সিলেটের ঐতিহ্যবাহী শতবর্ষী ‘মিনিস্টার বাড়ি’ রক্ষার দাবিতে রাস্তায় সিলেটবাসী
 
																
								
							
                                - আপডেট সময় : ০৫:৪৩:০৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৫ ৭ বার পড়া হয়েছে
নিজস্ব প্রতিবেদক :
সিলেটের ঐতিহ্যবাহী শতবর্ষী ‘মিনিস্টার বাড়ি’ রক্ষার দাবিতে রাস্তায় সিলেটবাসী – হাতুড়ি’শাবলের আঘাতে গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে সিলেটের ঐতিহ্যবাহী ‘মিনিস্টার বাড়ি’ । সিলেট নগরীর পাঠানটুলা এলাকার ঐতিহ্যবাহী বাড়িটি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে যাওয়ায় মালিকপক্ষই ঐতিহাসিক এ বাড়িটি ভেঙে ফেলছে বলে জানা গেছে। তবে নান্দনিক স্থাপত্যশৈলীর দৃষ্টিনন্দন ও প্রাচীন এই বাড়িটি ভাঙার কার্যক্রম শুরু হওয়ায় আক্ষেপ করেছেন স্থানীয়রা।
মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক এবং জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামসহ বহু খ্যাতনামা ব্যক্তিদের স্মৃতি বিজড়িত সিলেটের ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা ‘মিনিস্টার বাড়ি’ রক্ষার জন্য চলছে সামাজিক আন্দোলন। কিছুদিন আগে এটি ভাঙার কাজ শুরু হয়েছিলো, এরপর প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের নির্দেশে এই কাজ বন্ধ তাকে। তবে সম্প্রতি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের নির্দেশ অমান্য করে আবার ভাঙ্গার কাজ শুরু হয়।
এই অভিযোগে শনিবার (২৫অক্টোবর) দুপুরে নগরীর পাঠানটুলায় মিনিস্টার বাড়ির সামনে মানববন্ধন করেছে ‘পরিবেশ ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ ট্রাস্ট’ নামের একটি সংগঠন। মানববন্ধন থেকে ‘আসাম স্মৃতি ও ঐতিহ্য’ রক্ষার দাবি জানিয়ে বাড়িটি সংরক্ষণের জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানানো হয়।
জানা গেছে, ব্যক্তিমালিকানাধীন স্থাপনাটি প্রায় ১৮ লাখ টাকায় একজন ভাঙারি ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করা হয়। সম্প্রতি স্থাপনাটি ভাঙার কাজ শুরু হলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র আলোচনা ও সমালোচনার সৃষ্টি হয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে, গত শুক্রবার প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের গবেষণা সহকারী মো. ওমর ফারুক স্থাপনাটি পরিদর্শন করেন। তিনি আগামীকাল রবিবার পর্যন্ত ভাঙার কাজ স্থগিত রাখার নির্দেশ দেন। তবে, পরিবেশ ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ ট্রাস্টের অভিযোগ, এই সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করেই ভাঙার কাজ অব্যাহত রাখা হয়েছে।
প্রায় শতবর্ষী পুরোনো এই বাড়িটির সঙ্গে আসাম ও পূর্ব পাকিস্তানের ইতিহাসের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। বাড়িটি নির্মাণ করেছিলেন আইনজীবী, শিক্ষাবিদ এবং প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ আবদুল হামিদ। তিনি ব্রিটিশ ভারতের আসাম ব্যবস্থাপক সভার সদস্য এবং শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন। পরবর্তীতে ১৯৪৭ থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত তিনি পূর্ব পাকিস্তানের শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এই পরিচয়ের সূত্রেই বাড়িটি স্থানীয়ভাবে ‘মিনিস্টার বাড়ি’ নামে সুপরিচিত। এই ঐতিহাসিক স্থাপনায় একসময় উপমহাদেশের বহু খ্যাতনামা ব্যক্তিদের পদধূলি পড়েছে। এদের মধ্যে রয়েছেন মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক এবং জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম।
মানববন্ধনে পরিবেশ ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ ট্রাস্টের সদস্য, সাংবাদিক, শিক্ষক সহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন। বক্তারা একমত পোষণ করে বলেন, মিনিস্টার বাড়ি কেবল একটি ভবন নয়, এটি সিলেট অঞ্চলের আসাম আমলের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের এক জীবন্ত দলিল। পরিবেশবাদী সংগঠন ভূমিসন্তান বাংলাদেশের সমন্বয়ক আশরাফুল কবির বলেন, বাড়িটি সিলেটের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, পরিবারের সদস্যরা এটিকে ভেঙে না ফেলে জাদুঘর করার উদ্যোগ নিতে পারতেন। বক্তারা সরকারের প্রতি অবিলম্বে এই ঐতিহাসিক স্থাপনাটি রক্ষা ও সংরক্ষণের জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান।
পরিবেশবাদী সংগঠন ভূমিসন্তান বাংলাদেশের সমন্বয়ক আশরাফুল কবির বলেন, ‘পরিবারের সদস্যরা চাইলে এই ঐতিহ্যবাহী ভবনটিকে জাদুঘরে রূপান্তর করা যেত। দুঃখজনক যে এটি এখন ধ্বংসের মুখে।
তবে এ নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে পরিবেশবাদী সংগঠন ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম বলেন, ‘সিলেটে ঐতিহ্যবাহী পুরনো স্থাপনা নেই বললেই চলে। নতুন করে আরেকটি স্থাপনা ভেঙে ফেলার খুব দুঃখজনক। তিনি বলেন, এটি একটি ব্যক্তিমালিকানাধীন সম্পদ। তাই আমাদের কিছু করার নেই। তবে মালিকপক্ষ ভবনটি না ভেঙে সংস্কার করে রক্ষার চেষ্টা করতে পারতেন। কারণ এটি কেবল একটি ভবন নয়- এই অঞ্চলের ইতিহাসের সাক্ষী, প্রাচীন স্থাপত্যশৈলীরও একটি উদাহরণ হিসেবে টিকে ছিল। তবে বাড়ি ভাঙার খবর ছড়িয়ে পড়ায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে।
স্থানীয়রা জানান, বাড়িটির ছাদে ফাটল দেখা দেওয়ায় মালিকপক্ষ এটি ব্যবহার অনুপযোগী হিসেবে ভেঙে ফেলছে। তবে ঐতিহ্যপ্রেমীদের দাবি, সংস্কার ও সংরক্ষণের মাধ্যমে এ ঐতিহাসিক স্থাপনাকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য টিকিয়ে রাখা সম্ভব।
উল্লেখ্য, আব্দুল হামিদ ছিলেন তৎকালীন আসামের এমএলএ এবং বৃহত্তর আসামের শিক্ষামন্ত্রী। তিনি তৎকালীন বিধানসভার স্পিকারও ছিলেন। পরবর্তীতে দেশ ভাগের পর তৎকালীন পাকিস্তান সরকারে শিক্ষামন্ত্রী ও বিভিন্ন সরকারি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। আব্দুল হামিদের বোন হাফিজা বানু ছিলেন আইনজীবি আবু আহমদ আব্দুল হাফিজের মা এবং বাংলাদেশের সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবুল মোমেনের দাদী।
 
																			

























