ঢাকা ০৩:১০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৫, ১৬ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা এখনো আক্রমণের মুখে: সম্পাদক পরিষদ হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ট্রাষ্টের মাসবপ্যাপী সেহরি বিতরণ চলমান বয়স নয়, ইচ্ছাশক্তিই বড়—৬৯ বছরে পিএইচডি করে বাবার স্বপ্ন পূরণ সিলেটের জকিগঞ্জ থানার অংশীজনদের সাথে এসপি’র মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত আজকের পরই বাতিল হবে অতিরিক্ত সিম হবিগঞ্জ নবীগঞ্জে অবৈধ বন্যপ্রাণী শিকার দুজনকে জরিমানা শান্তি,নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের ভারসাম্য রক্ষায় পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনা মোতায়েন সিলেটের জুলাই যোদ্ধা-২৭ জনের নাম বাদ সিলেট জৈন্তাপুর সীমান্তে ভারতীয় গরু,মহিষ আটক সিলেট গোলাপগঞ্জে ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার২ সিলেটে অনলাইনে তীর-শিলং জুয়া খেলার অভিযোগে গোয়েন্দারা ধরলো ১৫ জনকে ঘরে বসে ই-পাসপোর্টের আবেদন করবেন যেভাবে

মৌলভীবাজার নাব্যতা হারাচ্ছে মনু নদী- কমছে মাছের উৎপাদন ক্ষ’তি হচ্ছে ফসলের

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৬:২৮:১০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৫ ৭ বার পড়া হয়েছে

কুলাউড়া প্রতিনিধি :

হাওর, বাওড়, খাল, বিল আর নদী সমৃদ্ধ মৌলভীবাজার জেলার জলাশয় ও নদীগুলো পলি ভরাটের কারনে নাব্যতা হারাচ্ছে। মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়াসহ তিন উপজেলা দিয়ে প্রবাহিত মনু নদী এ জেলার প্রধান নদী। উজানের ভারত থেকে বয়ে আসা মনু নদী কুলাউড়ার শরীফপুর থেকে শুরু হয়ে ৭৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে মৌলভীবাজারের মনুমুখ এলাকায় কুশিয়ারা নদীতে গিয়ে মিশেছে। ২০২২ ও ২৪ সালে দুইবারের ভয়াবহ বন্যায় ও দীর্ঘদিন থেকে নদী খনন না হওয়ায় নাব্যতা হারাচ্ছে মনু নদী।

বিগত সময়ে বন্যায় জমে থাকা পলিতে এই অঞ্চলের বসতবাড়ি, কৃষিজমি ও ফসলের ্যাপক ক্ষতি হয়। একাধিকবারের বন্যায় ভারতের উজান থেকে পানির সাথে প্রবাহমান পলিতে মনু নদী ভরাট হওয়ায় নদীর গভীরতা হ্রাস পাওয়াসহ বিভিন্ন স্থানে জেগেছে চর। নদীর নাব্যতায় বর্ষা মৌসুমে অতিরিক্ত পানি প্রবাহের কারণে বাঁধে ভাঙনসহ বন্যার সৃষ্টি হয়। এছাড়া দীর্ঘদিন থেকে নদী খনন না করায় দেশীয় মাছের যেমন উৎপাদন কমেছে, তেমনি কৃষকসহ আশপাশের এলাকার মানুষ নানা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। তাই নদী খননের দাবি জানিয়েছেন দক্ষিণাঞ্চলের কয়েকটি ইউনিয়নের মানুষ।

সরেজমিনে নদী এলাকা ঘুরে দেখা যায়, মনু নদীর পৃথিমপাশা, হাজীপুর ও শরীফপুর ইউনিয়নের ধলিয়া, সুখনাভী, রাজাপুর, কটারকোনা, ইসমাইলপুর, রনচাপ ও নিশ্চিন্তপুরসহ বিভিন্ন স্থানে জেগেছে বিশাল বিশাল চর। এসব চরের কারণে গত বর্ষায় বাঁধের শিকরিয়া এলাকায় প্রায় ৩শ ফুট ভাঙন দেখা দেয়। এছাড়া ২০২২ ও ২০২৪ সালের বন্যায় মিয়ারপাড়া, সন্দ্রাবাজ ও শালন এলাকায় নদীভাঙনে কুলাউড়া উপজেলায় ব্যাপক ক্ষতি হয়।

বর্তমানে জমে থাকা পলির কারণে তলদেশ ভরাট হয়ে মনু নদী নাব্যতা হারাচ্ছে। পলি ভরাটের ফলে নদীর নাব্যতা কমায় মাছের উৎপাদন হ্রাসসহ আশপাশের লোকালয়ের ফসলি জমির ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। নদী তীরবর্তী এলাকার কৃষক তানভীর আহমদ, তাজু মিয়া, মোবারক আলী, ইসমাইল আলী, আব্বাস আলী ও ফরিদ আহমদ বলেন, পলির কারণে মনু নদী ভরাট হয়ে গেছে।

দীর্ঘদিন থেকে খনন না করায় বর্ষায় নদীর পানি বৃদ্ধি পেলে আমরা বন্যার কবলে পড়ি। এজন্য আমাদের কৃষিজমি ও ফসলের ক্ষতি হয়। এছাড়াও এই নদীতে এক সময় ব্যাপক হারে দেশীয় মাছ পাওয়া যেত। কিন্তু বর্তমানে পলির কারণে নদীর ঢহর (গভীরতম স্থান) ভরাট হয়ে মাছের উৎপাদন কমেছে। নদীর ঢহরে পানি না থাকায় আগের মতো মাছ পাওয়া যায় না জাল ও বড়শিতে। নদী খননে কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি। মনু নদীর রাজাপুর খেয়াঘাটের মাঝি রুবেল আলী ও ধলিয়া ঘাটের মাঝি হারুন মিয়া বলেন, নদীতে এখন আর আগের মতো গভীরতা নেই। পলি জমে নদীর গভীরতা কমায় নৌকা চালানো যায় না। শুকনো মৌসুমে বাঁশের সাঁকো দিয়ে ও পায়ে হেঁটে এলাকার লোকজন নদী পারাপার হন। বর্ষায় নদীর পানি বৃদ্ধি পেলে বাঁধের উপর দিয়ে পানি উথলে যায়।

এ বিষয়ে কুলাউড়া উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা আবু মাসুদ বলেন, পলি মাটির কারণে প্রতি বছর মনু নদী, ফানাই নদী ও হাকালুকি হাওরের বিভিন্ন বিল ভরাট হওয়ায় পানি ধরে রাখার ক্ষমতা কমছে। এজন্য দেশীয় মাছের উৎপাদনও কমেছে। মনু নদীর ভারতীয় সীমান্তের উপরিভাগ থেকে কটারকোনা সেতু, ফানাই নদী ও হাকালুকি হাওয়রের কুলাউড়া অংশের কাংলী বিল খননের প্রস্তাব মৎস্য অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে।

মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খালেদ বিন ওয়ালিদ বলেন, মনু নদীর কয়েকটি স্থানে বিগত সময় জমে থাকা পলি চর অপসারন করা হয়েছে। বিগত দুইবারের বন্যার পর নতুন করে জাগা চরগুলো অপসারণ ও নদী খননের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি প্রস্তাব আকারে পাঠানো হবে।

কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন বলেন, জমে থাকা পলি অপসারণ, বাঁধ মেরামত ও নদী খননের জন্য স্থানীয়রা একটি আবেদন দিয়েছেন। নদীর নাব্যতা ফেরাতে ড্রেজিং ও খননের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করবো।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

মৌলভীবাজার নাব্যতা হারাচ্ছে মনু নদী- কমছে মাছের উৎপাদন ক্ষ’তি হচ্ছে ফসলের

আপডেট সময় : ০৬:২৮:১০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৫

কুলাউড়া প্রতিনিধি :

হাওর, বাওড়, খাল, বিল আর নদী সমৃদ্ধ মৌলভীবাজার জেলার জলাশয় ও নদীগুলো পলি ভরাটের কারনে নাব্যতা হারাচ্ছে। মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়াসহ তিন উপজেলা দিয়ে প্রবাহিত মনু নদী এ জেলার প্রধান নদী। উজানের ভারত থেকে বয়ে আসা মনু নদী কুলাউড়ার শরীফপুর থেকে শুরু হয়ে ৭৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে মৌলভীবাজারের মনুমুখ এলাকায় কুশিয়ারা নদীতে গিয়ে মিশেছে। ২০২২ ও ২৪ সালে দুইবারের ভয়াবহ বন্যায় ও দীর্ঘদিন থেকে নদী খনন না হওয়ায় নাব্যতা হারাচ্ছে মনু নদী।

বিগত সময়ে বন্যায় জমে থাকা পলিতে এই অঞ্চলের বসতবাড়ি, কৃষিজমি ও ফসলের ্যাপক ক্ষতি হয়। একাধিকবারের বন্যায় ভারতের উজান থেকে পানির সাথে প্রবাহমান পলিতে মনু নদী ভরাট হওয়ায় নদীর গভীরতা হ্রাস পাওয়াসহ বিভিন্ন স্থানে জেগেছে চর। নদীর নাব্যতায় বর্ষা মৌসুমে অতিরিক্ত পানি প্রবাহের কারণে বাঁধে ভাঙনসহ বন্যার সৃষ্টি হয়। এছাড়া দীর্ঘদিন থেকে নদী খনন না করায় দেশীয় মাছের যেমন উৎপাদন কমেছে, তেমনি কৃষকসহ আশপাশের এলাকার মানুষ নানা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। তাই নদী খননের দাবি জানিয়েছেন দক্ষিণাঞ্চলের কয়েকটি ইউনিয়নের মানুষ।

সরেজমিনে নদী এলাকা ঘুরে দেখা যায়, মনু নদীর পৃথিমপাশা, হাজীপুর ও শরীফপুর ইউনিয়নের ধলিয়া, সুখনাভী, রাজাপুর, কটারকোনা, ইসমাইলপুর, রনচাপ ও নিশ্চিন্তপুরসহ বিভিন্ন স্থানে জেগেছে বিশাল বিশাল চর। এসব চরের কারণে গত বর্ষায় বাঁধের শিকরিয়া এলাকায় প্রায় ৩শ ফুট ভাঙন দেখা দেয়। এছাড়া ২০২২ ও ২০২৪ সালের বন্যায় মিয়ারপাড়া, সন্দ্রাবাজ ও শালন এলাকায় নদীভাঙনে কুলাউড়া উপজেলায় ব্যাপক ক্ষতি হয়।

বর্তমানে জমে থাকা পলির কারণে তলদেশ ভরাট হয়ে মনু নদী নাব্যতা হারাচ্ছে। পলি ভরাটের ফলে নদীর নাব্যতা কমায় মাছের উৎপাদন হ্রাসসহ আশপাশের লোকালয়ের ফসলি জমির ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। নদী তীরবর্তী এলাকার কৃষক তানভীর আহমদ, তাজু মিয়া, মোবারক আলী, ইসমাইল আলী, আব্বাস আলী ও ফরিদ আহমদ বলেন, পলির কারণে মনু নদী ভরাট হয়ে গেছে।

দীর্ঘদিন থেকে খনন না করায় বর্ষায় নদীর পানি বৃদ্ধি পেলে আমরা বন্যার কবলে পড়ি। এজন্য আমাদের কৃষিজমি ও ফসলের ক্ষতি হয়। এছাড়াও এই নদীতে এক সময় ব্যাপক হারে দেশীয় মাছ পাওয়া যেত। কিন্তু বর্তমানে পলির কারণে নদীর ঢহর (গভীরতম স্থান) ভরাট হয়ে মাছের উৎপাদন কমেছে। নদীর ঢহরে পানি না থাকায় আগের মতো মাছ পাওয়া যায় না জাল ও বড়শিতে। নদী খননে কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি। মনু নদীর রাজাপুর খেয়াঘাটের মাঝি রুবেল আলী ও ধলিয়া ঘাটের মাঝি হারুন মিয়া বলেন, নদীতে এখন আর আগের মতো গভীরতা নেই। পলি জমে নদীর গভীরতা কমায় নৌকা চালানো যায় না। শুকনো মৌসুমে বাঁশের সাঁকো দিয়ে ও পায়ে হেঁটে এলাকার লোকজন নদী পারাপার হন। বর্ষায় নদীর পানি বৃদ্ধি পেলে বাঁধের উপর দিয়ে পানি উথলে যায়।

এ বিষয়ে কুলাউড়া উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা আবু মাসুদ বলেন, পলি মাটির কারণে প্রতি বছর মনু নদী, ফানাই নদী ও হাকালুকি হাওরের বিভিন্ন বিল ভরাট হওয়ায় পানি ধরে রাখার ক্ষমতা কমছে। এজন্য দেশীয় মাছের উৎপাদনও কমেছে। মনু নদীর ভারতীয় সীমান্তের উপরিভাগ থেকে কটারকোনা সেতু, ফানাই নদী ও হাকালুকি হাওয়রের কুলাউড়া অংশের কাংলী বিল খননের প্রস্তাব মৎস্য অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে।

মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খালেদ বিন ওয়ালিদ বলেন, মনু নদীর কয়েকটি স্থানে বিগত সময় জমে থাকা পলি চর অপসারন করা হয়েছে। বিগত দুইবারের বন্যার পর নতুন করে জাগা চরগুলো অপসারণ ও নদী খননের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি প্রস্তাব আকারে পাঠানো হবে।

কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন বলেন, জমে থাকা পলি অপসারণ, বাঁধ মেরামত ও নদী খননের জন্য স্থানীয়রা একটি আবেদন দিয়েছেন। নদীর নাব্যতা ফেরাতে ড্রেজিং ও খননের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করবো।