গৃহবধূ থেকে যেভাবে রাজনীতিতে খালেদা জিয়া

- আপডেট সময় : ০৯:৫৪:৩৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ মে ২০২৫ ৮ বার পড়া হয়েছে
ভিউ নিউজ ৭১ ডেস্ক :
গৃহবধূ থেকে রাজনীতিতে যে উত্থান ঘটেছে খালেদা জিয়ার, রাজনীতির ইতিহাসে সেটাকে বিরল ঘটনাই বলা যায়। তিনি বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী এবং মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় নারী সরকারপ্রধান। এ ছাড়া দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির চেয়ারপারসন।
খালেদা জিয়া ১৯৪৫ সালে ভারতের জলপাইগুড়িতে জন্ম নেন। তবে তার বাবার আদি নিবাস ফেনী জেলার ফুলগাজীতে। বাবা ব্যবসায়ী ইস্কান্দার মজুমদার ও মা তৈয়বা মজুমদার। খালেদা জিয়ার শৈশব ও কৈশোর কেটেছে দিনাজপুরের মুদিপাড়া গ্রামে।
১৯৬০ সালে দিনাজপুর সরকারি স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশনে উত্তীর্ণ হন খালেদা জিয়া। পরে তিনি দিনাজপুর সুরেন্দ্রনাথ কলেজে লেখাপড়া করেন। কলেজে পড়ার সময় তৎকালীন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন জিয়াউর রহমানের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। এরপর পড়াশোনা আর এগিয়ে নিতে পারেননি। রাষ্ট্রীয় নথিপত্রে খালেদা জিয়ার শিক্ষাগত যোগ্যতার জায়গায় ‘স্বশিক্ষিত’ শব্দটি লেখা হয়।
মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে খালেদা জিয়া কিছুদিন আত্মগোপনে ছিলেন। পরে ১৬ মে নৌপথে ঢাকায় আসেন। বড় বোন খুরশিদ জাহানের বাসায় ছিলেন ১৭ জুন পর্যন্ত। ২ জুলাই সিদ্ধেশ্বরীতে এস আবদুল্লাহর বাসা থেকে পাকিস্তানি সেনারা তাকে ও তার দুই ছেলেকে বন্দি করে। ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনি ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে বন্দি ছিলেন।
স্বামী জিয়াউর রহমান দেশের রাষ্ট্রপতি হলেও রাজনীতিতে খালেদা জিয়ার উপস্থিতি ছিল না। রাজনৈতিক পরিক্রমায় জিয়াউর রহমান হত্যার শিকার হওয়ার পর দলের নেতাকর্মীর আহ্বানে বিএনপির হাল ধরেন তিনি। নীতি ও আদর্শে অটুট থাকায় তিনি আপসহীন নেত্রী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।
খালেদা জিয়া তিনবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। ১৯৯১ সালে প্রথমবারের মতো দেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয়বার এবং ২০০১ সালে জোটগতভাবে নির্বাচন করে তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন তিনি।
বিএনপির চেয়ারপারসন হিসেবে টানা ৪৩ বছর দায়িত্ব পালন করছেন খালেদা জিয়া। ১৯৮২ সালের ২ জানুয়ারি তিনি বিএনপির প্রাথমিক সদস্য হিসেবে যোগ দেন। পরের বছর মার্চে দলটির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে পদোন্নতি পান। বিচারপতি আবদুস সাত্তার অসুস্থ হলে ১৯৮৪ সালের ১২ জানুয়ারি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন এবং একই বছরের ১০ মে চেয়ারপারসন পদে নির্বাচিত হন।
বিএনপির দায়িত্ব নেওয়ার পরই নানা প্রতিকূলতার মুখে পড়েন খালেদা জিয়া। দল ঐক্যবদ্ধ রেখে এরশাদের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলেন। ১৯৮৭ সাল থেকে ‘এরশাদ হটাও’ আন্দোলন শুরু করেন। একটানা নিরলস ও আপসহীন সংগ্রামের পর ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় বিএনপি।
নির্বাচনের ইতিহাসে খালেদা জিয়ার একটি অনন্য রেকর্ড হচ্ছে, পাঁচটি সংসদ নির্বাচনে ২৩ বার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সবকটিতেই তিনি জয়ী হয়েছেন।
সেনাসমর্থিত ওয়ান-ইলেভেনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে খালেদা জিয়াকে ২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার করা হয়। দীর্ঘদিন কারাবাসের পর তিনি আইনি লড়াই করে সবকটি মামলায় জামিন নিয়ে মুক্তি পান। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে ২০১০ সালের ১৩ নভেম্বর তিনি ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ হন।