড়েছে।

ভুক্তভোগীরা জানান, এক সময় নগরীর পাইকারি দোকানসমুহে নিয়মিত ভেজাল বিরোধী ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হতো। ওই সময়ের পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালত বহু নকল খাদ্য পণ্য জব্দ করে। ঘি, তালমিস্ত্রী থেকে শুরু করে নামীদামী ব্র্যান্ডের অনেক খাদ্য পণ্য জব্দ করা হয়। মিষ্টি তৈরির কারখানায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ থাকায় এক সাথে প্রায় বিশ মন মিষ্টি নদীতে ফেলে দেয়ার নজিরও আছে। একইভাবে নগরীর অভিজাত রেস্টুরেন্টসহ রাস্তার পাশের রেস্তোরাঁয় অভিযান চালিয়ে ভেজাল খাবার ও ভেজাল খাবার তৈরির নানা উপাদানও জব্দ করে এবং জেল-জরিমানাও করা হয়। ফলে অসাধু কারবারিরা আতংকে থাকতো।

নিয়মিত অভিযানের ফলে অসাধু কারবারিদের মধ্যে অনেকটা পরিবর্তনও আসে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে সেই আগের মতো নিয়মিত ভেজাল বিরোধী ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা না হওয়ায় অসাধু কারবারিরা আবারও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বলে সূত্র জানিয়েছে।

সিলেটের নিরাপদ খাদ্য অফিসার সৈয়দ সারফরাজ হোসেন বলেন, ভেজাল খাদ্য প্রতিরোধে আমরা কাজ করছি। নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। কোথাও কোনো খাদ্য পণ্যের ব্যাপারে অভিযোগ পেলে নমুনা সংগ্রহ করে আমরা ঢাকায় পাঠিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে এর মান নিশ্চিত করতে সচেষ্ট রয়েছি। সিলেটে ভেজাল খাদ্যের বিষয়ে যে কেউ আমাদেরকে তথ্য দিতে পারেন বলেও তার মন্তব্য।

সিলেট সিটি কর্পোরেশনের (সিসিক) প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. জাহিদুল ইসলাম জানান, ভেজাল খাদ্য প্রতিরোধে সিসিকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে অভিযান চলবে। এছাড়াও একই টিম বাজার মনিটরিং করতেও কাজ করছে। ভেজাল খাদ্য প্রতিরোধে জনসাধারণকে আরও সচেতন হবার পরামর্শ তার।সিলেটের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ইমরুল হাসান সাংবাদিকদের বলেন, ভেজাল খাদ্য প্রতিরোধ ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে জেলা প্রশাসনের পাঁচটি টিম কাজ করছে। টিমগুলো ভ্রাম্যমাণ আদালতও পরিচালনা করছে। ভেজাল খাদ্য সরবরাহ ও বিক্রয়কারীদের ছাড় নেই।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, প্রতি বছর বিশ্বের প্রায় ৬০ কোটি মানুষ ভেজাল ও দূষিত খাদ্য গ্রহণের কারণে অসুস্থ হন। এর মধ্যে মারা যান ৪ লাখ ৪২ হাজার মানুষ। এ ছাড়া দূষিত খাদ্য গ্রহণজনিত কারণে পাঁচ বছরের কম বয়সের আক্রান্ত হওয়া ৪৩ শতাংশ শিশুর মধ্যে ১ লাখ ২৫ হাজার শিশু মৃত্যুবরণ করে।কনজুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ক্যাব’র এক অনুসন্ধানে দেখা গেছে, মাছে ফরমালিন মিশিয়ে পচন রোধ করা হয়। শাক-সবজিতে বিষাক্ত স্প্রে, সব ধরনের ফলমূল দ্রুত পাকিয়ে রঙিন বানাতে সর্বত্র কার্বাইড, ইথোফেন আর পচন রোধে ফরমালিন প্রয়োগ করা হয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে নকল পণ্য,বেপরোয়া ভেজাল খাদ্যপণ্যে সয়লাব সিলেটের বাজার

আপডেট সময় : ০৯:০৭:৫০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ মার্চ ২০২৪

ভিউ নিউজ ৭১ ডেস্ক :

মুখরোচক খাদ্য জিলাপি পোড়া মবিল আর মানহীন পামওয়েল দিয়ে তৈরি হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে এতে মিশিয়ে দেয়া হয়, গার্মেন্টসের কাপড়ের রং।রোজায় ইফতারির অন্যতম জনপ্রিয় খাবার জিলাপি। শাহী জিলাপি, বোম্বে জিলাপিসহ জিলাপির বাহারি নামেরও শেষ নেই। কিন্তু, আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে,মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর এই কাপড়ের রং দিয়েই তৈরি হচ্ছে পিঁয়াজু। সয়াবিন ও ডালডা দিয়েই ঘি তৈরীর অভিযোগ রয়েছে। তথ্যানুসন্ধানে নগরীতে খাদ্যপণ্যে এমন ভেজালের বিষয়টি উঠে এসেছে।

প্রখ্যাত কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. নাজমুস সাকিব সাংবাদিকদের বলেন, এমনিতেই দিনে দিনে খাবারের মান কমছে। ক্রেতাদের ভেজাল খাদ্য পণ্য চেনার কোনো উপায় নেই। ভেজাল খাদ্য গ্রহণের ফলে কিডনি, হেপাটাইটিস, লিভার ও ফুসফুস সংক্রমণ, ক্যান্সারসহ অন্যান্য রোগের সংক্রমণ বাড়ছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, হোটেল-রেস্তোরাঁয় বিভিন্ন কালারের রং দিয়ে তৈরি হয় বাহারী খাবার। আর রমজানে সকল খাবারের দোকানেই ব্যবহার করা হয় মাত্রাতিরিক্ত কেমিক্যাল মিশ্রিত রং। এই যেমন, নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য পণ্য হলুদ, মরিচ, ধনিয়াগুঁড়া, জিরা মশলায় ক্ষতিকর কেমিক্যাল পদার্থ মিশ্রিত করা হয়। কাপড়ের বিষাক্ত রং, ধানের তুষ, ইট, কাঠেরগুঁড়া, মটর ডাল ও সুজি মেশানো হয় খাবারের এ সকল মশলায়। সেমাই, সরিষার তৈল, সাবান, শ্যাম্পু, কসমেটিকস, গুঁড়ো দুধ, শিশুখাদ্য সবকিছুতেই ভেজাল। ভেজাল খাদ্য পণ্যে এখন বাজার সয়লাব হয়ে গেছে। নকল পণ্যের ভিড়ে বর্তমানে আসল পণ্য চেনাই দায় হয়ে পড়েছে।

ভুক্তভোগীরা জানান, এক সময় নগরীর পাইকারি দোকানসমুহে নিয়মিত ভেজাল বিরোধী ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হতো। ওই সময়ের পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালত বহু নকল খাদ্য পণ্য জব্দ করে। ঘি, তালমিস্ত্রী থেকে শুরু করে নামীদামী ব্র্যান্ডের অনেক খাদ্য পণ্য জব্দ করা হয়। মিষ্টি তৈরির কারখানায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ থাকায় এক সাথে প্রায় বিশ মন মিষ্টি নদীতে ফেলে দেয়ার নজিরও আছে। একইভাবে নগরীর অভিজাত রেস্টুরেন্টসহ রাস্তার পাশের রেস্তোরাঁয় অভিযান চালিয়ে ভেজাল খাবার ও ভেজাল খাবার তৈরির নানা উপাদানও জব্দ করে এবং জেল-জরিমানাও করা হয়। ফলে অসাধু কারবারিরা আতংকে থাকতো।

নিয়মিত অভিযানের ফলে অসাধু কারবারিদের মধ্যে অনেকটা পরিবর্তনও আসে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে সেই আগের মতো নিয়মিত ভেজাল বিরোধী ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা না হওয়ায় অসাধু কারবারিরা আবারও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বলে সূত্র জানিয়েছে।

সিলেটের নিরাপদ খাদ্য অফিসার সৈয়দ সারফরাজ হোসেন বলেন, ভেজাল খাদ্য প্রতিরোধে আমরা কাজ করছি। নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। কোথাও কোনো খাদ্য পণ্যের ব্যাপারে অভিযোগ পেলে নমুনা সংগ্রহ করে আমরা ঢাকায় পাঠিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে এর মান নিশ্চিত করতে সচেষ্ট রয়েছি। সিলেটে ভেজাল খাদ্যের বিষয়ে যে কেউ আমাদেরকে তথ্য দিতে পারেন বলেও তার মন্তব্য।

সিলেট সিটি কর্পোরেশনের (সিসিক) প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. জাহিদুল ইসলাম জানান, ভেজাল খাদ্য প্রতিরোধে সিসিকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে অভিযান চলবে। এছাড়াও একই টিম বাজার মনিটরিং করতেও কাজ করছে। ভেজাল খাদ্য প্রতিরোধে জনসাধারণকে আরও সচেতন হবার পরামর্শ তার।সিলেটের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ইমরুল হাসান সাংবাদিকদের বলেন, ভেজাল খাদ্য প্রতিরোধ ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে জেলা প্রশাসনের পাঁচটি টিম কাজ করছে। টিমগুলো ভ্রাম্যমাণ আদালতও পরিচালনা করছে। ভেজাল খাদ্য সরবরাহ ও বিক্রয়কারীদের ছাড় নেই।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, প্রতি বছর বিশ্বের প্রায় ৬০ কোটি মানুষ ভেজাল ও দূষিত খাদ্য গ্রহণের কারণে অসুস্থ হন। এর মধ্যে মারা যান ৪ লাখ ৪২ হাজার মানুষ। এ ছাড়া দূষিত খাদ্য গ্রহণজনিত কারণে পাঁচ বছরের কম বয়সের আক্রান্ত হওয়া ৪৩ শতাংশ শিশুর মধ্যে ১ লাখ ২৫ হাজার শিশু মৃত্যুবরণ করে।কনজুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ক্যাব’র এক অনুসন্ধানে দেখা গেছে, মাছে ফরমালিন মিশিয়ে পচন রোধ করা হয়। শাক-সবজিতে বিষাক্ত স্প্রে, সব ধরনের ফলমূল দ্রুত পাকিয়ে রঙিন বানাতে সর্বত্র কার্বাইড, ইথোফেন আর পচন রোধে ফরমালিন প্রয়োগ করা হয়।