সিলেটে বিভাগে ভালো ফলন, লক্ষ্যমাত্রা ছাড়াবে আশাবাদী কৃষি বিভাগ

- আপডেট সময় : ১০:১০:৪৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫ ১৯ বার পড়া হয়েছে
স্টাফ রিপোর্টার :
সিলেট বিভাগে এ বছর বোরো ধানের ফলন বেশ ভালো হয়েছে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ লাখ ২৬ হাজার ৮১৩ মেট্রিক টন। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪৭৩ হেক্টর বেশি জমিতে এ জাতের ধান আবাদ করা হয়েছে। ভালো ফলন হওয়ায় খুশি কৃষকরা। কৃষি বিভাগ বলছে, এ বছর ৪ লাখ ৯৬ হাজার ৭৪৬ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। বিপরীতে আবাদ করা হয়েছে ৪ লাখ ৯৭ হাজার ২১৯ হেক্টর জমিতে। তবে ভালো ফলন হওয়ায় এবার লক্ষ্যমাত্রা ছাড়াবে বলে আশাবাদী কৃষি বিভাগ।
কৃষি বিভাগের তথ্য বলছে, বোরো ধানের ভান্ডার হিসেবে খ্যাত সুনামগঞ্জ জেলায় এবার ফলন বেশ ভালো হয়েছে। এ জেলার ১২ উপজেলার ১৩৭টি হাওরে পহেলা বৈশাখের আগে থেকে ধান কাটা শুরু করেন কৃষকরা। তবে হঠাৎ আবহাওয়া অফিসের জারি করা পূর্বাভাসের কারণে কৃষকদের মাঝে এক ধরনের উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। যদিও আবহাওয়া অফিসের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী আগামী ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ভারী বৃষ্টিপাতের তেমন আশঙ্কা নেই।
এদিকে, গত সপ্তাহে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস পাওয়ার পর, ফসলহানির ঝুঁকি এড়াতে হাওরের পাকা ধান দ্রুত কাটার পরামর্শ দেয় জেলা প্রশাসন। একই সঙ্গে শতভাগ ধান ঘরে না তোলা পর্যন্ত জেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও কৃষি অধিদপ্তরের সব ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার জানিয়েছেন, সুনামগঞ্জে বৃষ্টিতে ফসলহানির শঙ্কা কম, তবে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টিপাত শুরু হলে জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার পাশাপাশি ফসলের ক্ষতি হতে পারে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফসল ঘরে তুলতে এরই মধ্যে কৃষকদের কর্মব্যস্ততা কয়েগুণ বেড়েছে। সনাতনী পদ্ধতির বাইরে ধান কাটাতেও এসেছে আধুনিকতা। ধান কাটা শ্রমিকের পরিবর্তে ব্যবহার হচ্ছে আধুনিক যন্ত্র কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন। চলতি বোরো মৌসুমে ফলন ভালো হওয়াতে কৃষকের মধ্যে আনন্দ বিরাজ করছে।
সিলেট বিভাগীয় কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের দেওয়া তথ্যমতে, এ বছর সিলেট বিভাগে মোট বোরো আবাদ করা হয়েছে ৪ লাখ ৯৬ হাজার ৭৪৬ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে হাওরে বোরো আবাদের পরিমাণ ২ লাখ ৭৫ হাজার ৮১৩ হেক্টর জমি। নন হাওড়ে আবাদ করা হয়েছে ২ লাখ ২০ হাজার ৯৩৩ হেক্টর জমিতে। ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ লাখ ২৬ হাজার ৮১৩ মেট্রিক টন। তবে ভালো ফলন হওয়ায় এবার লক্ষ্যমাত্রা ছাড়াবে বলে আশাবাদী কৃষি বিভাগ।
জেলা ভিত্তিক পরিসংখ্যানে দেখো গেছে, এ বছর সিলেট জেলায় মোট বোরো আবাদ করা হয়েছে ৮৭ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে হাওরে আবাদের পরিমাণ ৩৬ হাজার ৩১৯ হেক্টর জমি। নন হাওড়ে আবাদ করা হয়েছে ৫১ হাজার ১০৯ হেক্টর জমিতে।
মৌলভীবাজারে মোট আবাদ করা হয়েছে ৬২ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে হাওরে বোরো আবাদের পরিমাণ ২৭ হাজার ৩০০ হেক্টর জমি। নন হাওড়ে আবাদ করা হয়েছে ৩৪ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে।
হবিগঞ্জে মোট আবাদ করা হয়েছে ১ লাখ ২৩ হাজার ৭৩৬ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে হাওরে বোরো আবাদের পরিমাণ ৪৬ হাজার ৯৫৪ হেক্টর জমি। নন হাওড়ে আবাদ করা হয়েছে ৭৬ হাজার ৭৮২ হেক্টর জমিতে।
সুনামগঞ্জে মোট আবাদ করা হয়েছে ২ লাখ ২৩ হাজার ৪১০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে হাওরে বোরো আবাদের পরিমাণ ১ লাখ ৬৫ হাজার ১৬৮ হেক্টর জমি। নন হাওড়ে আবাদ করা হয়েছে ৫৮ হাজার ২৪২ হেক্টর জমিতে।
কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী আপাতত বড় রকমের ঝড়-বৃষ্টির কোনো আশঙ্কা নেই। সামান্য বৃষ্টিপাত হতে পারে। এতে ধান ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই। আপাতত বন্যা পরিস্থিতির কোনো লক্ষণ নেই। ফলে অনায়াসে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ধান ঘরে তুলতে পারবেন। আবহাওয়া অনুক‚লে থাকলে আর মাত্র ১০ দিনে হাওরের সব ধান কাটা সম্ভব।
সুনামগঞ্জের দেখার হাওরে পুরোদমে শুরু হয়েছে ধান কাটা। এ এলাকার কৃষক স্বপন মিয়া বলেন, এ বছরের ফসলের উৎপাদন বেশি মনে হচ্ছে। এখন দাম পেলেই হয়। তাছাড়া ধানে রোগ বালাই তেমন নাই।
আরেক কৃষক হালিম মিয়া বলেন, এই বছর ধান ভালো হয়েছে। আশা করি কাটাপ্রতি ৭/৮ মন ধান পাব। যদি ধান ঘরে তুলতে পারি তবে লাভবান হতে পারব। আর ১০ দিন সময় পেলে ধান সম্পূর্ণ ঘরে তোলা সম্ভব। তবে এখন বৃষ্টি বাদল না হলেই হয়।
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী প্রকৌশলী (পুর) রনি দাস বলেন, ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত আবহাওয়ার অবস্থা ভালো থাকবে বলে আশা করছি। আগাম বন্যার আশঙ্কা না থাকলেও আমরা পূর্ব প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। আশা করি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যই কৃষক ফসল ঘরে তুলবে।
সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মো. আব্দুল মুঈদ বলেন, আগামী ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত আবহাওয়া ভালো দেখাচ্ছে। ভারী বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা দেখছি না। তবে মাঝেমধ্যে দমকা হাওয়াসহ বজ্রবৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে।
সিলেট বিভাগীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ বিমল চন্দ্র সোম বলেন, সোমবার পর্যন্ত হাওরের ১ লাখ ২৭ হাজার ৩২০ হেক্টও জমির বোরো ধানা কাটা হয়েছে। আর ১০ দিনের মধ্যে পুরো ধান কাটা সম্পন্ন হয়ে যাবে। এরমধ্যে হাওরের নিচু এলাকার ধান অনেকাংশই কাটা হয়ে গেছে। এ বছর মোট ৪ লাখ ৯৬ হাজার ৭৪৬ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। আবাদ করা হয়েছে ৪ লাখ ৯৭ হাজার ২১৯ হেক্টর জমিতে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ লাখ ২৬ হাজার ৮১৩ মেট্রিক টন। তবে ভালো ফলন হওয়ায় এবার লক্ষ্যমাত্রা ছাড়াবে।
তিনি আরও বলেন, আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী এরমধ্যে বড় ধরনের বৃষ্টিপাত বা বন্যার কোনো আশঙ্কা নেই। আগাম ও উন্নত জাতের ধান চাষ করায় এবার ফলন ভালো হয়েছে। ধান কেটে স্বাচ্ছন্দ্যে ঘরে তুলতে পারছেন কৃষকরা। এবার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়াবে