সিলেটে পর্যটকের ঢল : টানা ছুটিতে পর্যটকের উৎসবমুখর সবগুলো স্পট
- আপডেট সময় : ১২:৩৯:০১ অপরাহ্ন, শনিবার, ৪ অক্টোবর ২০২৫ ২০ বার পড়া হয়েছে
স্টাফ রিপোর্টার :
সিলেট প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যে ঘেরা ভ্রমণপিপাসুদের কাছে অন্যতম আকর্ষণীয় গন্তব্য। শারদীয় দুর্গোৎসব ও সাপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে টানা চার দিনের অবকাশে সেই পর্যটনপ্রবাহ এবার যেন বহুগুণে বেড়ে যায়। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত হাজারো ভ্রমণার্থী ছুটে আসেন সিলেটের জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র জাফলং, বিছনাকান্দি, রাতারগুল, লালাখাল ও সাদা পাথরে।

গত বুধবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত গোয়াইনঘাট ও আশপাশের এলাকায় পর্যটকের ঢল নামে। পাহাড়, নদী, ঝরনা আর পাথরের টানে দলবেঁধে মানুষ ভিড় জমায় প্রকৃতির কোলে। মেঘলা আকাশ ও মাঝেমধ্যে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি ভ্রমণপিয়াসীদের উৎসাহ আরও বাড়িয়ে দেয়। সবচেয়ে বেশি ভিড় দেখা যায় প্রকৃতির কন্যা জাফলংয়ে। পরিবার-পরিজন ও বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে আসা ভ্রমণার্থীরা নৌকায় চড়ে খাসিয়াপল্লি, চা-বাগান ও ঝুলন্ত ব্রিজ ঘুরে দেখেন। কেউ ছবি তোলেন, কেউবা নদীর ধারে সময় কাটান।
হোটেল-মোটেলের অধিকাংশ কক্ষ আগে থেকেই বুক থাকায় অনেক পর্যটককে বিকল্প থাকার ব্যবস্থা নিতে হয়। রেস্টুরেন্ট, ফটোগ্রাফার ও দোকানিদের ব্যস্ততাও বেড়ে যায় কয়েকগুণ। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, কয়েক দিনের মধ্যেই বিক্রি বেড়েছে আগের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি।
পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ট্যুরিস্ট পুলিশও ছিল সক্রিয়। জাফলং ট্যুরিস্ট পুলিশের ইনচার্জ তপন তালুকদার জানান, “সব পয়েন্টে ট্যুরিস্ট পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। পর্যটকেরা যাতে নিশ্চিন্তে ভ্রমণ উপভোগ করতে পারেন, সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি।

জেলার ছয়টি জনপ্রিয় পর্যটন স্পট—বিছনাকান্দি, সাদা পাথর, জাফলং, উৎমাছড়া, লালাখাল ও রাতারগুলকে ঘিরে একটি সমন্বিত ‘পর্যটন মাস্টারপ্ল্যান’ হাতে নেওয়া হয়েছে। এই পরিকল্পনার লক্ষ্য হলো প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা, স্থানীয়দের কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও টেকসই, পরিবেশবান্ধব পর্যটন নিশ্চিত করা।
সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলম বলেন, “এই মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়িত হলে সিলেটের পর্যটন খাত নতুনভাবে বিকশিত হবে।
সরকারের এ উদ্যোগে আশাবাদী স্থানীয় ব্যবসায়ীরাও। সিলেট হোটেল অ্যান্ড গেস্ট হাউস ওনার্স গ্রুপের সাবেক সভাপতি সুমাত নূরী চৌধুরী জুয়েল বলেন, “পরিকল্পনাটি দ্রুত বাস্তবায়ন হলে সিলেটে পর্যটনের সম্ভাবনা বহুগুণে বাড়বে।
ইতিমধ্যে মাস্টারপ্ল্যানের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে সাদা পাথর এলাকা পরিদর্শন করেছে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা ও পরিবেশ-স্থাপত্য বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত ১৩ সদস্যের কমিটি। তারা ধাপে ধাপে অন্য স্পটগুলোও ঘুরে দেখবেন।
স্থপতি ইনস্টিটিউটের সভাপতি অধ্যাপক ড. আবু সাঈদ এম আহমেদ জানান, “আমরা পর্যটনকে আধুনিক ও পরিবেশবান্ধব করার নানা পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি।” একইসঙ্গে সবুজ সচেতন স্থাপত্যের প্রবক্তা অধ্যাপক মো. রফিক আজম বলেন, “পর্যটন অবকাঠামো উন্নয়নে প্রাকৃতিক পরিবেশ অক্ষুণ্ন রাখাই মূল লক্ষ্য।
মাস্টারপ্ল্যান সমন্বয় কমিটির সভাপতি ড. বজলুর রশিদ জানিয়েছেন, পরিবেশকে অগ্রাধিকার দিয়েই পর্যটন খাতের উন্নয়ন করা হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নে নেদারল্যান্ডস সরকারের সম্ভাব্য অর্থায়নের কথাও উল্লেখ করেছেন তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়িত হলে বদলে যাবে সিলেটের সামগ্রিক অর্থনীতি ও পর্যটনের চিত্র। সৃষ্টি হবে নতুন কর্মসংস্থান, আর ভ্রমণপিপাসুদের কাছে সিলেট হয়ে উঠবে আরও আকর্ষণীয় ও পরিবেশবান্ধব পর্যটন নগরী।
























