হল নির্মাণে ছাত্রলীগের চাঁদাবাজি

- আপডেট সময় : ০৬:৫৩:৩১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২ অক্টোবর ২০২৩ ৬৬ বার পড়া হয়েছে
ভিউ নিউজ ৭১: অনলাইন সংস্করণ
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে ছাত্রীহল এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠপুত্র শেখ রাসেলের নামে ছাত্রহল নির্মাণে ঠিকাদারের কাছ থেকে ছাত্রলীগ মোটা অঙ্কের চাঁদা নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ক্যাম্পাসজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে।সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, হল দুটি নির্মাণের কার্যাদেশ পেয়ে কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স আমির ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন। শুরুতে দ্রুতগতিতে কাজ চললেও ছাত্রলীগের চাঁদাবাজি এবং নানা সময়ে বাধা সৃষ্টির কারণে হল দুটির নির্মাণ কাজ এখন বন্ধ হওয়ার পথে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দেওয়া তথ্যানুযায়ী মাত্র ১০ মাসে ৩০ লাখ ৫৭ হাজার টাকা চাঁদা নিয়েছে ক্ষমতাসীন দলের এই ছাত্র সংগঠনটি।
এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, চাঁদার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রজেক্ট ম্যানেজার এনামুলকে গালিগালাজ করছেন পবিপ্রবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আরাফাত ইসলাম খান সাগর। তাকে বলতে শোনা যায়, কত টাকা দিয়েছে? জবাবে ঠিকাদারের প্রতিনিধি বলেন, ৩ লাখ ৬২ হাজার দিয়েছেন। এ সময় প্রত্যাশা অনুযায়ী টাকা না পাওয়ায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক ও কর্মচারীদের প্রচার অযোগ্য অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করেন ছাত্রলীগ সভাপতি সাগর। অপরদিকে মঙ্গলবার নির্মাণাধীন শেখ রাসেল হলের সামনে থেকে ছাত্রলীগ সভাপতির অনুসারী গোলাম রাব্বানী সুহৃদ ও ইমরান হোসেনসহ ৬/৭ জন ছাত্রলীগ নেতা একটি ভ্যানে করে জোরপূর্বক নির্মাণ কাজের রড সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন।
নির্মাণ কাজের সুপারভাইজার সালাউদ্দিন সিকদার কথা বলতে গেলে তারা বলেন, ছাত্রলীগ সভাপতি সাগর তাদের রড নিয়ে যেতে বলছে। খবর পেয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার এনামুল ঘটনাস্থলে গিয়ে ছাত্রলীগ নেতাদের রড নিতে বাধা দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ছাত্রলীগ সভাপতি সাগের অনুসারী বহিরাগত গোলাম রাব্বানী সুহৃদ নির্মাণ শ্রমিকদের বেধড়ক মারধর করেন। একপর্যায়ে তারা মোবাইল ফোনও ছিনিয়ে নিয়ে যায়। মারধরে আহত একজনকে দুমকি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। এ ঘটনায় দুমকি থানা এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি।হল দুটি নির্মাণের দায়িত্বে থাকা মেসার্স আমির ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশনের স্বত্বাধিকারী মো. আমির হোসেন যুগান্তরকে চাঁদাবাজির বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আরাফাত ইসলাম খান সাগরের চাঁদাবাজি, হামলা ও হুমকির কারণে এখানে কাজ করার কোনো পরিবেশ নেই।
কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে আমাদের নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না। ইতোমধ্যে কাজ প্রায় বন্ধের পথে।এদিকে এ ঘটনায় অভিযুক্ত পবিপ্রবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আরাফাত ইসলাম খান সাগরকে তার স্বীয় পদ থেকে সাময়িক অব্যাহতি দিয়েছে ছাত্রলীগ। একই সঙ্গে তার বিরুদ্ধে কেন স্থায়ী সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না তার উপযুক্ত কারণসহ লিখিত জবাব ১৫ দিনের মধ্যে কেন্দ্রীয় দপ্তর সেলে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম পান্থ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।এ বিষয়ে জানতে চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত পবিপ্রবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আরাফাত ইসলাম খান সাগরকে মুঠোফোনে কল দেওয়া হলে নেটওয়ার্কে সমস্যার কথা বলে তিনি ফোন কেটে দেন।
জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান বলেন,চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে ছাত্রলীগের অবস্থান আগেও ছিল, এখনো আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে।তিনি আরও বলেন, এ ঘটনায় জড়িত পবিপ্রবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতিকে ছাড় না দিয়ে দায়িত্ব থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। ছাত্রলীগের সাংগঠনিক নেত্রী আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা ও বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ ছেলে শেখ রাসেলের নামে হল নির্মাণের কাজ থেকে চাঁদা আদায়কে কিভাবে দেখছেন এমন প্রশ্নের জবাবে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের এ শীর্ষ নেতা বলেন, এটি বড় অপরাধ। দুমকি থানার ওসি তারেক মোহাম্মদ আব্দুল হান্নান বলেন, এ বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. স্বদেশ চন্দ্র সামন্ত জানান, এ ব্যাপারে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে এবং দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।